ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (১৪) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (১৪) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন

১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিমাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

১৩তম কিস্তির লিংক
___________________________________


অধ্যায় চার

টেলিস্ক্রিনটা পাশেই, কিন্তু পাত্তা নেই উইনস্টনের। গজরাতে গজরাতে স্পিকরাইট যন্ত্রটি টেনে নিল, ফুঁ দিয়ে মাউথপিসের ধুলো সরালো, চশমা পরলো। এভাবেই শুরু হলো দিনের কাজ। ডেস্কের ডান দিকে রাখা নিউমেটিক টিউব থেকে চারটি কাগজের সিলিন্ডার বের করে একটা একটা করে প্যাঁচ খুলে ক্লিপে লটকালো।

খুপড়ির দেয়ালে তিনটি প্রকোষ্ঠ। স্পিকরাইট যন্ত্রের ডানে একটিতে ছোট নিউমেটিক টিউব। যার ভেতরে লিখিত বার্তাগুলো আসে। বাঁয়ের খোপটি অপেক্ষাকৃত বড়, সংবাদপত্রের জন্য বরাদ্দ। আর পাশ দেয়ালে, উইনস্টনের হাতের নাগালের মধ্যে অপর প্রকোষ্ঠের আয়তকার মুখ ইস্পাতের গরাদ দিয়ে শক্ত করে আটকানো। এটি অকেজো, নষ্ট কাগজের গন্তব্যস্থল। গোটা ভবনে এমন হাজার হাজার অথবা লাখ, লাখ প্রকোষ্ঠ রয়েছে। কেবল যে কামরাগুলোতে তাই নয়, বারান্দায়ও একটু পরপরই এমন প্রকোষ্ঠে ভরা। কী কারণে যেন এগুলোর নাম হয়ে গেছে ‘স্মৃতি গহ্বর’। যে যখনই জানবে কোনও একটি নথি ধ্বংস করতে হবে, অথবা যখনই কোনও একটি কাগজের টুকরো পড়ে থাকতে দেখবে তখন স্বয়ংক্রিয় কাজটিই হবে তা তুলে নিয়ে কাছের স্মৃতি গহ্বরে ফেলে দেওয়া। সেখানে ওটি গিয়ে পড়বে প্রবাহমান তপ্ত বাতাসে, যা উড়িয়ে নিয়ে ফেলবে মস্ত এক হাপরের ভেতর। এই মস্ত ভবনের কোনও এক গোপন স্থানে হা করে আছে সেই হাপর। যে চারটি কাগজ উইনস্টন খুলল সেগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল সে। প্রতিটিতেই এক কিংবা দুই লাইনের একটি করে বার্তা লেখা, সংক্ষিপ্ত সাংকেতিক ভাষায়। এগুলো নিউস্পিকের ভাষা নয়, তবে নিউস্পিকের শব্দের ব্যবহার রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ কাজে এই ভাষার ব্যবহার চলে।

এগুলোতে লেখা আছে:
টাইমস ১৭.০৩.৮৪ বিবি স্পিচ ম্যালরিপোর্টেড আফ্রিকা রেক্টিফাই
টাইমস ১৯.১২.৮৩ ফোরকাস্টস ৩ ওয়াইপি ফোর্থ কোয়ার্টার ৮৩ মিসপ্রিন্টস ভেরিফাই কারেন্ট ইস্যু।
টাইমস ১৪.২.৮৪ মিনিপ্লেন্টি ম্যালকোটেড চকোলেট রেক্টিফাই
টাইমস ৩.১২.৮৩ রিপোর্টিং বিবি ডেঅর্ডার ডাবলপ্লাসানগুড রেফস আনপারসনস রিরাইট ফুলওয়াইজ আপসাব অ্যান্টেফিলিং।

ভালোলাগার একটা হালকা আবেশে চতুর্থ বার্তাটি পাশে সরিয়ে রাখল উইনস্টন। শেষের এই বার্তাটি জটিল এবং দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। বাকিগুলো নিয়মমাফিক কিছু বিষয়। তবে দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে কতগুলো পরিসংখ্যানের তালিকা নিয়ে ফালতু খাটুনি আছে।

টেলিস্ক্রিনে পেছনের নম্বরগুলো ঘুরিয়ে ‘দ্য টাইমস’ এর পুরনো পত্রিকাগুলো বের করে নিল উইনস্টন। মিনিক কয়েক সময়, এর মধ্যে কাজ না সেরে ফেললে ওগুলো দ্রুতই নিউমেটিক টিউবে ঢুকে পড়বে। যে বার্তাগুলো এখন তার কাছে আছে এগুলোর ভিত্তিতে সংবাদপত্রটির পুরনো সংখ্যার সংশ্লিষ্ট খবর বা নিবন্ধে পরিবর্তন আনতে হবে। ওরা বলে শুদ্ধিকরণ। যেমন ধরুন, টাইমসের ১৭ মার্চের সংখ্যায় ছাপা হয়েছে, বিগ ব্রাদার তার আগের দিনের বক্তব্যে ধারণা ব্যক্ত করেছিলেন, দক্ষিণ ভারত যুদ্ধক্ষেত্র শান্ত থাকবে আর ইউরেশীয়রা হামলা চালাবে উত্তর আফ্রিকায়। কিন্তু বাস্তবে যা ঘটল তা হচ্ছে ইউরেশীয় হায়ার কমান্ড দক্ষিণ ভারতে হামলা চালালো আর উত্তর আফ্রিকায় কিছুই হলো না। এতে টাইমসের রিপোর্টের ওই অনুচ্ছেদে সংশোধনী প্রয়োজন হয়ে পড়ল। এমনভাবে সংশোধন হলো যেন বিগ ব্রাদার যা ভেবেছিলেন ঠিক তেমনটিই ঘটেছে যুদ্ধক্ষেত্রে। অথবা ধরুন ১৯ ডিসেম্বরের টাইমস সংখ্যায় প্রকাশিত ১৯৮৩ সালের শেষ তিন মাসের ভোক্তা সামগ্রীর শ্রেণিবিণ্যাস করে পূর্বাভাস প্রতিবেদনের ওপর তৈরি রিপোর্টের কথা। এটি ছিল একই সাথে নবম ত্রি-বার্ষিক পরিকল্পনার ষষ্ঠ কোয়ার্টারও। আজকের সংখ্যায় রয়েছে ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশের খবর, তাতে দেখা যাচ্ছে পূর্বাভাসে যা কিছু বলা হয়েছিল তার অনেককিছুতেই বড় বড় ভুল হয়ে গেছে। এখন উইনস্টনের কাজ হচ্ছে আনকোরা রিপোর্টের তালিকা আর পরিসংখ্যান ধরে পুরনো রিপোর্টের ভুলগুলো শুধরে দেওয়া।

তৃতীয় বার্তাটিতে ছোট্ট একটি ভুল যা শুধরে দেওয়া মিনিট কয়েকের কাজ। মাত্র গত ফেব্রুয়ারিতে প্রাচুর্য মন্ত্রণালয় থেকে একটা অঙ্গীকারনামা প্রকাশিত হয় (দাপ্তরিক ভাষায় নিঃশর্ত অঙ্গীকারনামা) যাতে বলা হয় ১৯৮৪ সালে চকোলেট রেশনিং কমানো হবে না। উইনস্টন নিশ্চিত করেই জানে এ সপ্তাহের শেষদিকে চকোলেট রেশনিং কমিয়ে ত্রিশ গ্রাম থেকে বিশ গ্রাম করার ঘোষণা আসছে। তাকে কেবল একটি কাজই করতে হবে তা হচ্ছে, ওই অঙ্গীকারনামার পরিবর্তে একটি সতর্কবাণী লিখতে হবে এই ভাষায় যে, এপ্রিলের কোনও এক সময় রেশন কমিয়ে দেওয়া প্রয়োজন হতে পারে।

একেকটি বার্তা নিয়ে উইনস্টন যখন কাজ করে তখন সে স্পিকরিটেন সংশোধনীগুলো দ্য টাইমসের মূল কপির সঙ্গে গেঁথে দ্রুত নিউমেটিক টিউবে ঢুকিয়ে দেয়। কাজটি শেষ হতে না হতেই চরম অবচেতনার মাঝেও বার্তার মূল কপিটিসহ সে নিজে যদি কোনও নোট নিয়ে থাকে সেগুলো সব দলামোচা করে দ্রুত স্মৃতি গহ্বরে ফেলে দেয় আগুন-বাষ্পের খাদ্য হিসেবে।

১৫তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।