ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

নতুন তিন জাত

জোয়ার-ভাটাজয়ী ব্রি ধানে হাসি ফুটবে কৃষকের মুখে

আবু খালিদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৪ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০১৬
জোয়ার-ভাটাজয়ী ব্রি ধানে হাসি ফুটবে কৃষকের মুখে

ঢাকা: দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে জোয়ার-ভাটার কবলে পড়ে ধান চাষে বেশ হিমশিম খেতে হয় চাষিদের। ফলন কম, অল্প ঝড়ে ধানের গাছ হেলে পড়াসহ নানা সমস্যার মুখোমুখি হন তারা।

অল্প ফলন ঘরে তুলতে পারায় হাসি ফোটে না কৃষকের মুখে।
 
তবে এবার থেকে সেই হাসি ফুটবে কৃষকের মুখে। স্থানীয় জাতের ধানের চেয়ে ফলন বাড়বে এক থেকে দেড় মেট্রিক টন পর্যন্ত। আর হালকা নয়, মাঝারি ঝড়েও তেমন হেলে পড়বে না ধান গাছ।

এমনই দু’টি নতুন জাতের ধান উদ্ভাবনে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) এর বিজ্ঞানীরা।
 
ব্রি’র গবেষণা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মো. আনসার আলী বাংলানিউজকে জানান, ব্রি ধান ৭৬ ও ৭৭ নামের এ দু’টি নতুন জাতের ধান চলতি মৌসুম থেকেই চাষ করতে পারবেন কৃষকরা।
 
এর পাশাপাশি সুগন্ধিযুক্ত ও চিকন ধানের জাত ব্রি ধান ৭৫ উদ্ভাবনেও সফলতা পেয়েছেন ব্রি’র বিজ্ঞানীরা। গত ২৯ জুন কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ উইংয়ের সভায় চূড়ান্ত পর্যায়ে এ তিন জাতের ধান অবমুক্ত করা হয়।
 
ধানবিজ্ঞানী ড. আনসার আলী বলেন, জলবায়ু অভিঘাত এলাকায় ধানের ফলন বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে ব্রি। এরই ধারবাহিকতায় ব্রি ধান ৭৬ ও ৭৭ উদ্ভাবন করা হয়েছে। জাত দু’টি খুবই যুগপোযোগী। অলবণাক্ত জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের জমিতে চাষিরা এ দুই জাতের ধান চাষ করে অনেক বেশি ফলন পাবেন। লাগসই জাত হিসেবে কৃষকের মাঝে খুবই উপযোগী হবে।
 
তিনি জানান, দক্ষিণ অঞ্চলের বরগুনা ও বরিশালসহ আশপাশের জোয়ার-ভাটা কবলিত এলাকার ধানের জমির পরিমাণ প্রায় আট লাখ হেক্টর। এসব জমিতে যদি হেক্টর প্রতি এক মেট্রিক টন বেশি ফলন হয়, তাহলে ওই আট লাখ জমিতে আট লাখ মেট্রিক টন ধান বেশি পাওয়া যাবে। দীর্ঘদিন চেষ্টার পর এই সফলতা ধরা দিয়েছে।
 
৩০ থেকে ৩৫ দিন বয়সে এ দু’টি জাতের চারা ৭০ থেকে ৭৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। আমবস্যা, পূর্ণিমা আসার দশদিন আগে চারা লাগানো যাবে। লম্বা ও দীর্ঘ জীবনকাল হওয়ার কারণে ‍হেক্টর প্রতি এক থেকে দেড় টন ফলন বাড়বে। স্থানীয় জাতের মতোই ১৬৫ থেকে ১৭০ দিনের মধ্যে ধান কাটা যাবে।
 
ব্রি সূত্র জানায়, জোয়ার-ভাটা প্রধান অঞ্চলে স্থানীয় সাদামোটা ও দুধকলম জাতের ধানের চাষ হয়। সামান্য ঝড়ে এ দু’টি জাতের ধান হেলে পড়ে। এতে ফলন কমে যায়। কিন্তু ব্রি ৭৬ ও ৭৭ জাতের ধান সহজে হেলে পড়বে না। তবে বড় ধরনের ঝড় হলে সেটি আলাদা কথা। এছাড়া ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম হয়।
 
সাদামোটা ধানের আধুনিক ভার্সন হলো ব্রি ধান ৭৬ আর দুধকলমের আধুনিক ভার্সন ব্রি ধান ৭৭। নতুন ও পুরনো উভয় জাতের ধান ও চাল একই রকম দেখতে হবে।
 
অন্যদিকে আমন মৌসুমে যেসব এলাকায় সেচ ব্যবস্থা আছে সেসব এলাকায় ব্রি ৭৫ জাতের ধানের চাষ খুবই উপযোগী। একাধিক ফসল চাষাবাদ এলাকায় লাগসই প্রযুক্তি এটি। স্বল্প সময়ে (১১৫ থেকে ১১৭ দিন) ধানের ফলন ঘরে তুলতে পারবেন চাষিরা। এরপর আগাম সবজি চাষ করতে পারবেন তারা।
 
তবে চাষিদের অবশ্যই ১৮ থেকে ২১ দিনের মধ্যে চারা লাগাতে হবে। বৃষ্টি না হলে সেচ দিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হবে। এ জাতের ধানের চাল চিকন ও সুগন্ধিযুক্ত হওয়ায় কৃষকরা ভালো দাম পাবেন। লবাণাক্ত ও হাওর অঞ্চল বাদ দিয়ে দেশের সব অঞ্চলেই মাঝারি ও উঁচু জাতীয় জমিতে চাষ করা যাবে ব্রি ধান ৭৫।
 
ড. আনসার আলী বলেন, হেক্টরপ্রতি এ ধানের ফলন ৫ টনের অধিক। বাণিজ্যিক কৃষিতে যেতেও এ ধান অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
 
ব্রি’র এই ঊর্ধতন কর্মকর্তা জানান, সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে নতুন জাতের ধানের বীজ ব্রি’র পক্ষ থেকে কৃষক পর্যায়ে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ব্রি ৭৫, ৭৬ ও ৭৭ জাতের ধানের বীজ সরবরাহের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দেশের কৃষিকে এগিয়ে নিযে যাওয়ার স্বার্থেই এই উদ্যোগ।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১৬
একে/এএসআর

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।