ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

দুই প্রজাতির মিষ্টি বাঙ্গি উদ্ভাবনে অভাবনীয় সাফল্য

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৩ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৮
দুই প্রজাতির মিষ্টি বাঙ্গি উদ্ভাবনে অভাবনীয় সাফল্য বাঙ্গি চাষ

রাজশাহী: শুরুটা হয়েছিল নয় বছর আগে। এক জাপানি বন্ধুর পরামর্শে সেদেশে উৎপাদিত ‘রাগবি’ ও ‘মাস্কমেলন’ নামের বিশেষ প্রজাতির মিষ্টি বাঙ্গির বীজ এনে এখানে চাষের উদ্যোগ নেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনজুর হোসেন।

নয় বছর ধরে বেশ কয়েকবার তিনি জাপানি বাঙ্গির পরীক্ষামূলকভাবে চাষও করেন। কিন্তু মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী না হওয়ায় বীজগুলো নষ্ট হয়ে যায়।

এরপর থেকেই বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী মিষ্টি জাতের বাঙ্গি উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা শুরু করেন তিনি। দীর্ঘ নয় বছরের নিরলস গবেষণার পর তিনি মিষ্টি বাঙ্গি উদ্ভাবন করেছেন। স্বাদে অতুলনীয় এ বাঙ্গির নাম দিয়েছেন ‘সোনালি বাঙ্গি’।

বাংলাদেশে উৎপাদিত বাঙ্গির মিষ্টতা নেই বললেই চলে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফলটি খরমুজ, ফুটি, কাঁকুড় বিভিন্ন নামে পরিচিত। তবে কুমড়াগোত্রীয় গ্রীষ্মকালীন এ ফলটি একে তো স্বাদেও মিষ্টি নয়, আবার পরিপক্ব হলেই ফেটে যায়। মিষ্টি না হওয়ায় সাধারণত গুড় বা চিনি দিয়ে খাওয়া হয়। তবে এ ধারণা পাল্টে দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ব্যায়োলজিক্যাল সায়েন্সেসের (আইবিএসসি) পরিচালক অধ্যাপক মনজুর হোসেন। তার উদ্ভাবিত এই সোনালি বাঙ্গির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো চিনির মতো মিষ্টি আর ফেটে না যাওয়া।
বাঙ্গি চাষ
অধ্যাপক মনজুর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, দেশীয় প্রজাতির বাঙ্গির সঙ্গে দু’টি জাপানি প্রজাতির বাঙ্গির জীবন সন্নিবেশনের মাধ্যমে দু’টি বিশেষ প্রজাতির বাঙ্গি উদ্ভাবিত হয়েছে। জাপানি ‘রাগবি’ প্রজাতির সঙ্গে দেশীয় বাঙ্গির সংকরায়নের মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয়েছে ‘সোনালি বাঙ্গি’। এছাড়া, জাপানি ‘মাস্কমেলন’ প্রজাতির সঙ্গেও দেশীয় বাঙ্গির সংকরায়নের মাধ্যমে তিনি আরও একটি প্রজাতির বাঙ্গি উদ্ভাবন করেছেন। তবে এই প্রজাতির বাঙ্গির এখনও নামকরণ করা হয়নি।

পাকা মিষ্টি বাঙ্গির গায়ের রং সোনালি হওয়ায় তিনি উদ্ভাবিত বাঙ্গির নাম দিয়েছেন ‘সোনালি বাঙ্গি’। প্রথম অবস্থায় ফলটি হয় গাঢ় সবুজ রঙের। আকৃতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর গায়ের রং পরিবর্তন হয়ে সোনালি বর্ণ ধারণ করে। ছোট অবস্থায় দেখতে মাল্টা বা কমলার মতো এবং পরিপূর্ণ বাঙ্গিগুলো দেখতে একটি ছোট আকারের মিষ্টি কুমড়ার মতো। প্রতিটি বাঙ্গিই আধা কেজি থেকে প্রায় এক কেজি হয়।

রাজশাহী মহানগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকায় অধ্যাপক মনজুর কাদেরের গবেষণাগারে গিয়ে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে সোনালি বাঙ্গির চারা রোপণ করা হয়েছে। কিছু কিছু গাছে সোনালি বাঙ্গি ঝুলে আছে। বাঙ্গিগুলো আকার বড় আকারের কমলার মতো।

তিন শতক জায়গায় এই সোনালি বাঙ্গির চাষ করছেন অধ্যাপক মনজুর।

চাষ পদ্ধতির বিষয়ে অধ্যাপক মনজুর কাদের বলেন, ‘সোনালি বাঙ্গির’ চাষ পদ্ধতি ভিন্ন। এ বাঙ্গি মাটিতে চাষ করা যাবে না। মাটি থেকে চার-পাঁচ ফুট উচ্চতায় মাচা করে ফলটি চাষ করতে হয়। চাষের জন্য আলাদা কোনো মাটির প্রয়োজন নেই। সাধারণ বাঙ্গিগুলো যে মাটিতে চাষ করা হয় এ বাঙ্গিও সেই মাটিতে চাষ করা যাবে। চাষের খরচ সাধারণ বাঙ্গির তুলনায় কিছুটা বেশি। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ পড়বে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।

সোনালি বাঙ্গি উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষকরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন অধ্যাপক মনজুর হোসেন।  

অধ্যাপক মনজুর হোসেন বলেন, বাঙ্গি যে কতটা মিষ্টি হতে পারে সেটা অনেকে কল্পনা করতে পারেনি। জাপানি কাতো কেউকির পরামর্শে কাজ শুরু করেছিলাম। দীর্ঘদিন গবেষণার ফলে মিষ্টি জাতের এই বাঙ্গি উদ্ভাবন করতে পেরেছি। আমার বিশ্বাস অদূর ভবিষ্যতে এর মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২০ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৮
এসএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।