ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

কুল চাষে স্বাবলম্বী রাজবাড়ীর আজিজুল

কাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডিষ্ট্রিক্টকরেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩
কুল চাষে স্বাবলম্বী রাজবাড়ীর আজিজুল

রাজবাড়ী: ২০১৯ সালে অর্থনীতি বিভাগে অনার্স সম্পন্ন করে চাকরির পিছনে না ছুটে উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল কুল বরই চাষ করে নিজেই নিজের আত্মকর্মসংস্থান করেছেন রাজবাড়ী জেলার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আজজুল হাকিম (২৬)। নিজের ভাগ্যের চাকা ঘুড়িয়ে আজ তিনি অন্যান্য তরুণের কাছে উদাহরণ।

 

তরুণ এই উদ্যোক্তা মো. আজিজুল হাকিম রাজবাড়ী পৌর শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন বাজার বিসিক এলাকার মো. জামাল উদ্দিন মিয়ার ছেলে। তাকে ও তার বাগানের বাম্পার ফলন দেখে কুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন স্থানীয় অনেকে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপদেশে ২০২২ সালের মার্চে মাসে নিজের এক একর জমিতে শুরু করেন বিদেশি জাতের কাশ্মিরি আপেল কুল, বল সুন্দরী কুল ও থাই আপেল কুলের মিশ্র ফলের বাগান। পড়ালেখা শেষ করে চাকরির আশায় ঘরে বসে না থেকে শুরু করেন কৃষি কাজ।

সরেজমিনে কুল বরই বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ী জেলার মাটি ও আবহাওয়া বিদেশি জাতের এ কুল চাষের উপযোগী হওয়ায় সাফল্য পেয়েছেন আজিজুল। তার মতো উপজেলার অনেক চাষিই কুল চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদলেছে। আগামীতে এই অঞ্চলে কুল চাষের পরিধি আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে রাজবাড়ীর বিভিন্ন এলাকায় উচ্চফলনশীল বিদেশি জাতের কুল চাষ হচ্ছে।  

বাজারে বল সুন্দরী, আপেলকুল, কাশ্মীরি, ভারত সুন্দরী ও টক মিষ্টি কুলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ছোট বড় অনেক বাগান হয়েছে। চলতি বছরে রাজবাড়ী জেলায় ৫৫ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৫ হেক্টর, গোয়ালন্দে ৪ হেক্টর, বালিয়াকান্দিতে ৫ হেক্টর, কালুখালিতে ১৫ হেক্টর ও পাংশায় ৬ হেক্টর জমিতে কুলের আবাদ হয়েছে।

 সরেজমিনে আজিজুলের কুল বরই বাগানে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় এক একর জমিতে কুল বাগান করেছেন তিনি। প্রতিটি কুল গাছ প্রায় ৩ থেকে ৪ ফুট লম্বা। প্রতিটি কুল গাছের থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল সবুজ রঙের কুল বরই। ফলের ভারে মাটিতে নুয়ে পড়েছে প্রতিটি গাছের ডাল। সেই সব ডাল গুলো আবার বাঁশ দিয়ে ঠেকনা দেওয়া হয়েছে। পোকা ও পাখির আক্রমণ থেকে রক্ষায় বাগানের চারপাশে মশারি জালের বেড়া দেওয়া হয়েছে। বাগানের বল সুন্দরী ও আপেল কুলের উপরের অংশে হালকা সিঁদুর রং রয়েছে। ফলটি আকারে বড় হওয়ায় ঠিক আপেলের মতোই। খেতেও খুব সুস্বাদু। ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় আজিজুলের মুখে হাসির ঝিলিক।

তরুণ উদ্যোক্তা আজিজুল বাংলানিউজকে জানান, ছোট বেলা থেকেই কৃষির প্রতি আলাদা ভালো লাগা ছিল। তাই লেখাপড়া শেষ করে চাকরি নামক সোনার হরিণের পেছনে না ছুটে কৃষি নিয়ে কিছু করার চিন্তাভাবনা করি। তাই এলাকার এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ও পরামর্শ নিয়ে বিদেশি জাতের কুল বাগান করার সিদ্ধান্ত নেই। পরে রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতাধীন রাজবাড়ী হর্টিকালচার সেন্টার থেকে কুল চাষের জন্য এক দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহন করি। প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের এক একর জমি কুল চাষের জন্য প্রস্তুত করি। পরবর্তীতে রাজবাড়ী হর্টিকালচার সেন্টার থেকে প্রায় ২০০টি আপেল কুল, কাস্মীরী কুল ও বল সুন্দরী কুলের চারা এনে রোপণ করি। চারা রোপণ করার পর আমি নিজেই বাগানের পরিচর্যা করতাম। রোপনের ৯ মাসের মাথায় সব গাছে ভালো ফলন এসেছে। ডিসেম্বরের শেষের দিক থেকে বিক্রি শুরু করি। খুব অল্প সময়ে ভালো লাভজনক ফসল কুল। প্রতিটি গাছে গড়ে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ থেকে কেজি ফল পাব। প্রতি কেজি আপেল কুল ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি ও বল সুন্দরী কুল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।

আজিজুল হাকিম আরও বলেন, আশাকরি এ বছর ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার কুল বিক্রি হবে। প্রথমবার পরীক্ষামূলকভাবে ১ একর জমির ওপর বাগান করি। আগামীতে আরও বড় পরিসরে বাগান করার পরিকল্পনা রয়েছে আমার।

স্থানীয় আজিবর, শাহিন, সবুজ, রাজিবসহ একাধিক যুবকরা বলেন, আজিজুল শিক্ষিত ছেলে। সে চাকরির আশায় বসে না থেকে উদ্যোক্তা হয়েছে। কুল চাষ করে নিজে স্বাবলম্বী হয়েছে। তার সফলতা দেখে আমরাও কুল চাষে উৎসাহিত হয়েছি। তার থেকে পরামর্শ নিয়ে আমরাও এখন উদ্যোক্তা হবার চেষ্টা করবো।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম রসূল বাংলানিউজকে জানান, রাজবাড়ীর চাষিরা এখন কুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন এবং বেশ লাভবান হচ্ছেন। এ বছর বিভিন্ন জাতের প্রায় ৫৫ হেক্টর জমিতে কুলের চাষ হয়েছে। শুধু সদর উপজেলাতেই ২৫ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ায় কুল চাষ দিন দিন বাড়ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।