ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

চিনির বিকল্প স্টেভিয়ার চাষে সফলতা

আবু খালিদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৫ ঘণ্টা, মে ৯, ২০১৬
চিনির বিকল্প স্টেভিয়ার চাষে সফলতা

বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণাগার প্রাঙ্গণ (ঈশ্বরদী) ঘুরে: লম্বায় প্রায় এক হাত হবে। সবুজ পাতায় ঘেরা গাছগুলো।

দেখলে মনে হবে পরিচিত কোনো গাছ। কাছে গেলে একটু অচেনা ঠেকবে।

তবে গুণকীর্তন শুনলে একটু না পুরোটাই অচেনা লাগবে। ছোট ছোট আকৃতির এসব গাছের পাতা চিনি অপেক্ষা ৩০ থেকে ৪০ গুণ বেশি মিষ্টি। আর পাতা শুকিয়ে গুড়া করার চিনি অপেক্ষা ৩০০ গুণ বেশি মিষ্টি হয়।
 
‘স্টেভিয়ার’ নামে এ গাছের গুণকীর্তন জানাতে গিয়ে বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএসআরআই) বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কুয়াশা মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, স্টেভিয়ার চাষ করে দেশে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।
 
বাংলাদেশে এ বিস্ময়কর গাছের চাষ করে সফলতা পাওয়া গেছে। কয়েক বছরের গবেষণায় এই সফলতা পেয়েছেন বিএসআরআই’র বিজ্ঞানীরা। এর নেতৃত্বে ছিলেন ড. কুয়াশা মাহমুদ। তবে মাঠ পর্যায়ে এখনো সেভাবে চাষ শুরু হয়নি।
 
সহজে স্টেভিয়ার চাষ করা যায় উল্লেখ করে ড. কুয়াশা মাহমুদ বলেন, কেউ ইচ্ছে করলো মাটির টবেও চাষ করতে পারেন। এটি গুল্ম জাতীয় ওষুধি গাছ। ক্যালরিমুক্ত স্টেভিয়ার মিষ্টি ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য খুবই ফলপ্রসূ। রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এটি প্যানক্রিয়েজ ইনসুলিন উৎপাদনে উদ্দীপ্ত করে।
 
স্টেভিয়ার চাষ খরচও কম বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা। খুব কম পরিমাণ সার ও সেচের প্রয়োজন হয়। তবে এ ফসল চাষে আগাছা দমন খুবই প্রয়োজন। আর টিস্যু কালচারের চারাও ব্যবহার করা যায়।
 
সরেজমিনে দেখা যায়, বিএসআরআই’র মাঠের ছোট একটু জায়গা জুড়ে স্টেভিয়ার গাছগুলো রয়েছে। সারিবদ্ধ এসব গাছের পাতাগুলো আকারে ছোট।
 
গবেষকরা জানান, বাজারজাতের সমস্যার কারণে মাঠ পর্যায়ে কৃষকেরা এখনো তেমনভাবে স্টেভিয়ার চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। কিন্তু সম্ভাবনাময় এ ফসল চাষে শুধু চিনির বিকল্প নয়, কৃষি অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আসতে পারে। রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন সম্ভব।
 
স্টেভিয়ার যত গুণ

এটি ব্যাকটেরিয়া সাইডাল এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। দাঁতের ক্ষয়রোগ রোধ করে। স্কিন কেয়ার হিসেবে কাজ করে, তাই ত্বকের কোমলতা এবং লাবণ্য বৃদ্ধি করে। স্বাদ বৃদ্ধিকারক হিসেবেও স্টেভিয়ার অনেক চাহিদা রয়েছে।
 
চা, কফি, মিষ্টি, দুই, বেকারি ফুড, আইসক্রিম, কোমল পানীয়সহ এ জাতীয় নানা খাদ্যপণ্যে তৈরিতে স্টেভিয়া ব্যবহার করা যায়। ওষুধ তৈরিতেও ব্যবহার করা যায়। এর ভেষজ উপাদান মানুষের দেহে কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না।
 
স্টেভিয়ার চাষে করণীয়
বছরের যে কোনো সময়ে চাষ করা গেলেও জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে চাষ করলে বেশি ভালো ফলন পাওয়া যায়। দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি স্টেভিয়া চাষের জন্য বেশি উপযোগী। জমি খুব ভালোভাবে মই দিয়ে তৈরি করতে হবে। জমির অবস্থা বুঝে চার থেকে ছয়টি চাষ এবং মই দিয়ে মাটি ভালোভাবে ঝরঝরে করে চাষ করতে হবে।
 
সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৫০ থেকে ৫৫ সেন্টিমিটার এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৫০ থেকে ৫৫ সেন্টিমিটার করে রোপন করতে হবে। এক হেক্টর জমিতে প্রায় ৪০ হাজার গাছ লাগানো যায়। গাছ হতে সংগ্রহ করা পাতা রোদে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা শুকিয়ে তারপর গুড়া করে পলিথিন ব্যাগ, কাঁচের বোতলে সংরক্ষণ করা যায়।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৩ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৬
একে/আরবি/এসএইচ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।