ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

কৃষি উন্নয়নে পরমাণু গবেষণায় গড়িমসি

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৮ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০১৬
কৃষি উন্নয়নে পরমাণু গবেষণায় গড়িমসি

ঢাকা: নামেই রয়ে গেছে পরমাণু কৃষি গবেষণা কার্যক্রম। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে এ পদ্ধতির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকেরা।

১৯৬১ সালে ঢাকায় আণবিক শক্তি কমিশনের একটি ছোট্ট রেডিও-ট্রেসার ল্যাবরেটরির যাত্রা শুরু হয়। যাকে কেন্দ্র করে ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে একটি অধিকতর সংগঠিত ব্যবস্থাপনায়  বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের ‘বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)’ গড়ে ওঠে।
 
কৃত্রিম মিউটেশনের মাধ্যমে উন্নত শস্যজাত,  বায়োটেকনোলজি,  মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা ও জীবাণু সার, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা,  বালাই ব্যবস্থাপনা,  শস্য উৎপাদনশীলতার শারীরতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য,  ফসল ব্যবস্থাপনা, উদ্যান ফসলের উন্নয়ন,  প্রযুক্তির হস্তান্তর ও প্রভাব মূল্যায়ন এবং  আর্থ-সামাজিক গবেষণায় বিনা অবদান রাখছে।
 
পরমাণু শক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে বিনা এ পর্যন্ত ১২টি গুরুত্বপূর্ণ ফসলের মোট ৮৫টি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে এবং দেশের কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে অবদান রেখে চলেছে।
 
বিনা সাফল্যের সঙ্গে উদ্ভাবন করেছে শিম, ডাল ও তেল জাতীয় ৮টি ফসলের জন্য জীবাণুসার। যা মাটির গুণাগুণ রক্ষাসহ ডাল ও তেলজাতীয় ফসলের বৃদ্ধির জন্য নাইট্রোজেন সারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

২০১০ সালের মে মাসে কৃষি মন্ত্রণালয় বিনা’র মাধ্যমে পরমাণু, নিউক্লিয়ার ও অন্যান্য আধুনিক কলা-কৌশল ব্যবহার করে উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল শস্য উদ্ভাবনের প্রকল্প হাতে নেয়। গবেষণামূলক এ প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল, উচ্চ ফলনশীল মাঠ, উদ্যান ফসলের জৈবিক (রোগ-বালাই ও কীট-পতঙ্গ) এবং অজৈবিক (অম্ল, লবণাক্ততা, খরা, জলাবদ্ধতা) প্রতিকূল পরিবেশ সহনশীল জাত উদ্ভাবন করা।

কিন্তু ছয় বছর পার হয়ে গেলেও প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সফল হতে পারেনি বিনা। এর পেছনে সংশ্লিষ্টদের গড়িমসি দায়ী বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
 
বিন থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ প্রয়োগের মাধ্যমে বংশগতি ধারায় স্থায়ী পরিবর্তনের জন্য ফসলের উন্নত জাত ও কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং লাভজনক শস্যবিন্যাসে এ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে ১১২ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বিনা’র গবেষণা কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ এবং উপকেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
 
২০১০ সালের মে থেকে ২০১৩ সালের জুন মেয়াদে কৃষি উন্নয়নে এ পরমাণু গবেষণার কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। এরপর একে এক পাঁচবার ব্যয় ও সময় বেড়েছে প্রকল্পটির। তারপরও শেষ হয়নি গবেষণার কাজ। ধাপে ধাপে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। একইসঙ্গে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৭ সাল জুন নাগাদ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
 
কৃষকের কাছে উন্নত প্রযুক্তি হস্তান্তর, বিভিন্ন কৃষি পরিবেশ অঞ্চলের মাটি পরীক্ষণ, পারস্পরিক তথ্য বিনিময় ও উন্নত কৃষি উদ্ভাবনে এ পরমাণু কৃষি গবেষণা শুরু করে বিনা। যেন পরমাণু মলিকুলার পদ্ধতির মাধ্যমে শস্যের উন্নত জাত, আদি জাত, স্থানীয় জাত, জীবানু স্ট্রেইন ও কৌলিক তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করা যায়।

এরপর প্রতিকূল পরিবেশসহিষ্ণু মাঠ ও উদ্যানের ফসল উদ্ভাবন, শাক-সবজি, মশলার উন্নত জাত উদ্ভাবন, ফসলের জন্য সার প্রয়োগ সুপারিশ মালা প্রণয়ন, রোগ ও পোকা-মাকড়ের দমণে পরমাণু গবেষণা শুরু হয়। সুষ্ঠু মাটি, সার-পানি ব্যবস্থাপনা, উদ্ভাবিত জাতগুলোর কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনা, আর্থ-সামাজিক খাতেও এ গবেষণা সহায়ক। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়ায় সুফল পাচ্ছেন না মাঠ পর্যায়ের কৃষকেরা।
 
বিনা’র আওতায় সুনামগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, বরিশাল, নোয়াখালী, শেরপুর ও গোপালগঞ্জে নতুন উপকেন্দ্র তৈরিরও কথা। কিন্তু অবকাঠামো নির্মাণের কাজ এখনও শুরু হয়নি। ফলে বিনা উদ্ভাবিত প্রযুক্তির স্থানভিত্তিক উন্নয়ন ও দেশব্যাপী সম্প্রসারণ হচ্ছে না। বিভিন্ন কৃষি পরিবেশ অঞ্চলের মাঠ পরীক্ষণ ও স্থানীয় কৃষি সমস্যার নিরসনও হচ্ছে না। এমনকি কৃষি গবেষণা করার লক্ষ্যে দক্ষ জনবল গড়ে তোলা এবং মাঠ সম্প্রসারণে কর্মী প্রশিক্ষণও অধরাই রয়ে গেছে।
 
বার বার নানা প্রতিবন্ধকতারও মুখোমুখি হচ্ছে প্রকল্পটি। ফলে জনবলের বেতন, নির্মাণ, গবেষণা, উন্নয়ন, ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি, মেশিনারিজ ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি কেনা খাতে ব্যয় আবারও বাড়ছে।
 
কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান (পরিকল্পনা) মনজুরুল আনোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ ও অবকাঠামো নির্মাণের কাজ এখনও বাকি রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে না। সাতটি উপকেন্দ্র নির্মাণ কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। প্রকল্পের ব্যয় ও সময় সামনে আরও বাড়াতে হবে।

তিনি জানান, অনেক আগে থেকেই কৃষি উন্নয়নে পরমাণু গবেষণা চালু রয়েছে। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে কৃষি উন্নয়নে আরও অবদান রাখবে। ঘাতসহিষ্ণু নতুন নতুন ফসলের জাত উদ্ভাবনসহ ফলনও বাড়বে।
 
প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- ১৬ দশমিক ২৫ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, বায়োটেকনোলজি, উদ্যানতত্ত্ব ও কৃষি অর্থনীতি কার্যালয়ের উন্নয়ন ও উপকেন্দ্র নির্মাণ, গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক দ্রব্য, গ্লাসওয়্যার, আসবাবপত্র ইত্যাদি কেনা এবং ১ লাখ ১১ হাজার ৯৬ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া।
 
৫০ জন বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানীর সহকারী হিসেবে ১০০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে বিনায়। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন(বিএডিসি) ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগে (ডিএই) কর্মকর্তা ও এনজিওকর্মী হিসেবে মোট সাড়ে ৩ হাজার জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণকর্মী ও কৃষক থাকবেন সাড়ে ৭ হাজার জন।
 
এছাড়া পরমাণু গবেষণার কাজে ৩৬ জন বিজ্ঞানীকে স্বল্পমেয়াদী বৈদেশিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রকল্পের আওতায় ৪ জন বিজ্ঞানীকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনে সহায়তা করা হবে।

কিন্তু প্রকল্পের আওতায় কোনো কাজই যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়নি।
 
প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে কৃষিখাতের সাফল্য আরও বাড়বে বলে জানায় কৃষি মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ সময়: ২২২৭ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।