ঢাকা, রবিবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

কৃষি

দিনাজপুরের মাটিতে মিষ্টি-সুস্বাদু আঙ্গুর চাষ

মাহিদুল ইসলাম রিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪২ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০১৭
দিনাজপুরের মাটিতে মিষ্টি-সুস্বাদু আঙ্গুর চাষ দিনাজপুরের মাটিতে মিষ্টি-সুস্বাদু আঙ্গুর চাষ- ছবি: বাংলানিউজ

দিনাজপুর: ইতোপূর্বে দিনাজপুরের মাটিতে কমলা ও চা পাতার সঙ্গে আঙ্গুর চাষের কথা শোনা গেছে। তবে যেসকল আঙ্গুর চাষ করা হয়েছে তা বেজায় টক যা মুখে দেওয়াই দায়। টক হওয়ায় অনেকই আঙ্গুর চাষ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

কিন্তু এবার দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ী মহল্লায় বাবা-মেয়ে মিলে মিষ্টি ও সুস্বাদু আঙ্গুর চাষ করে প্রমাণ করলেন এই মাটিতে মিষ্টি ও সুস্বাদু আঙ্গুর উৎপাদন সম্ভব।

কৃষিবিদরা বলছেন, দিনাজপুর জেলার অবস্থান হিমালয়ের পাদদেশে হওয়ায় এখানে আঙ্গুর চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়রা বাণিজ্যিকভাবে এই আঙ্গুর চাষ করেল এটি একটি জনপ্রিয় ফল চাষ হয়ে দাঁড়াবে। সেই সঙ্গে আঙ্গুর চাষ লাভজনক বাণিজ্যে রূপ নেবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখবে।

দিনাজপুর শহরেরে মধ্য বালুবাড়ী এলাকার মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ূন কবির ও তার ছোট মেয়ে দিনাজপুর সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক সাদিয়া সুলতানা এই মাটিতে প্রথম মিষ্টি ও সুস্বাদু আঙ্গুর চাষ করেছেন।

হুমায়ূন কবির বাংলানিউজকে বলেন, বড় মেয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের প্রশিক্ষক প্রকৌশলী সুলতানা কবির ঢাকাস্থ তার বাড়ির ছাদে আঙ্গুরে গাছ লাগিয়েছিলো। ২০১৫ সালে ছোট মেয়ে সাদিয়া তার বোনের বাড়ির সে আঙ্গুর গাছের একটি চারা এনে দিনাজপুরের বাড়িতে রোপন করে। এরপর বাবা-মেয়ে মিলে গাছটির পরিচর্যা শুরু করি। পরিচর্যায় শুধু পানি ও জৈবসার ব্যবহার করেছি। ২০১৬ সালে গাছটিতে ফল আসে তবে সংখ্যায় খুবই কম।
আঙ্গুর গাছ পরিচর্যা করছেন মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ূন কবির- ছবি: বাংলানিউজ
চলতি বছরের গাছটির চারপাশে থোকায় থোকায় আঙ্গুর ধরেছে। এই আঙ্গুর খেতে মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় সার্বক্ষণিক আঙ্গুর দেখতে ভিড় জমাচ্ছের উৎসুক মানুষ। তবে অনেকে গাছের গোড়ায় লোহার গুঁড়া দেওয়া পরামর্শ দিচ্ছেন। লোহার গুঁড়া দিলে নাকি আঙ্গুর আরও মিষ্টি ও সুস্বাদু হবে। এবারে এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করে দেখবো। দিনাজপুরে আঙ্গুর একটি বর্ষা ভিত্তিক ফল। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে গাছে আসে এই ফল।

তিনি বলেন, এই মিষ্টি আঙ্গুর ফলের গাছ থেকে বিপুল পরিমানের চারা গাছ তৈরি করে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও সরবরাহের পরিকল্পনা চলছে। স্থানীয়ভাবে আঙ্গুর চাষ হলে ফরমালিন মুক্ত ও কোনো ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ছাড়া মানসম্মত ফল পাওয়া যাবে।

এ ব্যাপারে অধ্যাপক সাদিয়া সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, আঙ্গুর গাছটি বাবা ও আমি পরিচর্যা করে বড় করে তুলেছি। গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি আঙ্গুর ধরেছে এবার। আঙ্গুর ফল গাছের জাতের প্রকার ভেদ রয়েছে। ইতোপূর্বে কয়েকজন আঙ্গুর চাষীদের গাছ দেখেছি যা এই গাছের থেকে সম্পন্ন ভিন্ন।

গাছের জাতের প্রকারভেদ থেকেই ফলটির টক-মিষ্টির পার্থক্য বলে তিনি মন্তব্য করেন।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, দিনাজপুর জেলা বরেন্দ্র অঞ্চলের অম্লভাবাপন্ন ও আবহাওয়া বিদ্যমান থাকায় কমলা ও আঙ্গুর চাষ করার উপযুক্ত স্থান। দিনাজপুরের মাটি লাল সালফারপূর্ণ (গন্ধক) হলুদার্ভ কাকরযুক্ত হওয়ায় এখানে মিষ্টি ও সুস্বাদু আঙ্গুর চাষ সম্ভব।

তবে গাছের নিবিড় পরিচর্যা ও পরিমিত পানি সেচ সরবরাহ করতে হবে না হলে ভেস্তে যেতে পারে আঙ্গুর চাষ। আঙ্গুর চাষে প্রচুর পরিমানে ধৈর্য শক্তির প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানান গোলাম মোস্তফা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১৭
জিপি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।