ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

পাহাড়ে ইক্ষু চাষই হতে পারে তামাকের বিকল্প

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৮
পাহাড়ে ইক্ষু চাষই হতে পারে তামাকের বিকল্প ইক্ষুর পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে মিষ্টি আলুর চাষ। ছবি বাংলানিউজ

রাঙামাটি: তামাকের ক্ষতিক্ষারক দিক তুলে ধরে কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করে রাঙামাটির পাহাড়গুলোতে এর আগ্রাসন রুখে দিতে কয়েকবছর ধরে কাজ করছে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট।

তুলনামূলকভাবে ইক্ষু চাষ বেশি লাভজনক, পাশাপাশি অধিক আয় এবং সাথী ফসলও ফলানো যায় উল্লেখ করে রাঙামাটিতে তামাক চাষ দূর করতে প্রচারণা চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। তারা বিভিন্ন সময় সভা-সেমিনার করেও তামাকের ক্ষতিক্ষারক দিক এবং ইক্ষুর লাভজনক দিকটি তুলে ধরছে কৃষকদের মাঝে।

এ কয়েক বছরে প্রতিষ্ঠানটি সফলতার মুখও দেখতে পেয়েছে। তাদের গবেষণায়- পাহাড়ে ইক্ষু চাষই হতে পারে পরিবেশ নষ্টকারী তামাক চাষের বিকল্প হিসেবে।

সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট রাঙামাটি শাখা সূত্রে জানা গেছে, সরকারের এ সংস্থাটি ২০১২ সাল থেকে তিন পার্বত্য জেলায় কাজ শুরু করে। তামাক চাষকে নিরুৎসাহিত এবং এর ক্ষতিক্ষারক দিক তুলে ধরে  পাহাড়ের জমিতে ইক্ষু চাষে স্থানীয় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে সংস্থটি। যার প্রতিফলন হিসেবে চলতি বছরে রাঙামাটির সদর ও কাউখালী উপজেলায় ২৫০ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে স্থানীয় কৃষকরা ইক্ষু চাষ করেছেন। এছাড়া এসব জমিতে কৃষকরা ইক্ষুর সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করেছেন মিষ্টি আলু, গাজরসহ ১৭ জাতের সবজি।

ইক্ষুর পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে মিষ্টি আলুর চাষ।  ছবি বাংলানিউজকাউখালী উপজেলার বগাপাড়া গ্রামের কৃষাণী সবিতা চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমার পাঁচ একর জমিতে আগে তামাক চাষ করতাম। ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় এ বছর থেকে তামাকের পরিবর্তে ইক্ষু চাষ এবং সাথী ফলন হিসেবে মিষ্টি আলু চাষ করেছি। ইক্ষু এবং মিষ্টি আলু বিক্রি করে তামাকের চেয়ে বেশি লাভ হবে বলে আমার আশা।

ওই উপজেলার সাক্রাছড়ি এলাকার কৃষক পরিতোষ কার্বারী বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর ইক্ষু চাষের দুই সারির মধ্যবর্তী জমিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মিষ্টি আলুর চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। বর্তমানে আমার জমিতে উৎপাদিত মিষ্টি আলুর বিক্রি শুরু করেছি।

সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট রাঙামাটির শাখার বৈজ্ঞানিক সহকারী কর্মকর্তা নিকসন চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, রাঙামাটি সদর ও কাউখালী উপজেলায় ১৮ জাতের ইক্ষু চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে আইএসডি (ঈশ্বরদী) -২৬, আইএসডি (ঈশ্বরদী) -২৪, আইএসডি (ঈশ্বরদী) -৩৮, আইএসডি (ঈশ্বরদী) -৪০, বিএসআরআই-৪১ অমৃত (চুষে খাওয়া ও গুড় তৈরির জাত), বিএসআরআই-৪২ রংবিলাস (চুষে খাওয়ার জাত, যা পার্বত্য এলাকার জন্য খুবই উপযোগী), বিএসআরআই-৪৩, বিএসআরআই-৪৪, বিএসআরআই-৬৯ (অস্ট্রেরিয়া), ভিএমসি-৮৬-৫৫০ (ফিলিপাইন)।

সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট রাঙামাটি শাখার ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ধনেশ্বর তঞ্চাঙ্গ্যা বাংলানিউজকে বলেন, পাহাড়ে রয়েছে ইক্ষু চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের যৌথ অর্থায়নে দুটি প্রকল্পের মধ্যে একটি সম্প্রসারণমূলক ও দ্বিতীয়টি গবেষণামূলক কার্যক্রম। এর মধ্যে রাঙামাটি সদর, কাউখালী, নানিয়ারচর, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, ও কাপ্তাই উপজেলায় ইক্ষুর চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, তামাকের চেয়ে ইক্ষু চাষে লাভ বেশি এবং পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় জমির উর্বরতাও ঠিক থাকে। তাই ইক্ষু চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠায় পাহাড়ে তামাক চাষের আগ্রাসন কমতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৮
টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।