ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

হাওরে আমন চাষে নতুন দুর্ভোগ জলাবদ্ধতা

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২২
হাওরে আমন চাষে নতুন দুর্ভোগ জলাবদ্ধতা পানিতে তলিয়ে গেছে আমন ধানের জমি। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: গত দু’দিনের বৃষ্টিতে হাওর কাউয়াদীঘির জলাবদ্ধতায় মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার নিচু এলাকায় আমন ধানের চারা তলিয়ে গেছে। এতে গভীর উৎকণ্ঠায় রয়েছেন কৃষকরা।

তাদের অভিযোগ, কাউয়াদীঘি হাওরের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম কাশিমপুর সেচ পাম্প বন্ধ থাকায় এমনটা হয়েছে। তারা জানান, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে পাম্প হাউজের সেচ কার্যক্রম এবং পানি নিষ্কাশন গেট বন্ধ থাকায় গত ২ দিনের বৃষ্টিতে মনু নদী প্রকল্প এলাকায় প্রায় ২৫০ একর আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।

জানা গেছে, চলতি বছর ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে কাউয়াদীঘি হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন থাকায় মনু নদী প্রকল্পের ভেতরে থাকা দুই হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। লোডশেডিংয়ের কারণে পাম্প হাউজ কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত পরিমাণে সেচ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে না পারায় হাওর পাড়ের কৃষক ও সাধারণ মানুষ এখন চরম ক্ষুব্ধ।

কাউয়াদীঘি হাওরের জলাবদ্ধতাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সংগঠন হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটি এবং সাধারণ কৃষকদের আন্দোলনের মুখে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসন আগস্ট মাসের ১১ তারিখ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের সমন্বয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করলে পাম্প হাউজ কর্তৃপক্ষ নিয়মিত সেচ কার্যক্রম শুরু করে। যার ফলে দ্রুতই হাওরের পানি কমা শুরু হয়।

পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে কৃষি জমি চাষের আওতায় আসলে কৃষকরা আমন চাষে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এরই মধ্যে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়ে গেছে। প্রকল্পভুক্ত এলাকায় আমন চাষ এখনো চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে পাম্প হাউজের সেচ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় গত দুই দিনের বৃষ্টিতে হাওরে পানি বেড়েছে। ফলে বোনা আমন পানিতে তলিয়ে গেছে।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার জগৎপুর, জুমাপুর, রায়পুর, বিরাইমাবাদ, বুড়িকোনা, বড়কাপন, কচুয়া, একাটুনা, উলুয়াইল এবং রাজনগর উপজেলার মধুর বাজার, আমিরপুর, রক্তা, বানুরমহল, জালালপুর, বাগেশ্বর, বড়গাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।

এলাকার কৃষক আবাছ, আব্দুল আহাদ, সাবুলমিয়া ও বাগেশ্বর গ্রামের জমসেদ মিয়া, সাধন দেব জানান, দু’দিনের বৃষ্টিপাত ও হাওরের জলাবদ্ধতায় তাদের প্রায় দুইশ’ একর জমির বোনা আমন পানিতে ডুবে গেছে।

হাওররক্ষা সংগ্রাম কমিটির অন্যতম সদস্য রাজন আহমদ বলেন, আমন রোপন চলমান থাকা অবস্থায় সেচ কার্যক্রম বন্ধ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এখন অতি দ্রুত সবগুলো পাম্প সচল করে এবং পানি নিষ্কাশন করে কৃষকের কষ্টের ফসল রক্ষা করতে হবে। এতে কোনো অযুহাত দেখালে কৃষকের স্বার্থে আমরা আবারও রাজপথে আন্দোলন করব।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, কিছু কিছু জায়গায় ধান তলিয়েছে, পানি নামা শুরু হলে সেটা দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে। আশা করি আর বৃষ্টি না হলে সমস্যা হবে না। আমি নিজে কাশিমপুর পাম্প হাউজ দেখে এসেছি। গেট খুলে দেওয়া হয়েছে এবং পাম্পও চালু করা হয়েছে।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) এম. এ. হান্নান খান বলেন, আমরা গত মাসের ১০ তারিখ থেকে চলতি মাসের ১ তারিখ পর্যন্ত পাম্পের মাধ্যমে সেচ এবং গেট দিয়ে পানি নিষ্কাশন করে হাওরের প্রায় সাড়ে ৪ ফুট পানি কমাতে সক্ষম হই। কৃষি অফিসের সুপারিশের প্রেক্ষিতেই গত ১ সেপ্টেম্বর বিকেল থেকে সেচ কার্যক্রম এবং নিষ্কাশন গেট বন্ধ করা হয়। হাওরের পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমরা নিষ্কাশন গেট খুলে দিয়েছি এবং পাম্প চালু করেছি। এখন গেট দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে এবং পাম্প চালু আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২২
বিবিবি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।