ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ধান কাটা-মাড়াই করে গোলায় ভরছেন কৃষক

কাওছার উল্লাহ আরিফ,ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১১ ঘণ্টা, মে ৩, ২০২৩
ধান কাটা-মাড়াই করে গোলায় ভরছেন কৃষক ধান শুকানোর কাজে ব্যস্ত কৃষাণ ও কৃষাণী। ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: বগুড়ায় ফসলের মাঠ ছেয়ে আছে সোনা রঙে। একদিকে বিস্তীর্ণ মাঠে শোভা পাচ্ছে বোরো মৌসুমের আধা পাকা ধান।

অন্যদিকে কৃষক উৎসবমুখর পরিবেশে পরিপুষ্ট ধান কাটা-মাড়াই করে গোলায় ভরছেন। উৎপাদিত ফসলের বাম্পার ফলনে বেশ খুশি কৃষক।

বুধবার (৩ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলার কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। বোরোর বাম্পার ফলনে হাসি ফুটেছে কৃসকের মুখে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ জেলার ১২টি উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ১ লাখ ৮৭ হাজার ১৯৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধান লাগানো হয়।

বগুড়ায় রকমারি ফসল ফলানোর দিকে সারা দেশে এ জেলার কৃষকদের একটা আলাদা পরিচিত আছে। এ জেলাকে উত্তরাঞ্চলের শস্যভাণ্ডার খ্যাত জেলা বলা হয়। এখানকার উৎপাদিত ফসল রাজধানীসহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এ তালিকার শীর্ষে থাকে ধান, চাল ও নানা প্রজাতির সবজি।



সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কেবলই সোনারঙা ধানের সমারোহ দৃশ্যমান। ধান গাছের ডগায় থোকায় থোকায় পুষ্ট ধান ঝুলছে। ধানের শীষে সোনারঙা ধারন করেছে। অনেক ধান পুষ্ট হলেও এখনও কাঁচা রয়েছে। অনেকে জমির ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ সম্পন্ন করেছেন। কৃষাণ ও কৃষাণীরা ধান শুকানোর কাজে সময় ব্যয় করছেন। অনেকই তাদের উৎপাদিত ফসল রোদে শুকিয়ে ঘরে ও হাটে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সবমিলিয়ে প্রখর রোদ আর বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ধান ঘরে তোলার কাজ। সবমিলিয়ে ধান নিয়ে গ্রামীণ জনপদগুলোয় কৃষকদের এক ধরনের কর্মযজ্ঞতা চলছে।

এদিকে মাঝেমধ্যেই দেখা যাচ্ছে মেঘের আনাগোনা। বিকেল থেকে মেঘের ঘনঘটা থাকলেও গেল দুইদিন বৃষ্টি হয়নি। তবে প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় কৃষকের মনে স্বস্তি নেই। কেননা বৈশাখ মাস চলছে। ঝড়-বৃষ্টি আর কালবৈশাখীর ছোবল থেকে ক্ষেতের উঠতি ফসল ঘরে তোলা নিয়ে অনেক কৃষকই শঙ্কিত।



শাজাহানপুর উপজেলার খরনা ও মাঝিরা ইউনিয়নের কৃষক কামরান হোসেন, হেলাল প্রামাণিক বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যেই বোরো মৌসুমের ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। এবার বোরো মৌসুমে তাদের উৎপাদিত ফসলের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। এখন ধানের দামটাও ভালো হওয়ায় তারা বেজায় খুশি।

তারা বলেন, হাড়ভাঙা পরিশ্রম আর পরিচর্যায় মধ্য দিয়ে ফসল ফলান এ জেলার কৃষক। তারা চোখের সামনেই তরতর করে বেড়ে উঠতে দেখেছেন জমির ধান। এখন সোনারঙা সেই ধান ঘরে তুলছেন। অনেকেই ফসল ঘরে তোলার অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন। এখন বাজারে কাঁচা ধানই প্রতি মণ ৯শ থেকে ১ হাজার ২শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ধানের এমন দাম তাদের মতো কৃষকদের ব্যাপক আশাবাদী করে তুলেছে বলে মন্তব্য করেন তারা।

কাহালু উপজেলার কৃষক মো. সাবেদ আলী বাংলানিউজকে জানান, বগুড়ার বেশ কয়েকটি (কাহালু, সদর, নন্দীগ্রাম, শেরপুর, শাজাহানপুর, আদমদীঘি, দুপচাঁচিয়া ও শিবগঞ্জ) উপজেলার কৃষকরা আগাম জাতের ধান চাষ করেন। চাষিরা চাষাবাদের সেই ধান কাটতে মাঠে রয়েছেন। এ জেলায় পুরোপুরি ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হতে আরও দুই সপ্তাহের বেশি লাগবে।

তিনি বলেন, বোরো মৌসুমে এ বছর তিনি প্রায় ২০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। দুইদিন আগে থেকে ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ শুরু করেন তিনি। তার মোট আবাদের ছয় বিঘা জমির ধান কাটা ও মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে আগামী এক সপ্তাহ পর পুরো জমির ধান ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশাবাদী তিনি।



রংপুর ও গাইবান্ধা জেলা থেকে বগুড়ায় ধান কাটতে আসা নাহারুল মিয়া, শফিকুল ইসলামসহ একাধিক শ্রমিক বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবছরই তারা ১০ থেকে ১৫ জনের একেকটি দল করে বগুড়ায় ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করতে আসেন। ইতোমধ্যে তারা জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার রনবাঘা এলাকায় কয়েকজন গৃহস্থের প্রায় ৯০ থেকে ১শ বিঘা জমির ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ সম্পন্ন করে এখন শাজাহানপুর উপজেলায় কাজ করছেন। প্রতি বিঘা জমির ধান কাটা-মাড়াইয়ে পারিশ্রমিক হিসাবে পাচ্ছেন ৩ হাজার ৫শ থেকে ৭শ টাকা পর্যন্ত। চুক্তিটা ফসলি মাঠের দূরত্বের ওপর ভিত্তি করে হয়ে থাকে।



জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, এ বছর বোরো মৌসুমে ১ লাখ ৮৭ হাজার ১৯৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। চাষ করা ধানের মধ্যে রয়েছে কাজল লতা, কাটারি ভোগ, ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-৮১, ব্রি ধান-৯০, ব্রি ধান-৯১, ব্রি ধান-১০০ ধান অন্যতম। চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজার ৫৫ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যেই ধান কাটা শুরু হয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত মোট চাষাবাদের ১৫ শকতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। ফলন হচ্ছে ২৩-২৪ মণ হারে।

বৈশাখের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনেকটাই ভালো রয়েছে। চলতি মৌসুমের উঠতি বোরোর সম্পূর্ণ ফসল ঘরে তুলতে পারলেই স্বস্তি কৃষকের। বেশ দ্রুত গতিতেই ধানকাটা-মাড়াইয়ের কাজ চলছে। কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। এবার রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ অনেক কম ছিল বলেও জানান কৃষির ওই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০২৩
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।