ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (১৬) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (১৬) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন

১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিমাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

১৫তম কিস্তির লিংক

___________________________________

টিলোটসনকে ভালো করে চেনে না উইনস্টন। সে কী কাজ করে তাও তার জানা নেই। রেকর্ডস ডিপার্টমেন্টের লোকেরা তাদের কাজ নিয়ে কথা বলতে চায় না। লম্বা জানালাবিহীন হলে, দুই সারিতে ছোট ছোট কামরা থেকে অবিরাম কাগজের খসখসানি আর স্পিকরাইটে টানা কথা বলার ঝিমধরা গুনগুনানি ভেসে আসে। এই হলের ভেতর ডজন খানেক লোক তো হবেই যাদের এমনকি নামটা পর্যন্ত জানে না উইনস্টন। তবে প্রায় প্রতিদিনই বারান্দা ধরে তাদের হন্তদন্ত ছোটাছুটি দেখে, আর দুই মিনিটের ঘৃণা কর্মসূচিতে দেখা যায় চিৎকার চেঁচামেচিতে সামিল। পাশের কামরার ধূসরকেশীর কথা সে জানে, দিনের পর দিন মেয়েটি—বাষ্প করে দেওয়া হয়েছে—এমন মানুষদের নাম-ঠিকুজি খুঁজে বের করে চিরতরে মুছে দেওয়ার কাজেই ন্যস্ত। কাজটি তার মত আর কে-ই পারবে! কারণ বছর কয়েক আগে তার স্বামীকেই তো এমনভাবে বাষ্পায়িত করে দেওয়া হয়েছিল।

কয়েকটা খুপড়ি পরের খুপড়িতে শান্ত, বুদ্ধিদীপ্ত, স্বাপ্নিক চেহারার মানুষটির কথাও বলা যায়। নাম অ্যাম্পলফোর্থ। কান ভর্তি চুল, বিস্ময়কর গানের গলা। আর কাজটি হচ্ছে যেকোন কিছুর বিকৃত রূপ দেওয়া। কবিতার পংক্তিমালা যদি আদর্শবিরোধী হয়, আর তা যদি কোনও কারণে সংকলনে রেখেই দিতে হয় তাহলে সেগুলো বিকৃতরূপ পায় অ্যাম্পলফোর্থের হাতে। এই হলে, জনা পঞ্চাশেক, বা তার কমবেশি লোক কাজ করে—যা মূলত বিশাল জটিলতা ভরা রেকর্ডস বিভাগের একটি উপ-বিভাগ মাত্র।

পেছনে, উপরে, নিচে আরও ঝাঁকে-ঝাঁকে কর্মী কল্পনাতীত লাখো কাজে ন্যস্ত। রয়েছে বিপুল সংখ্যক মুদ্রণ-দোকান, তাদের সহ-সম্পাদকের দল, দক্ষ মুদ্রাক্ষরিক, আর ভুয়া ছবি তোলার জন্য যন্ত্রপাতি সজ্জিত বিশাল স্টুডিও। এখানে একটি টেলি-প্রোগাম বিভাগ রয়েছে তাতে রয়েছেন প্রকৌশলী, প্রযোজক আর অভিনেতা-অভিনেত্রীর দল, যাদের বাছাই করা হয় কণ্ঠ নকল করার দক্ষতার মাপকাঠিতে। রয়েছে একদল অভিসম্বদ্ধ করনিক যাদের কাজ হচ্ছে স্রেফ—যেসব বই আর সাময়িকী পাল্টে দিতে হবে—সেসবের তালিকা বানানো। বড় বড় গুদামঘর রয়েছে যাতে মজুদ হয় সংশোধিত নথিপত্র, আর রয়েছে লুক্কায়িত চুল্লি যাতে মূল কপিগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। এবং কোথাও বা অন্যখানে রয়েছে একেবারেই অজ্ঞাতনামা মস্তিষ্কধারীরা—যারা পুরো কাজটির সমন্বয় করছেন, আর নীতি রেখা তৈরি করে দিচ্ছেন যার ভিত্তিতে অতীতের কিছু কিছু বিষয় সংরক্ষিত হচ্ছে, কিছু করা হচ্ছে মিথ্যায়ন আর অন্যসব কিছুর অস্তিত্বই ঘষে ঘষে বিলীন করে দেওয়া হচ্ছে।

রেকর্ডস ডিপার্টমেন্ট, যা সত্যমন্ত্রণালয়ের একটি শাখামাত্র, এর প্রাথমিক কাজ কিন্তু এই অতীতকে পুনর্গঠন করা নয় বরং ওসেনিয়ার নাগরিকদের জন্য সংবাদপত্র প্রকাশ, চলচ্চিত্র নির্মাণ, পাঠ্যবই ছাপানো, টেলিস্ক্রিনের কর্মসূচি সম্প্রচার, নাটক, উপন্যাস তৈরি ইত্যাদি—যাতে সন্নিবেশিত থাকবে মেনে নেওয়ার মত সকল তথ্য, নির্দেশনা আর বিনোদন। মূর্তি নির্মাণ থেকে স্লোগান বানানো, কবিতার পংক্তি রচনা থেকে জৈব গবেষণা-বিশ্লেষণ, শিশুর বর্ণমালা পুস্তক থেকে নিউস্পিক অভিধান রচনা পর্যন্ত সবই তাদের দায়িত্ব। আর মন্ত্রণালয় যে কেবল দলের বহুমাত্রিক প্রয়োজন মেটাতে কাজ করে যাচ্ছে তাই নয়, নিচের স্তরে সর্বহারাদের উপকারে প্রায়োগিক সকল কর্মযজ্ঞের ভারও তাদের হাতে। সর্বহারাদের জন্য সাহিত্য, সঙ্গীত, নাটক আর বিনোদন নিশ্চিত করতেও ভিন্ন ভিন্ন বিভাগ রয়েছে।

এখানে ফালতু সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় যাতে খেলা, অপরাধ আর রাশিফল ছাড়া কিছুই থাকে না। সস্তা দরের যৌন উত্তেজক উপন্যাস, যৌনতায় ভরা চলচ্চিত্র তৈরি, আর আবেগস্পর্শী গীত রচিত হয় স্রেফ যান্ত্রিক পদ্ধতিতে, লিখনযন্ত্র বলে পরিচিত এক বিশেষ ধরনের ক্যালিডোস্কোপের ব্যবহারে। আরও একটি পূর্ণাঙ্গ উপ-বিভাগ রয়েছে নিউস্পিকে যাকে বলে পর্নোসেক, যা সবচেয়ে নিম্নমানের পর্নোগ্রাফি তৈরি করছে, সেগুলো আবার সিলকরা প্যাকেটে বাইরে যাচ্ছে। যারা এই কাজে জড়িত তারা ছাড়া পার্টির আর সকল সদস্যের জন্যই এসব দেখা নিষিদ্ধ।

উইনস্টন যখন কাজ করে যাচ্ছিল তখনও নিউমেটিক টিউব থেকে আরও তিনটি বার্তা বের হয়, ওগুলো স্বাভাবিক কিছু বিষয়ের ওপর, দুই মিনিটের ঘৃণা কর্মসূচির ঝামেলা আসার আগেই ওগুলো সেরেও ফেলে সে। আর ঘৃণা কর্মসূচি শেষ করে কামরায় ফিরে তাক থেকে নিউস্পিক অভিধান নামিয়ে নেয়, স্পিকরাইটটি একদিকে সরিয়ে রেখে, চশমার কাচ পরিষ্কার করে সকালের কাজে মনোনিবেশ করে।

১৭তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।