লক্ষ্মীপুর: মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা একটি দুর্গম চর। গেল বছরের এ সময়টাতে ওই চরটি ছিল বিরান ভূমি, এবার সেই চরে রসালো সবুজ তরমুজের সমারোহ।
পুরোপুরি বাণিজ্যিকভাবে বিস্তীর্ণ চরে চাষ হচ্ছে উন্নত জাতের তরমুজ।
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মেঘনা নদী বেষ্টিত দুর্গম একটি চরের চিত্র এমন। স্থানীয়ভাবে যে চরের নাম দেওয়া হয়েছে ‘চর কাঁকড়া’। গেল এক বছর ধরে চরে শুরু হয়েছে চাষাবাদ।
চরের পশ্চিমাংশে প্রায় ৩০০ একর জমিতে চাষ হয়েছে ‘গ্রেড-১’ জাতের তরমুজ। পার্শ্ববর্তী ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার ৩০ থেকে ৪০ জন চাষি ওই জমি লিজ নিয়ে চাষ শুরু করেছেন। প্রথম বছর, তাই ফলন কিছুটা কম হলেও পরবর্তী বছর থেকে সফলতার আশা চাষিদের।
চাষিরা জানান, এ বছর নতুন এ চরে প্রথম চাষ শুরু করেছেন তারা। তাই ফলন কিছুটা কম হয়েছে। তবে আগামীতে আরও ভালো ফলন হবে।
তারা জানান, কিছু পাইকারি ও খুচর ব্যবসায়ীর কারণে বর্তমানে তরমুজের বাজার খারাপ যাচ্ছে।
চাষিদের মধ্যে হারুন পাটওয়ারী ১০ একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে ৩০ লাখ টাকার মতো। ১৮-২০ লাখ টাকার মতো তরমুজ বিক্রি করতে পেরেছেন। তার ক্ষেতে এখনো তরমুজ আছে। সেগুলো বাজারে পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন তিনি।
তিনি বলেন, বাজারদর এখন কম। মৌসুমের শুরুতে কিছু ব্যবসায়ী অপরিপক্ক তরমুজ বাজারজাত করেছেন। এতে তরমুজের বাজার নষ্ট হয়ে গেছে। তাই লাভ কিছু কম হবে।
আরেকজন চাষি ফারুক ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমি ১৬ কানি (এক একর সমান দুই দশমিক পাঁচ দুই কানি) জমিতে আবাদ করেছি। ৩০ লাখের মতো ব্যয় হয়েছে। প্রথম ধাপে ২৫ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। পাইকারি বেপারি এসে ক্ষেত থেকে তরমুজ নিয়ে গেছেন। তখন দামও ভালো ছিল। এখন কিছুটা কম। আশা করি, বাজারদর ভালো থাকলে আরও ৩০ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারব। এ মৌসুমে ২০ লাখের মতো লাভ হবে।
চাষি দুলাল পাটওয়ারী বাংলানিউজকে বলেন, আমি ৬০ একর জমিতে আবাদ করেছি। কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ করলে অনেক লাভ হয়। তবে সেটা বাজারের ওপর নির্ভর করে। রমজানের শুরুতে তরমুজের দাম ভালো ছিল। কিন্তু পাইকারি এবং খুচরা পর্যায়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে তরমুজের প্রতি সাধারণ মানুষের ভূল ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে এ মুহূর্তে তরমুজের বাজার নিম্নমুখী। তাই লাভও কম হবে। একজন পাইকারি বেপারি আমার ক্ষেত থেকে ২০ লাখ টাকার তরমুজ দরদাম করে পরে তিনি সেগুলো নেননি। এতে আমার কিছুটা লোকসান হবে।
তিনি আরও বলেন, ২০ বছর ধরে তরমুজ চাষ করছি। আমাদের এলাকার বেশিরভাগ লোক তরমুজ চাষাবাদে জড়িত।
ভোলা জেলা ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন জেলাতে গিয়ে আমরা বাণিজ্যিকভাবে তরমুজের চাষ করি। লক্ষ্মীপুরের এ চরে এ প্রথম বারের মতো চাষ শুরু করেছি। এবার ফলনে কিছুটা ভাটা পড়েছে। সাধারণত একেকটি তরমুজ ২০ কেজির ওপরে হয়। এ চরের তরমুজ ১৪ থেকে ১৫ কেজির মতো হয়েছে। নতুন চর, তাই মাটিতে কিছুটা লবণাক্ততার রয়েছে। পর্যায়ক্রমে চাষ চলতে থাকলে মাটিতে লবণ কমে যাবে। আশা করি আগামী বছর আরও ভালো চাষ করতে পারব।
এ চাষি জানান, মাঠ থেকে তরমুজ সংগ্রহ করে ট্রলিতে করে নদীর তীরে নিয়ে যান তারা। সেখান থেকে ট্রলারে করে নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকায় পাঠানো হয়। তরমুজ আকার ভেদে তিনটি গ্রেড করা হয়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে পিস হিসেবে কিনে নেন। কখনো তারা কেজি হিসেবে তরমুজ বিক্রি করেন না।
কমলনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদ রানা বাংলানিউজকে বলেন, চরের জমি সাধারণত নোনা থাকে। ওই জমিতে এবারই প্রথম তরমুজ আবাদ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে মাটিতে লবণের মাত্রা কমে গেলে ফলন ভালো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৪
এসআই