ঢাকা, রবিবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাবে পার্বত্যাঞ্চলের সূর্যমুখী 

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২৩
ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাবে পার্বত্যাঞ্চলের সূর্যমুখী 

রাঙামাটি: দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে সরকার তিন পার্বত্য জেলায় সূর্যমুখী চাষ বাড়িয়েছে। ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে উৎপাদিত সূর্যমুখী থেকে দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটানো যাবে বলে মনে করছে সরকার।

এক সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দারা জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল হলেও বর্তমান সরকার এ অঞ্চলের কৃষি উন্নয়নের বিপ্লব সৃষ্টি করছে। জুমের পরিবর্তে নানা ধরনের ফল-ফসল চাষের জন্য সরকার প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে সার, বীজ, প্রশিক্ষণ এবং ভাতা। এমনকি উৎপাদিত ফসলের বাজারজাতকরণেও সহযোগিতা করছে সরকারের কৃষি বিভাগ।

দেশে ব্যাপক হারে ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এজন্য সরকারকে প্রতি বছর ২০-২৫ হাজার কোটি টাকার ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। ভোজ্যতেল আমদানি করতে গিয়ে সরকার উন্নয়ন বাজেটের চার ভাগের এক ভাগ খরচ করে ফেলে। তাই সরকার এ অর্থ সাশ্রয় করতে উর্বর ভূমি খ্যাত পার্বত্য চট্টগ্রামে ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে সূর্যমুখী চাষকে বেছে নিয়েছে। বছরের শুরু থেকে পাহাড়ে সূর্যমূখীর চাষ বাড়ানো হচ্ছে। এজন্য কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে আর্থিক প্রণোদনা। পাশাপাশি বিনামূল্যে সার, বীজ দেওয়া হচ্ছে, সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ।

রাঙামাটি সদর উপজেলার কুতুকছড়ি ইউনিয়নের কৃষক দেব চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমার ৩৩ শতাংশ জমিতে এবার প্রথম সূর্যমুখীর চাষ করেছি। এতে সহযোগিতা করেছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা এবং স্থানীয় ব্লক সুপারভাইজার।

এ কৃষক আরও বলেন, কৃষি বিভাগ আমাকে বীজ, সার দিয়ে সহযোগিতা করছে। আশা করছি, ফলন ভালো পাব।

কুতুকছড়ি ব্লক সুপার ভাইজার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজীব চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সরকার দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে সূর্যমুখী চাষের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে সূর্যমুখী চাষ বাড়াতে সরকার যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই সরকারের এ সিদ্ধান্ত সফল করার লক্ষ্যে আমরা (কৃষি কর্মকর্তা) কাজ করে যাচ্ছি।  

এ কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, আমার ব্লকের ১০ কৃষককে জনপ্রতি এক কেজি করে বীজ, ১০ কেজি করে ইউরিয়া সার এবং ১০ কেজি করে এমওপি দেওয়া হয়েছে। সূর্যমুখী চাষের জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি জেলা কার্যালয় থেকে জানা গেছে, অতীতে পাহাড়ে বিছিন্নভাবে সূর্যমুখী চাষ করা হলেও বাণিজ্যিতভাবে কেউ সূর্যমুখীর চাষ করেনি। বর্তমানে সরকার ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে তিন পার্বত্য জেলায় চলতি বছর সূযমুখী চাষ সম্প্রসারণ করে যাচ্ছে। এ বছর শুধু রাঙামাটি সদরে তিন হেক্টর জমিতে ২০ জন কৃষকের মাধ্যমে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। এজন্য কৃষি বিভাগ কৃষকদের সার, বীজসহ নানা ধরনের প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে। এ জমিতে উৎপাদিত সূর্যমুখী থেকে পাঁচ টন ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রাঙামাটি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু মো. মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, সূর্যমুখী চাষিদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। উৎপাদিত ফসল ঢাকা-চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করার জন্য কৃষি বিভাগ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

সম্প্রতি রাঙামাটি সফরে এসে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দেশের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম উৎপাদনশীলতায় শীর্ষে থাকবে। বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের সমস্যা রয়েছে। বিদেশ থেকে আমাদের ২০-২৫ হাজার কোটি টাকার তেল  আমদানি করতে হয়। আমাদের উন্নয়ন বাজেটের চার ভাগের এক ভাগ অর্থ খরচ হয় এতে। সূর্যমুখী চাষ রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান জেলায় ছড়িয়ে দিতে পারলে বিপ্লব ঘটে যাবে। আয় বাড়বে মানুষের।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।