খুলনা: এবার অতি বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন খুলনার অনেক কৃষক। আগাম সবজি চাষে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন তারা।
ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনার মলমলিয়া গ্রামের কৃষক কামাল বাওয়ালি বলেন, ‘তিন বিঘা ঘেরের পাড়ে টমেটো ও ২১ শতক জমিতে লাল শাক চাষ করেছি। ইতোমধ্যে টমেটো ও লাল শাক বাজারে বিক্রি করতেও শুরু করেছি।
গুটুদিয়া এলাকার চাষি কৃষ্ণপদ বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে এবার শীতকালীন আগাম সবজি চাষে কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে উঁচু জমিতে লাল শাক ও মুলা চাষ করেছি।
এবার অতিবৃষ্টি ও দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতার কারণে ডুমুরিয়ায় সবজি চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানির কারণে ক্ষেতেই নষ্ট হয়েছে বিভিন্ন সবজির গাছ ও চারা। তবে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আবারো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।
৪ নম্বর কয়রার পুকুরপাড় এলাকার কৃষক কৃষ্ণ সরদার বলেন, শীতকালীন শাকসবজি চাষে এখন ব্যস্ত সময় পার করছি। ইতোমধ্যে জমিতে বেগুন ও টমেটো চাষ করেছি। ভালো ফলনও হয়েছে। কিছুদিন পর বাজারে বিক্রি করতে পারব। আলু চাষের প্রস্তুতিও নিচ্ছি। যে কারণে ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে।
লবনচরা এলাকার কৃষক নমিতা জানান, আগেই শীতকালীন সবজি বাজারে তুলতে পারলে ভালো দাম পাওয়া যায়। এ সময় সবজির চাহিদা বেশি থাকে। তাই আগাম চাষাবাদ শুরু করেছিলাম। আমার জমিটা একটু উঁচু থাকায় জমিতে পানি জমেনি।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, জেলার উঁচু জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় কৃষক পরিবারগুলোতে ব্যস্ততা বেড়েছে। কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে কৃষক-কৃষাণীরা জমিতে হাল চাষ, চারা রোপণ, ক্ষেতে পানি ও ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করাসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাণিজ্যিকভাবেও চাষ হচ্ছে এসব সবজি। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে সারি সারি বিভিন্ন জাতের সবজির গাছ। এসবের মধ্যে শোভা পাচ্ছে লালশাক, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপির চারা, লাউ, মুলা, পালং শাকসহ হরেক রকমের শীতকালীন সবজি। কৃষকদের সবজি চাষে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
খুলনা মেট্রিপলিটন কৃষি (লবণচরা) কর্মকর্তা ফরহ দীবা শামস বলেন, মেট্রোতে ফসল কম হয়। এবার মেট্রোতে শীতকালীন সবজির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ হেক্টর। এরইমধ্যে মাঠ প্রস্তুত করে চারা ও বীজ বপনের কাজ শুরু হয়েছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইনসাদ ইবনে আমিন জানান, বৃষ্টি এবং বন্যার কারণে এ উপজেলায় শীতকালীন সবজি চাষাবাদে দেরি হয়েছে। যদিও এবার আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার হেক্টর। তার ৮০-৯০ শতাংশই মাঠ প্রস্তুত হয়েছে, কোথাও কোথাও চারা রোপণ শেষ হয়েছে।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, জেলায় আগাম শাক-সবজি উৎপাদনে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। কৃষিবিভাগ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। জেলায় শাক-সবজি চাষ কীভাবে বাড়ানো যায়, সে লক্ষ্যে পরামর্শের পাশাপাশি কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কৃষি বিভাগ সব সময় কৃষকদের পাশে আছে। যদিও এবার বন্যা, ভারী বৃষ্টি এবং জলাবদ্ধতার জন্য দেরি হয়েছে। তবে সব মিলিয়ে ধকল কাটিয়ে কৃষকেরা এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২৪
এমআরএম/আরআইএস