ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

মুলার মূল্যধসে চিন্তিত চাষি

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৭
মুলার মূল্যধসে চিন্তিত চাষি মুলার মূল্যধসে চিন্তিত চাষি

লালমনিরহাট: এক সপ্তাহে মুলার মূল্য কমেছে তিনগুণ। প্রতি ২৭ শতাংশ বা এক দোন জমির মুলা গত সপ্তাহে ক্ষেতেই বিক্রি হয়েছে ২০/২৫ হাজার টাকায়। তা কমে এখন ৭/৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে শ্রমিক মজুরিসহ অন্য খরচও বেড়ে যাওয়ায় মুলা চাষে তেমন একটা মুনাফা না পেয়ে হতাশ ও চিন্তিত চাষিরা।

লালমনিরহাটের স্থানীয় বাজারেও দিন দিন কমে যাচ্ছে মুলার চাহিদা ও কদর। মুলা পরিপক্ক হলে ক্ষেতে রাখার উপায় নেই, সেগুলো তুলে ওই জমিতেই আলু লাগাতে হয়।

তাই বাধ্য হয়েই চাষিরা পরিপক্ক মুলা ট্রাক ভরে বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বড় বড় সবজির বাজারগুলোতে।

তবে এখনো অনেকের ক্ষেতের মুলা অপরিপক্ক থাকায় বিক্রি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন সেসব চাষিরা।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ি, কুলাঘাট ও মোগলহাট, আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ি, সারপুকুর ও ভেলাবাড়ি, কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর, কাকিনা ও ভোটমারী এবং হাতিবান্ধা উপজেলার সির্দুনা ও গোতামারীসহ জেলার বেশ কিছু অঞ্চলে মুলাসহ বিভিন্ন সবজির চাষ হয়।  

সরেজমিনে গেলে সারপুকুর তালুক হরিদাস এলাকার চাষি রশিদুল হক জানান, চলতি মৌসুমে প্রায় ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৭ দোন জমিতে মুলার চাষ করেছেন তিনি। স্থানীয় বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় ট্রাক ভর্তি করে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন কুমিল্লা শহরের নিমসার সবজি আড়তে। ক্ষেত থেকে তুলে পরিস্কার করে সমস্ত মুলা বস্তায় ভরিয়ে ট্রাকে ওঠানো পর্যন্ত খরচ পড়েছে ৩০ হাজার টাকা। ট্রাক ভাড়া গুণতে হয়েছে আরও ৩০ হাজার টাকা। ফলে মোট ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করেছেন তিনি।  মুলার মূল্যধসে চিন্তিত চাষিরশিদুল হক বাংলানিউজকে জানান, বীজ বপণের ৪৫/৫০ দিনের মধ্যেই মুলা বিক্রি করা যায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে পরিপক্ক হতে না হতেই বাজার দর কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন। প্রতি মণ মুলা স্থানীয় বাজারে ৩৮০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা কমে আসায় বিক্রিতেও ঝামেলা হচ্ছে।  

কৃষিশ্রমিকের খরচ বাড়ায় তার মতো সব সবজি চাষিরাই আশানুরূপ মুনাফা পাচ্ছেন না বলেও দাবি করেন রশিদুল হক।

কমলাবাড়ির পাইকারি ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান জানান, দিন দিন স্থানীয় বাজারে মুলার কদর কমে যাচ্ছে। এ অঞ্চলের তুলনায় ঢাকা বা কুমিল্লার বাজারে কিছুটা চাহিদা রয়েছে। তাই চাষিদের মুলা ক্ষেতেই কিনে নিয়ে ট্রাকে ভরে রাজধানীতে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি।  

সারাদিন মুলা কিনে রাতে ট্রাক নিয়ে বড় বড় সবজির আড়তে পরদিন সকালেই পৌঁছে যান তিনি। সেখানে টাটকা বিক্রি করে ওই ট্রাকেই বাড়ি ফিরছেন। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে তার ব্যবসা  চলে আসছে।  

মোগলহাটের মুলাচাষি আলকাস উদ্দিন জানান, গত সপ্তাহে মুলার বেশ চাহিদা থাকলেও দিন দিন কমে যাচ্ছে। তার এক একর জমির মুলা পরিপক্ক হতে এখনও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে। এভাবে দাম কমতে থাকলে লোকসান গুণতে হবে। মুলায় লোকসান হলে আলু চাষে অর্থ সংকটের আশঙ্কায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তিনি।  

লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, এ বছর ৬ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত থাকলেও এ পর্যন্ত ৩ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হয়েছে। মৌসুম চলমান থাকায় রোপণ চলবে আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত।

অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিধূ ভুষণ রায় বাংলানিউজকে জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আগাম জাতের সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। আগাম মুলা চাষিরাও ভালোই মুনাফা পেয়েছেন। কিন্তু বাজারে চাহিদা কমে গেলে কাঁচাপণ্যের দামও কমে যায়। তাই এখন যারা মুলা তুলছেন, তারা কিছুটা কম মুনাফা পাচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০১৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।