ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ধানের ভাল ফলনেও মলিন কৃষকের মুখ

রফিকুল আলম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২১ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৬
ধানের ভাল ফলনেও মলিন কৃষকের মুখ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ধুনট (বগুড়া): বগুড়ার ধুনট উপজেলায় পুরোদমে শুরু হয়েছে চলতি মৌসুমের বোরো ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ। তবে, উৎপাদন খরচ না ওঠার যে আশঙ্কায় কৃষকেরা এবার বোরো ধানের আবাদ কম করেছিলেন শেষ পর্যন্ত তা-ই ঘটেছে।

কৃষকের ঘরে যখনই ধান উঠেছে, তখনই হাট-বাজারে শুরু হয়েছে দরপতন।

সে কারণে বোরো ধানের ভালো ফলনে চোখ জুড়ালেও মুখে হাসি নেই কৃষকের। হাট-বাজারে নতুন ধানের এখন যে দাম, তাতে কৃষকের কোনো লাভ থাকছে না। আর বর্গাচাষিদের লোকসান গুনতে হচ্ছে বিঘায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা।

ধুনট উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস ছোবাহান বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে ধুনট উপজেলায় ১ লাখ ২৩ হাজার ৭০০ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু কৃষক চাষ করেছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৭৭৫ বিঘা জমি।

তার তথ্য মতে, ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার আশঙ্কায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৩ হাজার ৯২৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেননি কৃষকেরা।

এবার কৃষকের চাষকৃত ধানের মধ্যে রয়েছে- ব্রি ধান ২৮,২৯, ৫৮, ৪৫, বিআর ২৬, চান্দিনা, পরশমনি, হিরা, ময়না, এসিআই, তেজি, শক্তি, সাথিসহ ১৯ জাতের ধান।

সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যেখানে এক মণ ধান উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে ৫শ' থেকে সাড়ে ৫শ' টাকা। সেখানে সেই ধান সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তারপরও হাট-বাজারে ধান ক্রেতা নেই।

ধুনট সদরের পূর্ব ভরনশাহী গ্রামের আদর্শ কৃষক রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, প্রতি বিঘা জমিতে বোরো ধানের ভাল ফলনসহ (২০ মন) বাজারজাত করা পর্যন্ত খচর হয় প্রায় সাড়ে ১০ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকা।

এরমধ্যে ধানের জমি তৈরি ৭০০ টাকা, বীজ ও বীজতলা তৈরি (চারা) ৭০০ টাকা, সার ২০০০ টাকা, কীটনাশক ৫০০ টাকা, নিড়ানি ৫০০ টাকা, পানি সেচ বাবদ ৩০০০ টাকা, কাটা মাড়াই ৩৪০০ টাকা এবং হাট-বাজারে নিতে পরিবহন খরচ পড়ে ২০০টাকা।

শ্যামগাতি গ্রামের কৃষক আজগর আলী জানান, সারের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে বোরো ধানের জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য ডিজেলসহ অন্যসব সামগ্রীর দামও বেড়েছে। এমনকি ধান রোপণ করা থেকে কাটা-মাড়াই পর্যন্ত কৃষাণ-মজুরদের মজুরি বেড়েছে অনেক।

তিনি ‍জানান, জমির বোরো ধান কাটতে একজন মজুর দৈনিক কমপক্ষে ৫০০ টাকা মজুরি নেন। অথচ ধান চাষ করে যে টাকা খরচ হয়েছে সেটাই উঠছে না।

আজগর আলীর মতে, একমণ ধান কমপক্ষে ৯শ’ থেকে একহাজার টাকা হলে পুষিয়ে উঠতো।

পিরহাটি গ্রামের কৃষক লিয়াকত আলী জানান, এক বিঘায় ২০-২১ মণ করে বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে। বোরো ধানের এ ফলন সন্তোষজনক। তবে দাম কম। বাজারে প্রচুর ধানের আমদানি। কিন্ত চাহিদা মতো ক্রেতা নেই। ফরিয়া মহাজনরা এখনও ধান কিনতে শুরু করেনি। গুদামজাত করার জন্য শুকনো ধান কিনবে মহাজনরা।

মথুরাপুর বাজারের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন জানান, ধান ওঠার আগে দাম মণপ্রতি সাড়ে ৬০০ টাকা থেকে সাড়ে ৭০০ টাকা ছিল। কিন্ত বর্তমানে দাম কমে প্রতিমণ ৫০০ টাকায় এসেছে। এতে প্রান্তিক চাষীরা মহাজনের ঋণ, সার-কীটনাশকের দোকানের বকেয়া পরিশোধ, পারিবারিক ধার দেনা শোধ করা নিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

ধুনট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, অনুকুল আবহাওয়ার কারণে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে, বাজারে নতুন ধানের দাম কম। কিন্ত বড় ব্যবসায়ীরা ধান ক্রয় শুরু করলে এই দরপতন কেটে ওঠবে। এছাড়া, সরকারিভাবেও ধান ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০১৯ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৬
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।