ঢাকা: সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতিবিষয়ক মাসিক পত্রিকা ‘কালি ও কলম’ এর প্রতিষ্ঠাকালীন সম্পাদক, সাহিত্যিক আবুল হাসনাত স্মরণে ‘স্মারক বক্তৃতা’ অনুষ্ঠান হয়ে গেল ঢাকার বেঙ্গল শিল্পালয়ে। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যায় বেঙ্গল গ্যালারিতে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
সেখানে ‘সংস্কৃতির বিপন্নতা, সংস্কৃতির শক্তি’ শীর্ষক মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সংস্কৃতির অনেক সংজ্ঞাগত পরিবর্তন ঘটেছে। এ পরিবর্তন আমাদের দেশেও লক্ষণীয়৷ মুক্তিযুদ্ধ থেকে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন হয়ে ১৯ শতকের মিশ্রণে এবং উপনিবেশিমুখী কারণে আমাদের সংস্কৃতি গত ৩ থেকে ৪ দশকে কতটা না বদলে গেছে। সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের একটা সম্পর্ক আছে। আছে শ্রেণি ও পুঁজিরও।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, একুশ শতকের এ সময়ে ধর্মীয় উগ্রবাদ কতটা বিধ্বংসী হয়ে দাঁড়িয়েছে তা আমাদের এ উপমহাদেশ, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকার নানা অঞ্চল, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকালে বোঝা যাবে। পশ্চিমের উদারপন্থীরা এখন সংস্কৃতির সম্ভাব্য বিপন্নতা নিয়ে কথা বলছেন। অথচ যে পুঁজি ও উপনিবেশিক কর্তৃত্ববাদ এসব সৃষ্টি করেছে, সেসব নিয়ে তারা প্রশ্ন তোলেন না।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, হাসনাত ও আমি একই স্কুলের ছাত্র ছিলাম। পরে লেখালেখির সময় তাকে পেয়েছি সংবাদের সাহিত্য সাময়িকীতে কালি ও কলমে। হাসনাত নেই, আমারও লেখালেখি শেষ। কারণ তার আহ্বানেই আমার অধিকাংশ লেখাগুলো তৈরি করেছিলাম।
কালি ও কলমের সম্পাদক সুব্রত বড়ুয়া বলেন, কালি ও কলমের প্রতিষ্ঠাকালীন সম্পাদক আবুল হাসনাতের স্মরণ উপলক্ষে এ আয়োজনে নানাভাবে কথা বলার, ব্যাখ্যা করার, জানার সুযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্য দিয়ে নানা ধরনের জিজ্ঞাসারও সুযোগ পাওয়া গেছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক আবুল হাসনাতের স্ত্রী নাসিমুন আরা হক। তিনি শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। কালি ও কলম পত্রিকার সম্পাদক সুব্রত বড়ুয়াও শুভেচ্ছা বক্তব্যে আবুল হাসনাতকে স্মরণ করেন।
অনুষ্ঠানে লেখক ও সাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক, কবি সোহরাব হাসান, সাহিত্যিক ডা. মোহিত কামাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সাহিত্যিক আবুল হাসনাত ১৯৪৫ সালের ১৭ জুলাই পুরান ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। সাহিত্যে তার ছদ্মনাম ছিল মাহমুদ আল জামান। তিনি ২০২০ সালের ১ নভেম্বর প্রয়াত হন। তিনি সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতিবিষয়ক মাসিক পত্রিকা ‘কালি ও কলম’ এর প্রতিষ্ঠাকালীন সম্পাদক ছিলেন।
দীর্ঘ ২৪ বছর দৈনিক সংবাদের সাহিত্য সাময়িকী সম্পাদনা করা আবুল হাসনাত আমৃত্যু কালি ও কলমের সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। পাশাপাশি চিত্রকলাবিষয়ক ত্রৈমাসিক ‘শিল্প ও শিল্পী’রও তিনি সম্পাদক ছিলেন।
‘জ্যোৎস্না ও দুর্বিপাক’, ‘কোনো একদিন ভুবনডাঙায়’, ‘ভুবনডাঙার মেঘ ও নধর কালো বেড়াল’ আবুল হাসনাতের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। তার প্রবন্ধ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে সতীনাথ, মানিক, রবিশঙ্কর, জয়নুল, কামরুল, সফিউদ্দীন ও অন্যান্য।
শিশু ও কিশোরদের জন্য তিনি লিখেছেন ‘ইস্টিমার সিটি দিয়ে যায়’, ‘টুকু ও সমুদ্রের গল্প’, ‘যুদ্ধদিনের ধূসর দুপুরে’, ‘রানুর দুঃখ-ভালোবাসা’।
১৯৮২ সালে ‘টুকু ও সমুদ্রের গল্প’র জন্য আবুল হাসনাত অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার পান। ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান তিনি। ২০১৪ সালে তিনি বাংলা একাডেমির সম্মানসূচক ফেলো মনোনীত হন। ২০২০ সালের ১ নভেম্বর তিনি প্রয়াত হন।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২৩
এমকে/আরবি