ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

শীতের শুরুতেই ‘সুবাস’ ছড়াচ্ছে গোলাপ গ্রাম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৯
শীতের শুরুতেই ‘সুবাস’ ছড়াচ্ছে গোলাপ গ্রাম প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়িয়ে ফুটে আছে গোলাপ। ছবি: বাংলানিউজ

সাভার (ঢাকা): সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নে তুরাগ নদীর তীরে গোলাপ গ্রামের অবস্থান। বছরের বারোমাসের তিন মাস গোলাপ উৎপাদন ও বিক্রি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন এ গ্রামের চাষিরা।

প্রতিবছর শীতের মাঝামাঝি দিনগুলিতে গোলাপ ফুল বেশি বেচাকেনা হলেও এবার শীতের শুরু হতে না হয়তেই জমজমাট হয়ে উঠেছে গোলাপ গ্রামটি।

প্রতিবছরের শীতের শুরুতে ২৫০ হেক্টর জমির ওপর লাগানো গোলাপের চারাগুলোর পরিচর্যা শুরু করে দেন প্রায় দুই শতাধিক চাষি।

এবারও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। গোলাপ গ্রামের লালচে মাটিতে চাষিদের কারো এক বছর আবার কারো দুই বছর এমনকি তিন বছর আগের লাগানো গোলাপ গাছ রয়েছে। এসব গাছের ফুল তুলে বিক্রি শুরু করেছেন অনেক চাষিরা। গোলাপ গ্রামের প্রায় অর্ধেক চাষি গরমকালে ফুল চাষ থেকে বিরত থাকেন।  

গোলাপ চাষিদের অভিযোগ, বছরের নয় মাস তাদের খুব কষ্টে জীবন-যাপন করতে হয়। কারণ গরমকালে ফুল উৎপাদন হলেও তেমন বিক্রি হয় না। গাছের ফুল গাছেই শুকিয়ে যায়। তাই বছরের নয় মাস জীবিকার তাগিদে ভিন্ন পেশায় চলে যান  গোলাপ গ্রামের ফুল চাষি ও শ্রমিকরা।
প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়িয়ে ফুটে আছে গোলাপ।  ছবি: বাংলানিউজসম্প্রতি সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্যাপুর, বাগ্নীবাড়ী, মোস্তাপাড়া, আকরাইন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ চাষ হচ্ছে গোলাপ এবং উৎপাদন করা হচ্ছে গোলাপের চারা। এছাড়া কারো বাড়ির আঙিনা, সড়কের পাশে, এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনের ফাঁকা জায়গাতে গোলাপ চাষ করা হয়েছে। গোলাপ গ্রামে দুপুরের পর প্রতিটি বাগানেই শ্রমিকদের ব্যস্ততা শুরু হয়। এ সময় কেউ ফুল তুলে আঁটি বাঁধেন, কেউ বাছাই করেন আবার কেউ ব্যস্ত থাকেন গোলাপ পানিতে ভেজাতে। এ কাজগুলো সন্ধ্যার আগেই শেষ করেন কৃষকরা। কারণ সন্ধ্যার পরই জমে ওঠে সাভারের মোস্তাপাড়া ও শ্যামপুরের ফুল বাজার। ব্যবসায়ীরা এসব বাজার থেকে ফুল কিনে দেশের বিভিন্ন ফুলের দোকানসহ ও রাজধানীর শাহবাগে সরবরাহ করেন।

মোস্তাপাড়া গ্রামে গোলাপ বাগানে কথা হয় কৃষক আলাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এ গ্রামের ৯০ শতাংশ মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস ফুল চাষ। এখানে লাল, হলুদ ও সাদা গোলাপের চাষ হয়। তবে বাজারে চাহিদা বেশি লাল গোলাপের। যদি সরকার ফুল রপ্তানিতে ভূমিকা রাখে তবে এর চেয়ে বেশি গোলাপ বিক্রি হতো। প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়িয়ে ফুটছে গোলাপ।  ছবি: বাংলানিউজ
গোলাপ গ্রামে শিক্ষার্থীর সঙ্গে ঘুরতে এসেছেন মো. বখতিয়ার হোসাইন। তারা প্রতিবছরই গোলাপ গ্রামে ঘুরতে আসেন।

বখতিয়ার বাংলানিউজকে বলেন, গোলাপ গ্রাম জায়গাটি অন্যসব জায়গার থেকে আলাদা। এখানে এলে দেখা যায় চারপাশে শুধু গোলাপের সমাহার। এ গ্রাম এখন প্রায় পর্যটন কেন্দ্রের মতো হয়ে গেছে। তাই দর্শনার্থীদের স্বার্থে এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা উচিত।

গোলাপ চাষি মো. গোলাম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমার পাঁচ বিঘা জমিতে গোলাপ গাছ আছে। প্রতিবছর ভালোই গোলাপ বিক্রি করি। যদিও আগের বছর গুলোতে আরও পরে গোলাপ বেচাকেনা হতো। কিন্তু এবার ডিসেম্বরের প্রথম থেকেই জমজমাট বেচাকেনা হচ্ছে।
প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়িয়ে ফুটে আছে গোলাপ।  ছবি: বাংলানিউজসারাদিন ফুল তুলে শ্যামপুর ফুল বাজারে বিক্রি করতে এনেছেন মাহফুজ। তিনি বলেন, দিন শেষে সবাই আমরা এ বাজারে ফুল নিয়ে আসি। বাজারে প্রতিটি ফুল পাঁচ থেকে সাত টাকা দরে বিক্রি করা হয়। এছাড়া ৫০টি ফুল দিয়ে বানানো আঁটি  বিক্রি হয় ২৫০ টাকা। আশা করি চলতি মাসে আমাদের ফুল বেশি বিক্রি হবে।

সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বিশেষ করে ডিসেম্বর মাসে দেশে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। তাই চাষিরা সারা বছরের লাভ এ সময় পুষিয়ে নেন। নভেম্বরে তারা ফুলের জমি পরিচর্যা করেন। ডিসেম্বরে চাষিরা ফুল তুলে বিক্রি শুরু করেন। আমরা ফুল চাষিদের সুবিধার জন্য পর্যাপ্ত চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, কৃষি বিপণনের পক্ষ থেকে বিরুলিয়াতে অ্যাসেম্বেল সেন্টার তৈরি করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখানে চাষিরা ফুল এনে কাটবে, প্রসেস করবে ও পরিবহনে তুলবে। এতে ফুল বেশি দিন মজুদ থাকবে। পচে বা নষ্ট হয়ে যাবে না।  

আর পরিবহনের মাধ্যমে ফুল বিক্রির জন্য অনেক দূরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলেও জানান কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৯
আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।