ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ন্যায্যমূল্য নেই, আউশ নিয়ে বিপাকে কৃষক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৮
ন্যায্যমূল্য নেই, আউশ নিয়ে বিপাকে কৃষক আউশ ধানের মাঠের ছবি/সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুর: গোলো মৌসুমে লক্ষ্মীপুরে আউশ ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু বাজারে সেই ধানের দাম কম। ধান বিক্রিতে উৎপাদন খরচও উঠছে না কৃষকের। তাই বর্তমান বাজার মূল্যে ধান বিক্রি করে কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। আর ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা হতাশ। 

কোনো কোনো কৃষক বাধ্য হয়ে কম দামেই ধান বিক্রি করছেন। আবার কেউ কেউ বেশি দাম পাওয়ার আশায় সংরক্ষণ করছেন।

এদিকে আমন ধান ঘরে উঠতে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতে আউশ ধান নিয়ে বিপাকেই পড়েছেন কৃষক।

লক্ষ্মীপুরের কয়েকটি হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ধানের দাম মণ প্রতি ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকা। দীর্ঘদিন ধরে ধানের দাম একই অবস্থা থেকে উন্নতি না হওয়ায় কৃষকরা হতাশায় ভুগছেন।

এ বিষয়ে কৃষক আনোয়ার উল্লাহ বলেন, কমলনগরের তোরাবগঞ্জ বাজারে ৫৭০ টাকা দরে ধানের মণ বিক্রি করেছেন তিনি। অথচ এক মণ ধান উৎপাদনের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮০০ টাকা। এই অবস্থায় প্রতি মণে তাকে অন্তত ২০০ টাকা করে লোকসান গুনতে হয়েছে।  

চর মার্টিন গ্রামের বর্গাচাষি দীন মোহাম্মদ বলেন, তিনি ১৬০ শতাংশ জমি বর্গা চাষ করেন। তাতে উৎপাদন খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। ধান উৎপাদন হয়েছে ৬০ মণ। জমির মালিককে দিতে হয়েছে ৩০ মণ। বাকি ৩০ মণ আউশ বিক্রি করে তার উৎপাদন খরচের টাকা উঠেনি।  

কৃষক হুমায়ুন জানান, ব্যাপারীদের ধান কিনতে আগ্রহ নেই, অর্ধেক টাকা বাকিতে ধান বিক্রি করতে হয়েছে তাকে।

কমলনগর উপজেলার চর লরেন্স ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুর রহমান বলেন, আউশ মৌসুমের শুরুর দিকে দাম কিছুটা বেশি ছিলো। কৃষকরা বেশি দাম পাওয়ার আশায় ধান ধরে রাখাতে দাম পড়ে গেছে। দাম পেতে আমনের সঙ্গে আউশ বিক্রি করতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, কৃষকরা রবি ফসল ঘরে তুলেই আউশ ধানের আবাদ করেছেন। বৈশাখ মাসে জমিতে ধান বুনেছেন। শ্রাবণে পেকেছে। পরে তারা কেটে গোলা ভরেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং রোগবালাই ও পোকামাকড় আক্রমণ না করায় বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো ফলনে তারা খুশি হয়েছেন। কিন্তু ভালো দাম না পাওয়ায় তাদের মুখে হাসি ফোটেনি।

রামগতি উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. ছালেহ উদ্দিন পলাশ বাংলানিউজকে বলেন, গত মৌসুমে আউশের বাম্পার ফলন হয়েছে। হেক্টর প্রতি উফশী জাতের ৪ থেকে ৫ মেট্রিক টন, স্থানীয় জাতের ২ থেকে ২ দশমিক ৩৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ওই মৌসুমে জেলায় ২৮ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ হয়েছে। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৭১৫ হেক্টর জমিতে আউশ মৌসুমের ধান চাষ করা হয়। এরমধ্যে হাইব্রিড ১০ হেক্টর, উফশী ৩ হাজার ১৯০ হেক্টর, স্থানীয় ৫১৫ হেক্টর। রায়পুরে উফশী জাতের ৪ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ। রামগঞ্জে একই জাতের ৫০০ হেক্টর। রামগতিতে ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর, এরমধ্যে ৮ হাজার ২০০ উফশী, ৩০০ হেক্টরে স্থানীয় জাতের ধান।  

এদিকে কমলনগরে ১১ হাজার ৬৭৫ হেক্টর জমির মধ্যে ১০ হাজার ৪০০ হেক্টরে উফশী ও স্থানীয় জাতের ১ হাজার ২৭৫ জমিতে আউশের আবাদ করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৮
এসআর/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।