ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

বান্দরবানে বাড়ছে তুলার আবাদ

কৌশিক দাশ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২৪
বান্দরবানে বাড়ছে তুলার আবাদ

বান্দরবান: পার্বত্য জেলা বান্দরবানে তামাকের পরিবর্তে চাষ হচ্ছে তুলা। জুম চাষের পাশাপাশি তুলার ফলন ভালো হওয়ায় চাষিদের জীবনে ফিরে এসেছে সচ্ছলতা।

তুলা উন্নয়ন বোর্ড বলছে, এ বছর বান্দরবানে পাঁচ হাজার ৮৭৮ হেক্টর জমিতে তুলার আবাদ হয়েছে। বিপরীতে উৎপাদন হতে পারে এক হাজার ৫২৮ মেট্রিক টন তুলা। গবেষকরা বলছেন, উন্নত জাতের তুলা চাষের সঠিক পরিচর্যা করা গেলে উৎপাদন বাড়বে আরও কয়েকগুণ।

বান্দরবানের বিভিন্ন পাহাড় ও এর পাদদেশে এক সময় ব্যাপকহারে চাষ হতো ক্ষতিকর তামাক। এখন সেই জমিতেই কৃষকরা আবাদ করছে তুলা। জেলার মেঘলা, চিম্বুক, চড়ুইপাড়া, লেমুঝিড়ি, বালাঘাটা, জয়মোহন পাড়াসহ বিভিন্ন পাড়ায় চলছে এই তুলার আবাদ। বান্দরবানের সাতটি উপজেলার বিভিন্ন জমি থেকে এখন তুলা উত্তোলন শুরু হয়েছে। দেশি তুলার পাশাপাশি হাইব্রিড তুলা চাষে ফলন ভাল পাওয়ায় আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে চাষিরা।

জেলা সদরের চড়ুইপাড়া এলাকার তুলা চাষি মং সাচিং মারমা বাংলানিউজকে বলেন, এক সময়ে আমাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকত। কিন্তু বর্তমানে বান্দরবান জোনের তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় আমরা তুলা আবাদ করেছি। ভালো ফলনে লাভবান হচ্ছি।

জেলা সদরের বালাঘাটা বাজারের তুলা চাষি অং হ্লা মং মারমা বাংলানিউজকে বলেন, এক সময়ে পাহাড়ের পাদদেশে আর নদীর পাড়ে তামাক চাষ করতাম। তখন লাভ কম হতো এবং শরীরের ক্ষতি হতো। এখন তুলা চাষ করছি। পরিশ্রম কম হচ্ছে, সেইসঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে তুলার সঙ্গে শিম, টমোটোসহ কয়েক রকম সবজি আবাদ করে লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছি।

বান্দরবান জোনের তুলা উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, ২০২২-২৩ মৌসুমে বান্দরবানে পাঁচ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে তুলার আবাদ হয়েছিল। বিপরীতে এক হাজার ৯২ মেট্রিক টন তুলা উৎপাদন হয়েছিল। ২৩-২৪ মৌসুমে বান্দরবানে পাঁচ হাজার ৮৭৮ হেক্টর জমিতে তুলার আবাদ হয়েছে। এবার এক হাজার ৫২৮ মেট্রিক টন তুলা উৎপাদন হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।

জেলার তুলা উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলমগীর হোসেন মৃধা বাংলানিউজকে বলেন, ২০২৩-২৪ মৌসুমে বান্দরবানে এক হাজার ৫০ জন চাষি তুলা উন্নয়ন বোর্ডের প্রশিক্ষণ নিয়ে উৎপাদন করছে। প্রশিক্ষণে চাষিদের উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের ওপর বিস্তর ধারণা দেওয়া হচ্ছে। পাহাড়ে এক সময় চাষিরা শুধু তামাক চাষ করে জীবনধারণ করলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন তুলা চাষে লাভ বেশি হওয়ায় অনেক চাষিই তুলা চাষ করছে। জেলায় এবার প্রতিমণ বীজতুলার দাম তিন হাজার ৮০০ টাকা।

তিনি আরও বলেন, বান্দরবানে তুলার উন্নয়নে চাষিদের প্রশিক্ষণ, সমাবেশসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান। জেলায় তুলা চাষে চাষিদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।

জেলার পাহাড়ি তুলা গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও অফিস প্রধান মংসানু মারমা বাংলানিউজকে জানান, তুলার মান উন্নয়নে বান্দরবানের পাহাড়ি তুলা গবেষণা কেন্দ্রে বিভিন্ন জাতের তুলার গবেষণা চলমান। এই তুলা গবেষণা কেন্দ্রে বর্তমানে এইচসি ১, ২, ৩ এবং সিবি ১২, ১৩, ১৪, ১৫ সিবি হাইব্রিড-১ এবং টার্কি থেকে ১২টি জাতের তুলার গবেষণা চলমান।

তিনি আরও বলেন, সঠিকভাবে চারা রোপণ ও পরিচর্যা করা গেলে জেলায় প্রচুর পরিমাণে তুলা উৎপাদন হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২৪
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।