ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

টানা বৃষ্টিতে চাঁদপুরে আলুসহ মৌসুমি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২২
টানা বৃষ্টিতে চাঁদপুরে আলুসহ মৌসুমি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

চাঁদপুর: মাঘ মাসে হঠাৎ টানা বৃষ্টিতে চাঁদপুরে আলুসহ চলতি রবি মৌসুমে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে থেকে কয়েক ঘণ্টার ভারী বর্ষণে অধিকাংশ ফসলি জমির বীজতলায় পানি জমে গেছে।

জমিতে হেলে পড়েছে সরিষার গাছ।  

তাছাড়া নিচু জমির শাক-সবজির ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। পরপর দুই দফার বৃষ্টিতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন আলু চাষিরা। ডিসেম্বরে প্রথম দফা বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে থাকায় ২ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা সম্ভব হয়নি।

চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, লাভজনক ফসল এবং উপযোগী মাটি হওয়ায় নদী বিধৌত চাঁদপুর জেলায় আলু চাষ দিন দিন বাড়ছে। দেশে আলু চাষে চাঁদপুর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থ বছরের রবি মৌসুমে চাঁদপুরে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৫শ হেক্টর। এর মধ্যে বীজতলায় পানি জমে থাকায় আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা দুই মেট্টিক টন।

অন্যান্য বছরের মতো এবারও চাঁদপুরে কৃষকরা বুকভরা আশা নিয়ে আলু চাষ করেছেন। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই কৃষকরা সেই কাঙ্ক্ষিত ফসল ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে অসময়ের বৃষ্টি সেই স্বপ্ন যেন দুঃস্বপ্নে রূপ নিচ্ছে। এভাবে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন না হলে কয়েকদিনে আলুর জমিগুলো বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমামুদপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর ব্লকের কৃষক জামাল গাজী ও খোকন গাজী বলেন, গত বছর ৩০ নভেম্বর তারা ১১২ শতক জমিতে আলুর আবাদ করেছিলেন। এরপর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ঘূর্ণিঝড়ে আলুর বীজতলা পানিতে তলিয়ে যায়। তারপর ধার-দেনা করে পুনরায় আলুর বীজ লাগান। কিন্তু হঠাৎ করে বৃষ্টিতে আলুর বীজতলায় পানি জমে গেছে। এমনিতে আলুর দাম কম, তারপর হঠাৎ বৃষ্টিতে আলুর বীজতলার ক্ষতি হলো। এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবো কি না তা নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় আছি। এভাবে দু-তিনদিন আলু পানিতে ডুবে থাকলে সব আলু নষ্ট হয়ে যাবে। এতে করে বিপুল ক্ষতিতে পড়তে হবে আমাদের।

একই গ্রামের কৃষক আবুল কালাম বলেন, লাভ-লোকসান যা-ই হোক আলুর আবাদ তাদের প্রধান ফসল। গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবারও তিনি ৩৩ শতক জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। আর কয়েক দিন পর আলু উত্তোলন করার কথা। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টির কারণে বেকায়দায় পড়েছেন।

সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের কৃষক বিলাল হোসেন বলেন, এই বছর অনেক আশা নিয়ে আলু আবাদ করলাম। কিন্তু বৃষ্টির কারণে আলু একদম শেষ। এই ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে উঠব তা ভাবতে পারছি না। এ অবস্থায় তাদের দাবি কৃষি বিভাগের মাধ্যমে সরকার যদি তাদের প্রণোদনা বা অন্য কোনোভাবে সহায়তা করেন, তবে তারা কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন।

চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নরেশ চন্দ্র দাস বাংলানিউজকে বলেন, ২০২১-২২ অর্থ বছরের রবি মৌসুমে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্য ৭ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। তবে ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি এবং ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে দুই দফায় বৃষ্টির কারণে আলু উৎপাদন কিছুটা বিঘ্ন হওয়ার আশঙ্কা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য ফসলেরও কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের মাঠপর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ চলছে। অচিরেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব। এই খাতে সরকার নানাভাবে কৃষকদের সহযোগিতা করছে। বৃষ্টিতে কৃষকদের ক্ষতি পূষিয়ে দিতে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে সরকারি কোনো সহায়তা পেলে তা আমরা যথা সময়ে পৌঁছে দেব।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুরে সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে চাঁদপুর সদরে ১ হাজার ৭শ হেক্টর এবং উৎপাদন ৩৫ হাজার ৮৮ মেট্রিক টন। মতলব উত্তরে ৬২০ হেক্টর এবং উৎপাদন ১২ হাজার ৭৯৭ মেট্রিক টন। মতলব দক্ষিণে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৭শ হেক্টর এবং উৎপাদন ৭৬ হাজার ৩৬৮ মেট্রিক টন। হাজীগঞ্জে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৭২০ হেক্টর এবং উৎপাদন ১৪ হাজার ৮৬১ মেট্রিক টন। শাহরাস্তিতে চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা ২০ হেক্টর এবং উৎপাদন ৪১২ মেট্রিক টন। কচুয়ায় চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৫শ হেক্টর এবং উৎপাদন ৫১ হাজার ৬শ মেট্রিক টন। ফরিদগঞ্জে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৯০ হেক্টর এবং উৎপাদন ১ হাজার ৮৫৭ মেট্রিক টন এবং হাইমচরে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১৫০ হেক্টর এবং উৎপাদন ৩ হাজার ৯৬ মেট্রিক টন।

চাঁদপুরে ১২টি হিমাগারে ৭০ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করার ধারণক্ষমতা রয়েছে। বাকি আলু হিমাগারের বাইরে থাকে। এর মধ্যে কিছু পরিমাণ আলু উৎপাদন মৌসুম থেকে বিক্রি হয়ে আসছে এবং বাকি আলু কৃষকগণ কৃষিবিভাগের পরামর্শে কৃত্রিমভাবে মাচায় সংরক্ষণ করা হয় বলে কৃষিদপ্তর জানায়।

বাংলাদেশ  সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২২
আরএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।