ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ধানকাটা শ্রমিকের মজুরি দেড় হাজার টাকা!

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫০ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২২
ধানকাটা শ্রমিকের মজুরি দেড় হাজার টাকা!

সিরাজগঞ্জ: টানা বর্ষণের কারণে চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলার পাকা বোরো ধান পানির নিচে ডুবে গেছে। ফলে ধান কেটে ঘরে তুলতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।

সেই সঙ্গে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়ায় কৃষকের ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাও বা শ্রমিক মিলছে তাদের প্রতি ঘণ্টায় মজুরি দিতে হচ্ছে ২৫০ টাকা। একেকজন শ্রমিক ৬ ঘণ্টা করে কাজ করেন।  

বুধবার (১১ মে) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলনবিল অধ্যুষিত তিনটি উপজেলার মাঠে মাঠে ধান পেকে সোনালী রং ধারণ করেছে। অন্য বছরগুলোতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধান কাটার শ্রমিক আসতো। বৈশাখের শেষ দিকে কৃষকের গোলায় ধান উঠে যেত। কিন্তু এবার চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাইরের শ্রমিকের উপস্থিতি একদম কম। ফলে তীব্র শ্রমিক সংকটে পড়েছে কৃষকেরা।  

অপরদিকে, টানা বৃষ্টির কারণে এসব অঞ্চলের বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে। তাড়াশে উপজেলাতেই প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির ধান ডুবে গেছে। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে মাঠের এসব পাকা ধান ঘরে তুলতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। খুব শিগগিরই ধান কাটতে না পারলে অতিবৃষ্টির ফলে স্বপ্নের ধান ডুবে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে কৃষকেরা। এদিকে পানির মধ্যে নেমে ধান কাটতেও নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। পানিতে জোঁকের উপদ্রবের কারণেও শ্রমিকরা নামতে চাইছে না। নানা কারণে চোখের সামনেই অনেক কৃষকের ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।  

তাড়াশ উপজেলার ধানকুন্টি গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান, মাধাইনগরের কার্তিক চন্দ্র, পৌর এলাকার মহারম আলী ও রায়গঞ্জের আমশড়া এলাকার কৃষক ফারুক আহম্মেদসহ অনেকেই জানান, অবাধে অপরিকল্পিত পুকুর খনন, খাল বন্ধ করার কারণে পানি প্রবাহ করতে পারে না। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই চলনবিলের বেশিরভাগ অঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ কারণে তাদের পাকা ধান পানিতে ডুবে রয়েছে। তার ওপর শ্রমিক সংকট থাকায় পাকা ধান কাটতে পারছিনা। শ্রমিক পেলেও প্রতি ঘণ্টায় তাদের দিতে হচ্ছে ২৫০ টাকা। এতে প্রতিবিঘা জমির ধান কাটা-মাড়াই করে ঘরে তুলতে খরচ হবে ৮-৯ হাজার টাকা।  

উল্লাপাড়ার আগরপুর গ্রামের কৃষক লেলিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের দিন থেকে টানা বৃষ্টিতে জমির ধান পানিতে নুয়ে পড়েছে। এখন পুরোদমে কাটা-মাড়াই শুরু হলেও পর্যাপ্ত শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে নুয়ে পড়া ধান কাটতে শ্রমিকেরা আকাশচুম্বী দাম চাইছে। আবাদের খরচ তো দূরের কথা, ধান বিক্রি করেও শ্রমিকের টাকা উঠবে না।

কৃষকেরা আরও বলেন, পানিতে ডুবে যাওয়ায় শুধু ধানের আগা কেটে আনতে হচ্ছে। ঝড়ে ও পানিতে ধান ডুবে থাকায় অনেক ধান ঝরেও গেছে। এদিকে খড় বিক্রি করে বিঘা প্রতি আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা পাওয়া যেত সেটা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।  

চলনবিলের মাঠে মাঠে অপরিকল্পিত পুকুর খননের কারণেই এমন জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেন কৃষকেরা।  

তাড়াশ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন্নাহার লুনা বাংলানিউজকে বলেন, এ উপজেলায় ২২ হাজার হেক্টরেরও উপরে বোরো ধান চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। শ্রমিক সংকট থাকায় কৃষক সমস্যায় পড়েছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের সকলকেই মেনে নিতে হবে। তবে কৃত্রিম দুর্যোগ সৃষ্টিতে যে জলাবদ্ধতা হয়েছে তা দ্রুত সমাধান করা হবে।  

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর বলেন, আমি গতকালই এখানে যোগদান করেছি। কতটুকো জমির ধান পানির নিচে তালিয়ে হয়ে আছে সে তথ্য জানার চেষ্টা করছি।   

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।