ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

কাঁচা হলুদে সমৃদ্ধ ফুলবাড়ীয়া, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা চান চাষিরা

আমান উল্লাহ আকন্দ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৬ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২৪
কাঁচা হলুদে সমৃদ্ধ ফুলবাড়ীয়া, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা চান চাষিরা

ময়মনসিংহ: কাঁচা হলুদে সমৃদ্ধ ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চল। লাল মাটি অধ্যুষিত এই পাহাড়ি অঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নে রেকর্ড পরিমাণ হলুদ উৎপাদন করে চাষিরা যুগ যুগ ধরে দেশের চাহিদা পূরণে অবদান রেখে চলছে।

কিন্তু মসলা জাতীয় এই ফসল চাষে নেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। ফলে সম্ভাবনাময় এই ফসলটি কৃষি প্রণোদনার আওতায় আনা হলে উৎপাদন বাড়িয়ে দেশে মসলার ঘাটতি পূরণে অবদান রাখা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট চাষিরা ও কৃষি কর্মকর্তারা।    

সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, টাঙ্গাইলের মধুপুর অঞ্চল ঘেঁষা ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তবর্তী এই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ৮ নম্বর রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়ন। কৃষি সমৃদ্ধ লাল মাটির এই এলাকাটিতে চাষাবাদের বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে কাঁচা হলুদের আবাদ। এই এলাকার প্রায় সবাই কম-বেশি হলুদ চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে প্রতি বছর এই উপজেলায় পাঁচ থেকে ছয় শতাধিক হেক্টর জমিতে হলুদ উৎপাদন হয় দুই থেকে তিন হাজার টন। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের ঘাটতি পূরণে অবদান রেখে আসছে।

স্থানীয় রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. কামরুজ্জামান বাবুল একজন সফল হলুদ চাষি। প্রতি বছরের ন্যায় তিনি এবারও তিন একর জমিতে হলুদ আবাদ করেছেন। এতে ফলন ভালো হওয়ায় খুশি এই হলুদ চাষি।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এই এলাকার মাটির রস ও আবহাওয়া হলুদ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ফলে এলাকার বেশির ভাগ কৃষক হলুদ চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এতে উৎপাদিত হলুদ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাজারজাত করা হয়। কিন্তু মসলা জাতীয় লাভজনক এই ফসলটি চাষে সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই। এই অবস্থায় অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি হলুদ চাষটিও কৃষি প্রণোদনার আওতায় আনা হলে উৎপাদনে আগ্রহ বাড়বে কৃষকদের। তখন ভারত বা বার্মা থেকে হলুদ আমদানির প্রয়োজন হবে না।    

চলতি বছরে হলুদ চাষে আগের চেয়ে উৎপাদন খরচ অনেক গুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষক মো. লাল মিয়াসহ আরও অনেকেই। তারা বলেন, এই এলাকার বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে বনবিভাগের জমি। ফলে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির পাশাপাশি বনের জমি লিজ নিয়ে হলুদ চাষ করতে হয়। এতে জমি লিজ খরচের সঙ্গে সার, বীজ ও শ্রমিক খরচ এখন অনেক বেশি। এজন্য প্রতি কাঠা জমিতে হলুদ চাষে খরচ হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা। এতে কাঁচা হলুদ উৎপাদন হয় প্রায় ১০ থেকে ১৫ মণ। তবে শুকানোর পর এর পরিমাণ দাঁড়ায় দুই থেকে তিন মণ। এর মধ্যে কাঁচা হলুদের মণ প্রতি মূল্য ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা এবং শুকানো হলুদ মণ প্রতি ছয় থেকে মানভেদে সাড়ে সাত হাজার টাকায় বিক্রি হয়।  

কৃষকেরা জানায়, হলুদ এক বছরি ফসল হিসেবে পরিচিত। এটি আবাদে পর পরিপক্ব হতে সময় লাগে প্রায় ১০ মাস। এর মধ্যে বছরের চৈত্র ও জ্যৈষ্ঠ মাসে হলুদের কন্দ জমিতে রোপণ করার পর পৌষ থেকে ফাল্গুন মাসব্যাপী শ্রমিক দিয়ে জমি থেকে মাটি খুঁড়ে হলুদ তোলা হয়। এরপর তা বাছাই করে গরম পানিতে সিদ্ধ করে শুকানো হয় রোদে। পরে শুকনো হলুদ মেশিনে পরিষ্কার ও প্রক্রিয়াজাত করে আর্দ্রতা বুঝে তা বস্তায় সংরক্ষণ করে বাজারে তোলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় খাটুনি (পরিশ্রম) অনেক বলেও জানান তারা।  

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জমি থেকে হলুদ সংগ্রহে সম্পৃক্ত শ্রমিকদের মধ্যে বেশির ভাগ নারী। তবে এটি বাছাই ও পরিষ্কার পক্রিয়ায় পুরুষ শ্রমিকেরা বেশি জড়িত। তবে পারিশ্রমিক দিক থেকে পুরুষদের চেয়ে নারীদের মজুরি অর্ধেক বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট নারী শ্রমিকেরা।  

চাষিরা আরও জানান, জেলার ফুলবাড়ীয়া ও পার্শ্ববর্তী টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলাটি হলুদের রাজ্য বলে সারাদেশে সমধিক পরিচিত। এতে তিন ধরনের হলুদ চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে পাটনাই, মালা ও বীনা-১ জাতের হলুদ রয়েছে। তবে বাজারে চাহিদার দিক থেকে পাটনাই ও মালা জাতের কদর বেশি।  

উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আবু রায়হান জানান, চলতি বছরে এই উপজেলায় ৬৪৫ হেক্টর জমিতে হলুদ আবাদ হয়েছে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় দুই হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা।    

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, হলুদ চাষে ফুলবাড়য়ী উপজেলার ব্যাপক খ্যাতি দেশজুড়ে। তবে উপজেলার লাল মাটি অধ্যুষিত পাহাড়ি অঞ্চল রাঙ্গামাটিয়া, এনায়েতপুর ও বাক্তা ইউনিয়নে হলুদের চাষ বেশি হয়। এটি লাভজনক ফসল এবং বাজারের এর চাহিদা অনেক। চলতি বছরে এই উপজেলা থেকে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা হলুদ বাজারে বিক্রি হবে।        

তবে মাঠ ফসলে (ধান, গম, ভুট্টা) কৃষি প্রণোদনার আওতায় নেই মসলা জাতীয় এ ফসলটি। ফলে নতুন জাত সম্প্রসারণে কৃষি প্রদর্শনী এবং পরামর্শ ছাড়া হলুদ চাষিদের জন্য তেমন কিছু করার নেই কৃষি বিভাগের। তাই হলুদ ফসলটি কৃষি প্রণোদনার আওতায় আনা হলে চাষে আগ্রহ বাড়বে কৃষকদের। এতে উৎপাদন বাড়িয়ে দেশে আদা-হলুদের ঘাটতি পূরণে অবদান রাখা সম্ভব বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।