ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

কমলা চাষে সুদিন ফিরেছে নিকাশ মানকিনদের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৭
কমলা চাষে সুদিন ফিরেছে নিকাশ মানকিনদের দূর-দূরান্ত থেকেও নিকাশের বাগানে এসে কমলা কিনে নিয়ে যান মানুষ। ছবি: বাংলানিউজ

গোপালপুর, দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) থেকে: বাড়ির আঙিনাসহ পাহাড়ি টিলায় সুস্বাদু কমলা চাষ করে পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা এনেছেন নিকাশ মানকিন। শুধু কমলা চাষেই বছরে প্রায় লাখ টাকা আয় করছেন নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার গোপালুর গ্রামের সফল এই চাষি।

নিকাশের কমলা চাষের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে গোপালপুর ও আশেপাশের বিভিন্ন গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষসহ আরও অনেকেই এখন সুদিন ফেরানোর কমলার চাষ করছেন। তাদের মধ্যে হুইলিস নকরেক, মো. রবি মিয়া ও জিতু রেমা গত কয়েক বছর ধরে কমলার চাষ ও বিক্রি করে সংসারের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি অধিক লাভবান হচ্ছেন।

গোপালপুরের পাহাড়ি টিলায় ছিমছাম পরিবেশে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নিকাশ মানকিনের বসবাস। ১৬ বছর আগে দাম্পত্যের সূত্র ধরে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা ছেড়ে দুর্গাপুরে এসেছিলেন তিনি। এখানে কৌশলা নকরেকের সঙ্গে শুরু হয় তার সংসার জীবন।

মেয়ে খোপা নকরেকের মতোই হাসে যেন বাগানের কমলাও।  ছবি: বাংলানিউজসরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, নতুন জায়গায় এসে শুরুর দিকে কর্মসংস্থান বা উপার্জনের পথ খুঁজে না পেয়ে আশাহত হয়ে পড়েন নিকাশ। আর্থিক অভাব-অনটনে কেটে যায় সংসার জীবনের ৭টি বছর। এরই মধ্যে তাদের ঘরে এক ছেলে নিদর্শন নকরেক ও এক মেয়ে ও খোপা নকরেকের জন্ম হয়। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দুর্বিষহ হয়ে পড়ছিল নিকাশ-কৌশলা দম্পতির বেঁচে থাকা। ভাতের অভাবে পাহাড়ের বিভিন্ন ফল-ফলাদি খেয়েও দিন কেটেছে তাদের।

২০০৮ সালের দিকে এক সময় ওই দম্পতি খেয়াল করলেন, তাদের বাড়ির আঙিনায় জন্মানো কমলা গাছটিতে প্রচুর কমলা ধরেছে। তারা জানতে পারেন, বাজারে এ কমলার প্রচুর দাম। স্বামী নিকাশকে কমলাগুলো বাজারে বিক্রির পরামর্শ দিলেন কৌশলা।

স্ত্রীর পরামর্শে ওই গাছের কমলা ২ হাজার টাকারও বেশি দামে বিক্রি করতে পেরেছিলেন নিকাশ। আশান্বিত হয়ে ওই বছরই বাড়ির আঙিনায় বাণিজ্যিকভাবে কমলার চাষ শুরু করেন তারা।

প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০টি কমলার গাছ বুনেছিলেন নিকাশ। ওই  গাছগুলোর ফল বিক্রি করে লাভের মুখ দেখায় বৃহৎ পরিসরে পাহাড়ি টিলায়ও কমলার বাগান গড়ে তোলেন।

নিকাশ বাংলানিউজকে জানান, তার পাহাড়ি টিলার বাগানে বর্তমানে পাঁচ শতাধিক কমলা গাছ রয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকেও বাগানে এসে কমলা কিনে নিয়ে যান মানুষ।

একটি গাছ তিন বছর বয়সী হলে তাতে কমলা ধরে ও খাওয়ার উপযুক্ত হয়। প্রতি বছরের এপ্রিলের দিকে গাছে ফুল ধরে এবং নভেম্বরের মধ্যে কমলা পরিপক্ব হয়। তখন বাজারে বিক্রি করে সংসারসহ সব খরচ মিটিয়েও মোটা অঙ্কের টাকা আয় হয়।

গোপালপুর ও আশেপাশের বিভিন্ন গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষসহ আরও অনেকেই এখন সুদিন ফেরানোর কমলার চাষ করছেন।  ছবি: বাংলানিউজএকেকটি গাছে সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্যের কমলা হয়ে থাকে। বাজারদরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিক্রি করা হলেও পাহাড়ি টিলায় চাষকৃত কমলার দাম অন্যগুলোর চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি।

নিকাশের স্ত্রী কৌশলা বলেন, ‘আগে স্বামী-স্ত্রী দু’জনে খেতে পেতাম না। এখন আমাদের দুই সন্তানও পড়ালেখা করে। এক সময় বাড়িতে কোনোমতে ছাপড়া করে থাকতাম। কমলা বিক্রি করে এখন আমাদের আধাপাকা ঘর হয়েছে’।

পাহাড়ি টিলায় কমলা চাষে নিকাশ এখন ওই গ্রামের আদর্শ বলেও দাবি কৌশলার।

কমলা চাষে নিকাশের সাফল্যের কথা অনেক শুনেছেন জানিয়ে নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. সালমা লাইজ বাংলানিউজকে জানান, তিনি উন্নত প্রযুক্তি ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিলে আরো লাভবান হওয়া সম্ভব।

পাহাড়ি টিলায় চাষকৃত কমলার দাম অন্যগুলোর চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি।  ছবি: বাংলানিউজপাহাড়ি টিলা কমলা চাষের জন্য খুবই উপযোগী বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।