এক|
পইপই করে দেখি—নিটোল নিরুপম...এমন কাতরতায় চোখের খামারে জমে হলুদ প্রজাপতি, আর জণ্ডিসের আকাশে উড়ে বেড়ায় দ্বীপান্তরিত নীল চোখ! কুয়াশার স্বরে ফোটে ঝাঁক ঝাঁক জোনাকি—বেখাপ্পা হয়ে যাই বলে—অতিমানবের নেতৃত্বে নৃত্য তুলি পৃথিবীময়! সাম্রাজ্যের জ্যামিতিতে ঘুরিয়ে দেয় একশ আশি ডিগ্রি, দাঁড়াই তোমার ঊরুগর্ভে; আক্ষেপের ধু ধু মরুতে ভাসে ওয়েসিস হাওয়া, তারই অন্তঃসলিলার নদে মোহনার বাঁধনে নদীর আত্মহত্যা—রূপান্তরিত জীবনের উদ্ভাস! অগাধ সাঁতারে হিম-উচ্ছ্বাস! গহ্বরের ভেতরে ধানভানার অভ্যাস দিয়ে ধ্যান বাঁধি—গুম হয়ে যাওয়া আকুলতাকে ডেকে তুলি, দেখে—ইতিহাসের পরিহাস উড়ে যায় আদিগন্তের বিস্মৃত প্রান্তরে...স্মিতহাসি মুখে ওরা আবার আত্মহত্যারেই ভালোবাসে! লীন হয়ে যায় জীবন-মৃত্যুর এক নামে—তাই দেখে নির্দয় গোলাপ হয়ে যায়, বললে দোপাটিও—ইচ্ছে হলেই ছুটে চলে যাই মেয়েলি পৃথিবীকে ছেড়ে চাঁদের বুড়ির কাছে—সেখানে প্রাগৈতিহাসিক পৃথিবীর জাদুঘর—কান্নার মহাসমুদ্র ভ্রমিয়া ফিরে আসি প্রতিভূ; বার্তারা ছড়িয়ে গেলে চোখে অশ্রু ফুল—তার ময় ময় অঘ্রাণে অন্তরঙ্গতার চাষ—অঙ্গার প্রেমে অবতীর্ণ প্রকৃত মানুষের ইচ্ছা! সৃজনের শরীরে মালিনীর চাকর, কী যে সখি সখি কাম, সর্বস্বতায় শ্রমিক নেই—এক সত্যের নৃত্য! জীবন-জীবনের সংগত!! রঙের মুখপাত্রী—নিখোঁজ পুরুষ ডুমুরের ফুল! জরায়ুতে ঠিকানা পেয়েছে সব—বুঝবে কি হে, মাস্তুল ভাটিতে রেখে শোনো উজানের গল্প; ইস্কুল ইস্কুল বিদ্যে তোমার—তরকারিতেই দরকারি শেষ!...এরপর চোখে পিপাসা ধরলে—কুয়োর ভেতরে খুঁড় প্রজ্ঞার শিরা...সে ধারেকাছের গণিতেই সমুদ্রের ফলাফল নিয়ে ঢেউ খেলছে...‘সোনার অঙ্গ রঙ্গ তোমার নেচে নেচে যায় রে...সোনার অঙ্গ রঙ্গ তোমার নেচে নেচে যায় রে...’
দুই|
কামনার কল্কিতে ওড়ে জীবনের ভ্রমণ! স্নিগ্ধ ধূম্রকুণ্ডলী মুখের তন্ময় দোল—পূর্ণিমার মত নগ্ন হয়ে ছড়ায় আমলকী স্বাদ চোখের জ্যোতিতে; তাই দেখে ফণিমনসার কাঁটায় আগুর বসন্ত! নিরাশ্রয় বান অযোগ্যতার পাহাড়ের আড়ালে ডুবে ডুবে মরে, গুঞ্জন নাইকো—সভ্যতা বুকে নিয়ে সিন্ধু শুকিয়ে গেছে পশ্চিমে; ওমের পরিখা পাড়ে টোব্যাকো আগুন জ্বালাই—পাণ্ডুলিপিতে পাণ্ডুর রোজগার বয়ান, নিমখুন বাঁচন নিয়ে হেঁটে যায় সে প্রতীতিহীন বিপরীতগামী মাকালের ধড়ে, পাগলের মত পাগল নয় সে! তোয়াক্কায় তা দিয়ে পাওয়া যাবে কবিয়ানা কাঠামো—চিন্তার ভানে—গানের ‘গ’ নেই—এই আন ওই আন—অভাব আর অভাব! আশ্বিনের মত অপরিচিত মাসে—কোনও এক তারিখে চিঠির মত প্রেম এলো এবং সেই সব ডাকাতিয়া সময় গেলে, তৃষ্ণারা হারাল মৃগতৃষ্ণাতলে—বন্ধ্যা বৃক্ষের মত আমিও হয়ে গেলাম বৃহন্নলা...কিন্তু কী অবাক! জনান্তিকে পোয়াতি—একদা পৌষের দ্বারপ্রান্তে এক নতুন ভাষার শিষ্য জন্ম নিল, আর অমনি একটা অদ্ভুত জানালা খুলে গেল! আবার একটা নগ্ন নির্জন ছায়া হারিয়ে গেল—তার পর থেকে মাথার ভেতরে জানালা খোলা—আবার আস্তে আস্তে ছায়ার ভেতরে মাথা ফোটা—সেকি বিস্ময়! যখন পূর্ণ প্রকৃতি জন্মাল; ঈপ্সিতও ঈপ্সিত হলো! তার পর থেকে ভিড়ের ভেতরে নীরব রেলপথ...ইস্টিশনে ইস্টিশনে মিশে গেছে কামরুপ-কামাক্ষার সরণি...
তিন|
একটা পেলব হাওয়া এলো, তুবা তাতে ছড়িয়ে দিয়েছে মূর্ছনার গন্ধ—তুরী বাজছে...আমাদের উনুনের ভাতে বড় সময়ের অভাব—দস্তখত নিয়ে গেছে জীবনের পরিশ্রম—এখন তারিখই ইমান, মাসের পর মাস জীবন-কামায়ের জড়জীব—স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে-নারী—এ মেশিন তাহার; প্রহরগুলোয় এক ভাব, এক রাগ, এক রঙা—স্বত্বজুড়ে অভিমান, খানখান করে তুলছে অস্তিত্ব; এক শব্দে অনেক কথা—এক কথায় অনেক শব্দ...রপ্ত করা আছে আমাদের মুখোশের তলে—যতই হতে চাচ্ছি হতে দিচ্ছে—কী এক ইচ্ছে বর পেয়েছি গঙ্গাদেবীর কাছে—গল্প-উপন্যাসের মত ছোট বড় ঝগড়া আছে জীবনে—অনেক পথ পেয়েছে সে পালাবার ছাড়া—পালাকার যে! জ্যোতির্ময় রাতে জপি জগদ্দল সুখ—অঘাত অ-ভাবহীন পুঁজির নাম দুঃখ—লোকসানের আরেক নাম লাভ, তা অভিধানে উঠল না—পৃথিবীর খুব কম কবিই ছন্দপতন ছন্দ শিখেছে—এমনকি হলফনামায় স্বীকারোক্তিমূলক কবিতা একটাও লেখা হয়নি! পরম্পরার নামে মুখস্থ গণনা—মতের সারিতে টানতে চোখ খুব কার্যকর—কিন্তু পিএইচডির মত শিং থাকলেও নেত্রপাত পড়তে কজন জানে? যেমন : যোগের চাইতে ভাগ অঙ্ক সহজ বুঝেনি ঘটে যাওয়া মানুষের ঘটনা—প্রশ্নের মত উত্তরের ভাগ্যে কখনও আকাল জুটল না—টিকে থাকার ত্যাজ্য নাম আপোস—কী আশ্চর্য কিছু না লিখলেই অনেকে মনে করে জন্মেনি! সব জ্ঞানের নাম পদার্থবিদ্যা দিলে ভুল হবার কথা না—মস্তিষ্কের একটা বড় অংশের নাম অস্বীকার—এটাও স্বীকার করা মায়াহরিণীর মত; ডুবে যাই বৈতালিক পৃথিবীর বেলা...
চার|
অমরাবতী তৃষ্ণার ভেতর মহীরূহ নাম নেয়া পরগাছায় পেয়েছি অমৃতের মত মাকাল—আমলকী আসক্ত পিপাসার মিষ্টি কিংবা ঘোলের ভেতর চেয়েছি লকলকে দুধের সর—গড়িয়ে দিয়েছে শরশয্যায়—অভ্যস্ত মুদ্রার ভেতরে দেদার ডিগবাজি...এ পিঠের এপিটাপে পাওয়া গেল না ওপিঠে যাওয়ার কোনও মুগ্ধবাণী—সূত্রের ভেতরে ধাঁধা—জাতিস্মর মনের এবারও পাওনা ‘প্রতিঘাত!’ পিপাসার ভেতরে একটা ক্ষম ও অক্ষম ডুবে যাচ্ছে—দিব্যি দিয়ে বলতে পারি, উত্তর দেবার মত অনেক দিন কোনও প্রশ্ন পাইনি—তবু তরিকার ভেতরে তরতরে তরু...কী রকম সুফলা মাতাল সুন্দর—এখন মৃত্যুর মত জীবন চাই, চাই ভূত ভূত অন্ধকার—ইন্দ্রিয়ের অভাবে অদ্ভুতভাবে নিও না—চোখে আমার অযাচিত ঋতুস্রাব—তারপর কি নয়নতারায় যৌবন নাচবে? কে দেবে এমন সুষম উত্তর—গোলামের সংবাদ থেকে জানা গেছে ‘বনশ্রীকে খুঁজে পাচ্ছি না’—ও ফুলওয়ালী হয়ে গেছে! আমিও আর ক্রেতা হতে চাই না—উপহার চাই—এই উপদ্রুত উপকূলে কে আছে ভাস্কর—অর্চনা দেব—সঞ্চার হব—এখনও দোটানা আছে আমার—মনকির-নকিরের সাক্ষ্য দিয়ে বলছি, হননের মধ্যেও আমি খনন করে জীবন জাগাতে পারি? আছে কি কেউ? বন্ধুর মত বন্দুক চাই, জমে থাকা বন্ধুর বারুদের আতশ জমেছে—আছে কি? না থাকলে অপেক্ষা করছে...আমার জন্য তোমাদের ফিরোজা পাথরের ঠাট্টা...
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
কৃষ্ণপর্ব | মুকুল মল্লী
কবিতা / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।