ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ফরিদপুরে শিলাবৃষ্টিতে পেঁয়াজের ব্যাপক ক্ষতি, কৃষকের মাথায় হাত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট     | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫১ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২৩
ফরিদপুরে শিলাবৃষ্টিতে পেঁয়াজের ব্যাপক ক্ষতি, কৃষকের মাথায় হাত

ফরিদপুর: হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে ফরিদপুরের সালথা-নগরকান্দায় উত্তোলনের অপেক্ষায় থাকা হালি পেঁয়াজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।  

বুধবার (২৯ মার্চ) সন্ধ্যার দিকে ঘণ্টাব্যাপী বৃষ্টিতে এ ক্ষতি হয়।

দাম না পেয়ে গত বছর পেঁয়াজ চাষ করে লোকসান গুনতে হয়েছে এখানকার হাজারো কৃষকের। তারপরও জীবিকার তাগিদে এবার বিপুল পরিমাণে হালি পেঁয়াজ চাষ করেন তারা। ইতোমধ্যে সেই পেঁয়াজ উত্তোলন শুরু করা হয়েছে। এরই মধ্যে শিলাবৃষ্টিতে পেঁয়াজের ব্যাপক ক্ষতি হলো। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।  

বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) সকালে সরেজমিনে সালথার বালিয়া গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের বেশিরভাগ নিচু জমির পেঁয়াজ তলিয়ে গেছে। আর উঁচু জমির পেঁয়াজ শিলার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যারা পেঁয়াজ ক্ষেতের ভেতরে আগাম পাটের বীজ বপন করেছেন, তাদের আরও বেশি ক্ষতি হয়েছে। এমন অবস্থায় কৃষকরা এক বুক হতাশা আর মাথায় দুশ্চিন্তা নিয়ে ক্ষেতের চারপাশ দিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন। কেউ কেউ শ্রমিকদের নিয়ে কাদা-পানিতে নেমে পেঁয়াজ উত্তোলন করছেন।  

জানা গেছে, পেঁয়াজ চাষ করে সারা বছরের অর্থনৈতিক চাহিদা মিটিয়ে থাকেন সালথা ও নগরকান্দার কৃষকরা। এবারও উভয় উপজেলায় প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর হালি পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে।  

কৃষকরা জানান, এমতিইে এবার পেঁয়াজের আশানুরূপ ফলন হয়নি। এর মধ্যে আবার শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে। অন্যদিকে, বাজারে পেঁয়াজের দামও তুলনামূলক কম। সব মিলিয়ে এবারও পেঁয়াজ চাষ করে কৃষকরা পথে বসে যাবে।  

ক্ষতিগ্রস্ত সালথার বালিয়া গট্টি গ্রামের কৃষক মো. সবুর খান বলেন, আমি এবার চার বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। এর মধ্যে শিলাবৃষ্টিতে তিন বিঘা জমির পেঁয়াজই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিলার আঘাত আর বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়া এসব পেঁয়াজ ঘরে মজুদ রাখাও সম্ভব না। ঘরে রাখলে সব পঁচে যাবে।  

মো. মনসুর মাতুব্বর নামে আরেক কৃষক বলেন, গত বছর পেঁয়াজ চাষ করে লোকসান হয়েছে। তারপরও এবার দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। ফলন তেমন ভালো হয়নি। দুই একদিনের মধ্যে ক্ষেতের পেঁয়াজ উত্তোলন করতে চেয়েছিলাম। তার আগেই শিলাবৃষ্টিতে পেঁয়াজের তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে।  

ইনছুর মাতুব্বর নামে অপর কৃষক বলেন, আমার চার বিঘা জমির পেঁয়াজই তলিয়ে গেছে। রোদে ক্ষেত শুকানোর পর এসব পেঁয়াজ উত্তোলন করতে গেলে ক্ষেতেই পঁচে যাবে। তাই বাধ্য হয়েই এখন পানির নিচ থেকে পেঁয়াজ তুলছি। এমনতিইে পেঁয়াজের দাম নেই, তারপর ক্ষেতের পেঁয়াজ পানিতে তলিয়ে ও শিলার আঘাতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা এবার কীভাবে বাঁচবো? যদি এবারও আমরা ন্যায্য দাম না পাই তাহলে আমাদের ঘরে বসে থাকতে হবে।  

নগরকান্দার বিনোকদিয়া এলাকার কৃষক মিলন শেখ বলেন, শিলাবৃষ্টিতে আমাদের এলাকায় পেঁয়াজের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে পেঁয়াজের বীজের (দানা)। এবার হালি পেঁয়াজ ঘরে রাখা যাবে না, আবার এসব পেঁয়াজ এখন বাজারে বিক্রি করলেও কম দামে বিক্রি করতে হবে। বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা করে। এই দামে পেঁয়াজ বিক্রি করলে এবারও পেঁয়াজ চাষ করে লোকসান হবে আমাদের।  

সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জীবাংশু দাস বলেন, শিলাবৃষ্টিতে আংশিক ক্ষতি হয়েছে পেঁয়াজের দানার। কিছু নিচু জমির পেঁয়াজ তলিয়ে গেলেও পানি দ্রুত নেমে যাচ্ছে। আবহাওয়া এমন থাকলে বা আর বৃষ্টি না হলে তলিয়ে যাওয়া পেঁয়াজের বেশি ক্ষতি হবে না। তবে এসব পেঁয়াজ বেশিদিন ঘরে রাখা যাবে না। আর শিলার আঘাতে পেঁয়াজের যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে বেশি সমস্যা হবে না।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২৩
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।