ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

হাঁস পালনে ভাগ্যবদল

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৭
হাঁস পালনে ভাগ্যবদল ২ লক্ষাধিক হাঁসের ৫৬ খামার উৎপাদন করছে প্রতিদিন এক লাখ ডিম। ছবি: বাংলানিউজ

ভোলা: চারপাশে নদী, মাঝখানে ছোট ছোট দ্বীপচর, তেঁতুলিয়ার তীরঘেঁষা অনুন্নত জনপদ। চরগুলোর বাসিন্দাদের বেশিরভাগই জেলে। তবে কৃষিকাজের পাশাপাশি গৃহপালিত পশু-পাখি পালনও করেন অনেকে। 

তবে কৃষিকাজ বা পশু পালনে তেমন সফলতা না পেয়ে সাম্প্রতিককালে খামারে ও বাড়ি-ঘরে হাঁস পালনে ঝুঁকে পড়েছেন চরগুলোর যুবকেরা। আর এতেই বেকারত্ব দূর হয়ে ভাগ্য বদলে যাচ্ছে তাদের।

হাঁস ও ডিম বিক্রি করে পারিবারিক অসচ্ছলতাও দূর করছেন।  

অল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় পুরনোদের দেখাদেখি হাঁস পালনে ঝুঁকে পড়ছেন আরও অনেকেই।  

ভোলা সদর উপজেলায় এখন পর্যন্ত ২ লক্ষাধিক হাঁস নিয়ে ৫৬টি খামার গড়ে উঠেছে, যেগুলোতে গড়ে প্রতিদিন এক লাখ ডিম উৎপাদিত হচ্ছে।

মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চর চটকিমারা, ভেলুমিয়া, রাজাপুর ও কাঁচিয়া গ্রাম এবং ইলিশা ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে সরেজমিনে দেখা গেছে, বসত-বাড়ির আঙ্গিনা আর পতিত জমিতে গড়ে উঠেছে হাঁসের খামার। হাঁসেদের বাসস্থান ও খাদ্য সংকট না থাকা, শ্রমিক বা মজুরি না লাগা এবং  মুনাফা বেশি হওয়ায় এসব চরে দিন দিন হাঁস পালন বাড়ছেই।  

চর চটকিমারা গ্রামের কয়েকজন যুবক জানান, হাঁস ও উৎপাদিত ডিম বিক্রির টাকায় অনেকেই নিজের ভাগ্য বদল করেছেন। একজনকে দেখে অন্যজনও ঝুঁকে পড়ছেন হাঁস পালনে। এভাবেই দারিদ্র্য দূর হচ্ছে তাদের।
দলবেধে খাবার খেয়ে বেড়ায় এসব হাঁসেরা এবং দিনশেষে খামারে ফিরিয়ে আনেন খামারিরা।  ছবি: বাংলানিউজ
গ্রামের সফল খামারি মোসলে উদ্দিন জানান, হাঁস পালনে বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন চরগুলোর যুবকেরা। আর তাই সহজ বিকল্প কর্মসংস্থান হিসাবে এ পেশার ব্যাপক প্রসার লাভ করছে।

তিনি বলেন, ‘দুই বছর আগে কৃষিকাজ করেছি। কিন্তু সার-কীটনাশক, ক্ষেতমজুর ও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় তেমন লাভ হতো না। তাই কৃষিকাজ বাদ দিয়ে হাঁস পালন শুরু করি। ৩০০টি দিয়ে শুরু করে এখন আমার খামারে ৬০০টি হাঁস রয়েছে। এর মধ্যে ৩০০টি প্রতিদিন ডিম দিচ্ছে। ওই ডিম বাজারে বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছি’।

কামালের খামারেও ৬০০টি হাঁস রয়েছে। প্রতিদিন দুই হাজার টাকার ডিম বিক্রি করে সংসার ভালো চলছে বলে জানান তিনি।

আবদুল হাই বলেন, ‘৫০০টি হাঁসের মধ্যে প্রতিদিন ৩০০টি ডিম দেয়। ওই ডিম বিক্রি করে ২ হাজার ৭০০ টাকা আয় হয়। হাঁসের খাবার বাবদ এক হাজার টাকা খরচ বাদে বাকি লাভ দিয়ে দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে অনেক ভালোভাবে দিন কাটাচ্ছি’।

একজন খামারির স্ত্রী জ্যোৎস্না বলেন, ‘আমাদের একমাত্র আয়ের উৎসই হাঁস পালন। পরিবারের কাজের ফাঁকে খামার দেখাশোনা করি’।  

খামারিরা জানান, একেকটি খামারে গড়ে ৩০০-৬০০টি হাঁস পালন করা হয়। বিলে ও নদীর তীরে শামুকসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক খাবার খায়, ধানও খেতে দিতে হয়। দলবেধে এসব হাঁস খাবার খায় এবং দিনশেষে খামারে নিয়ে আসা হয়। ফলে এতে শ্রমিক লাগে না, তারা নিজেরাই হাঁসের দেখাশোনা করতে পারেন।  

তবে রোগাক্রান্ত হলে ওই হাঁস সরিয়ে ফেলতে হয়, না হলে মহামারির আশঙ্কা থাকে। খামার পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন এবং হাঁসের প্রতি বাড়তি নজরদারি রাখলে তেমন বিপর্যয় হয় না।  

ভোলা সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. দীনেশ চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘বিভিন্ন চরে হাঁস পালন করে অনেকেই বেকারত্ব দূর করেছেন। আমরা খামারিদের কারিগরি সহযোগিতাসহ সব ধরনের সুবিধা ও  হাঁস পালনের প্রসারে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি’।  

বাংলাদেশ সময়: ০২০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।