ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

সোনালী আঁশে রঙিন স্বপ্ন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৯ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০১৭
সোনালী আঁশে রঙিন স্বপ্ন পাটের ফলন বাম্বার। ছবি: আজিজুল হক

বেনাপোল (যশোর): ছত্রাকের আক্রমণে ধান চাষে লোকসানের পর পাটের ভালো ফলনে চোখে রঙিন স্বপ্ন দেখছে যশোরের শার্শা উপজেলার পাট চাষিরা। তারা এখন দিনভর ব্যস্ত সময় পার করছে পাটের পরিচর্যায়।

তবে নায্য মুল্য ও পাট জাগ দেওয়া নিয়ে এবারও তাদের মধ্যে হতাশা ও শঙ্কা দেখা গেছে। এসব সমস্যা দূরীকরণে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে এগিয়ে আসবে বলে আশা করছে চাষিরা।

শার্শার সবুজ শ্যামল বিস্তীর্ণ মাঠ ঘুরে দেখা যায়, ইরি ধান ঘরে  তোলা শেষে এখন মাঠের অধিকাংশ জমিতে চাষ হয়েছে সোনালী আঁশ পাট। খরচ কমাতে অনেক জমি মালিক নিজেই দিন মজুরদের সঙ্গে কাজ করছেন। ফলন ভাল হওয়ায় তাদের চোখে খুশির ঝিলিক। মাস দুই এর মধ্যে শুরু হবে পাট কাটা। এখন চলছে ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার- সেচসহ বিভিন্ন পরিচর্যামূলক কাজ। তাই ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে চাষিদের। জমিতে বসেই তারা শ্রমিকদের সঙ্গে সকাল ও দুপুরের খাওয়া সারছেন। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পাট চাষে বাম্পার ফলন হবে বলে জানা গেছে। পাটের ফলন বাম্বার।  ছবি: আজিজুল হক

শার্শা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের পাটচাষি আমীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, তিনি ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকে তার লোকসান হয়েছে। এবার তার জমিতে পাটের ফলন ভালো হয়েছে। দাম ভালো পেলে বাজারের ধার-দেনা মেটাবেন, আর ছেলেকে একটা বাইসাইকেল কিনে দেবেন।

বেনাপোলের পাট চাষি ওয়াহাব বলেন, এ বছর পাট চাষ ভাল হলেও পোকা-মাকড়ের অক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে প্রচুর কীটনাশক ব্যবহার ও প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে জমিতে পানি সেচ দিতে হয়েছে। এতে পাট ঘরে তুলতে গত বারের চেয়ে এবার বেশি খরচ পড়ে যাবে। এতো খরচ ও পরিশ্রমের পর যদি ভাল বাজার মূল্য না পাই তাহলে পাট নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছি তা মিথ্যা হবে।

শার্শার লাওতাড়া গ্রামের চাষি কামাল জানান, এ অঞ্চলের খাল, বিল ও নদী-নালা প্রায় সব প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। এছাড়া গ্রামের পুকুরগুলোতেও এখন মাছ চাষ বেড়েছে। আর প্রচণ্ড তাপদাহে খাল, বিল ও শলাশয় পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। মাত্র দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে পাট কাটতে হবে। এতে কোথায় যে পাট জাগ দেব এ নিয়ে চিন্তা বেড়ে চলেছে। সরকার যদি খাল-বিল-জলাশয় আগের মতো উন্মুক্ত করে দেয় তাহলে কোনো সমস্যা হবে না।

পাট চাষি আনারুল ইসলাম জানান, কৃষি বিভাগ উন্মুক্ত জলাশয়ের পরিবর্তে পাত্রের পানিতে পাট পচানোর আধুনিক প্রযুক্তি রিবনার পদ্ধতির কথা বলছেন। কিন্তু এ মেশিনে কাঁচা পাটের ছাল ছাড়ানো ব্যয় বহুল। এক বিঘা জমির পাটের ছাল ছাড়াতে ৩৫ জন মজুর লাগে। ছাল ছাড়ানোর আগে পাতা ফেলতে লাগে আরো ১০ জন। মজুর প্রতি ২৫০ টাকা হিসাবে ৪৫ জনের মজুরি দিতে হয় ১১ হাজার ২৫০ টাকা। পক্ষান্তরে সনাতন পদ্ধতিতে পাট পচিয়ে আঁশ ছাড়াতে খরচ হয় ৩ হাজার টাকা।

সাশ্রয়ী না হলে কোনো প্রযুক্তিই গ্রহণযোগ্য হবে না বলে জানান তিনি। পাটের ফলন বাম্বার।  ছবি: আজিজুল হক

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিরক কুমার সরকার বলেন, শার্শা উপজেলায় ৫ হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে ৫ হাজার ৪শ’ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। জলাশয়ের সংকট হলে গর্ত কেটে সেখানে পানি দিয়ে পাট জাগ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা পাট অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার বাংলানিউজকে জানান, রিবনার পদ্ধতি ব্যববহুল হওয়ায় চাষিরা তা ব্যবহার করছে না। বর্তমানে মেশিনগুলো তাদের অফিসে পড়ে আছে।

জানা যায়, সোনালী আঁশ পাট উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ সারাবিশ্বের উ‍ৎপাদিত পাটের ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ পাট উৎপাদন করে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৯২ কোটি ডলারে বা ৭ হাজার ৩৬০ কোটি টাকার পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। ২০১৬-১৭ তে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৯৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা ৭ হাজার ৭১২ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০১৭
এজেডএইচ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।