ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

বিশ্ববাজারে পাট পণ্যের দাপট, প্রয়োজন সঠিক ব্যবস্থা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৮
বিশ্ববাজারে পাট পণ্যের দাপট, প্রয়োজন সঠিক ব্যবস্থা সেমিনারে বিল্স’র ভাইস চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান ভূঞাসহ অন্যরা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও পাট পণ্যের বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের প্রাধান্য চলে এসেছে। পাট শিল্পে শত প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেও ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও ১শ' কোটি মার্কিন ডলার রফতানি হয়েছে। এই শিল্পে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ২০২১ সালের মধ্যে দ্বিগুণ করা সম্ভব বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা।

রোববার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘পাটশিল্পের বর্তমান অবস্থা, সংকট ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনারের এসব কথা বলেন বক্তারা।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিল্স) সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান ভূঞার সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিল্স উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য শহিদুল্লাহ চৌধুরী।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, পাটকে সঠিকভাবে চিনতে এবং এর সঠিক ব্যবহার জানতে ও বুঝতে হবে। পাটকলে যন্ত্রাংশ অন্যান্য শিল্পের মতো আধুনিকায়ন না হলে এর অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কমবে। সম্ভাবনা বিশ্লেষণের এক্ষেত্রে সক্ষমতা ও প্রবৃদ্ধির কথা এখন ভেবে দেখার সময়। এছাড়া বেসরকারি ক্ষেত্রের সাফল্যকেও বর্তমানে পাটখাতে কাজে লাগাতে হবে।

সেমিনারে বিজেএমসি’র সাবেক মহাপরিচালক ও বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ড. মোবারক আহমদ খান বলেন, পাটকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয় বলে পাটের ওপর একটি পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয় রয়েছে। পলিথিনের কু-প্রভাব বুঝতে পেরেছে বলে বিশ্ববাজার এখন পলিথিন থেকে সরে আসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।

সিনথেটিকের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পাটের টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও পণ্যের মান উন্নয়নে পর্যাপ্ত গবেষণার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারকে এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। লিগনিন ও সেলুলোজের মতো পাটের উপজাতগুলোকেও অর্থনৈতিভাবে ব্যবহারে এগিয়ে আসার প্রয়োজনীতা রয়েছে। গার্মেন্টস শিল্পেও এর উপজাত ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারকে বিবেচনা করলে দেখা যায় আমাদের পাটপণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে উৎপাদন করতে হবে। ভারতের তুলনায় আমাদের পাট পণ্যের রফতানি গত ছয়বছরে বেড়েছে।

তিনি বলেন, সরকার ঘোষিত মজুরি বাস্তবায়ন করলে দ্বিগুণ বেতন দিতে গিয়ে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনেরকে (বিজেএমসি) আবার লোকসান গুণতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়লে দ্বিগুণ মজুরি দেওয়া সম্ভব হতে পারে। বিষয়টি পর্যালোচনা করে শ্রমিক অধিকার বজায় রেখে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকার দেশের মধ্যে একটি বাজার তৈরি করতে চাচ্ছে। এটিকে সম্ভাবনাময় করে তোলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে যেসব মিল বন্ধ রয়েছে তার বাস্তবতাও বুঝতে হবে। এক্ষেত্রে দেনা, আর্থিক ক্ষতি, মজুদ, বকেয়াসহ অন্যান্য অনুষঙ্গ বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এছাড়া বিজেমএসসির আওতাধীনসহ অন্যান্য বন্ধ পাটকলে নতুন কারখানা বিনির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শহীদুল করিম বলেন, মূল্য নির্ধারণে সমন্বয় এখনই করতে হবে, কেননা মিলগুলোতে উৎপাদন মূল্য বেশি হওয়ায় তা স্থানীয় বাজার ধরতে পারছে না।

বিল্সের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মো. আশরাফ হোসেন বলেন, পাটশিল্পে অনেক সম্ভাবনা থাকা স্বত্ত্বেও এটির ক্রমাগত অবনতি হয়েছে। এক্ষেত্রে শ্রমিকের অস্তিত্ব ও অধিকারের কথা বিবেচনা করতে হবে।

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বিল্সের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মেসবাহউদ্দিন আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি খলিলুর রহমান, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, খুলনার পাটশ্রমিক নেতা মহিউদ্দীন আহমেদ, চট্টগ্রামের পাট শ্রমিক নেতা মাহবুবুল আলম, ডেমরার করিম জুট মিলের ট্রেড ইউনিয়ন নেতা আবুল হোসেন, লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের দেলোয়ার হোসেনসহ বিশিষ্টজনেরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৮
এইচএমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।