১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
৪২তম কিস্তির লিংক
___________________________________
বাতিটি সামান্য উঁচু করে ধরল বুড়ো, এতে গোটা কামরা নজরে এলো আর ঠিক তখনই উষ্ণ আলো লুটিয়ে পড়া কামরাটি যেন তাকে আহ্বান করে বসল। উইনস্টনের মনে হলো, সপ্তায় গোটা কয় ডলার খরচ করলে এটি ভাড়া নেওয়া যায়। এজন্য কেবল তাকে ঝুঁকি নেওয়ার সাহসটুকুই সঞ্চার করতে হবে। ভয়াবহ এক জংলি ভাবনা, যা মনে আসার সঙ্গে সঙ্গেই বাতিল করে দেওয়া উচিত। কিন্তু এই কামরা যে তার ভেতরে এক ধরনের নস্টালজিয়া তৈরি করেছে, পিতৃপুরুষের কোনও এক অজানা স্মৃতি তার মধ্যে জাগ্রত করেছে। তার মনে হলো ঠিক এমনই একটি কক্ষে ফায়ারপ্লেসের পাশে হাতলওয়ালা চেয়ারে বসে আছে, চুল্লির ঘেরের ওপর দুটি পা তুলে রাখা, আর কেতলিতে ফুটছে গরম পানি, এমন একটি দৃশ্যকল্প তার অনুভবে ছিল। যেখানে সে সত্যিকার অর্থেই একা, সত্যিকারেই নিরাপদ, কেউ তার ওপর নজর রাখছে না, কোনও কণ্ঠ নির্দেশ দিয়ে চলছে না, কেবল কেতলির মৃদু ফট ফট আর ঘড়ির প্রিয় টিক টিক ধ্বনি ছাড়া আর কোনও শব্দই কোথাও নেই।
‘কোনও টেলিস্ক্রিন নেই!’ বিস্ময়ের বিড়বিড় উচ্চারণে কথাটি না বলে পারল না সে।
‘নাহ!’—বলল বুড়ো ‘কোনও কালেই বস্তুটি আমার ছিল না। ম্যালা দামি। আর আমার মনেও হয় না এর কোনও প্রয়োজন আছে। কোণায় ওই পা-ভাঁজ করা টেবিলটি দেখেছো? তুমি চাইলে পা ছড়িয়ে বসাতে পারো, ভাঁজ করেও রাখতে পারো। ’
অন্য কোণায় একটি ছোট বইয়ের বাক্স, আর উইনস্টনও ততক্ষণে ওটি দেখে এগিয়ে যাচ্ছে। ভেতরে ময়লার দলা ছাড়া কিছুই নেই। বই খুঁজে খুঁজে তা ধ্বংস করার কাজটি অন্যান্য জায়গার মত প্রোলদের কোয়ার্টারগুলোতেও হয়েছে। ১৯৬০ সালের আগে রচিত কোনও একটি বই ওশেনিয়ায় খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। তখনও বাতিটি উঁচু করে ধরে, বুড়ো দাঁড়াল একটি গোলাপকাঠের ফ্রেমে বাঁধা ছবির সামনে। এটি বিছানার ঠিক উল্টোদিকে, ফায়ার প্লেসের অপর পাশে ঝোলানো।
‘এই পুরোনো ছাপায় যদি আদৌ তোমার কোনও আগ্রহ থাকে’—হেয়ালিপনার উচ্চারণ বুড়োর।
উইনস্টন উল্টো দিকে এগিয়ে গেল ছবিটি পরীক্ষা করতে। স্টিলে খোঁদাই করা আয়তাকার জানালা বিশিষ্ট ডিম্বাকৃতির একটি ভবন, সামনে একটি ছোট টাওয়ার। ভবনের চারিদিক রেলিং ঘেরা, আর পেছনের শেষভাগে একটি মূর্তি বসানো। কিছুক্ষণ ধরে ছবিটি দেখল উইনস্টন। অস্পষ্টভাবে মনে হলো, এমন দৃশ্য সে আগে দেখেছে, তবে ঠিক মনে করতে পারল না।
‘ফ্রেমটি দেয়ালে সেঁটে দেওয়া’—বলল বুড়ো, ‘কিন্তু আমি বলছি, স্ক্রু খুলে ওটা আমি তোমায় দিতে পারব না। ’
‘ভবনটি আমার চেনা’—অবশেষে বলল উইনস্টন। ‘এটা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এটি বিচারালয় প্রাসাদের বাইরে সড়কের ঠিক মাঝখানে ছিল। ’
‘ঠিক বলেছো। আদালত ভবনের বাইরে ছিল। এতে বোমা মারা হয়েছিল—কত সালে মনে পড়ছে না, তবে অনেক বছর আগে। একসময় এটি ছিল গির্জা, নাম ছিল সেইন্ট ক্লেমেন্ট ডেইনস। আবারও ক্ষমা-প্রার্থনার ভঙ্গি তার হাসিতে, যেন, এমন কিছু বলার সচেতনতাই অপরাধ। তবে যোগ করল, ‘অরেঞ্জেস অ্যান্ড লেমন্স, সে দ্য বেলস অব সেইন্ট ক্লেমেন্টস!’
‘মানে কী?’ প্রশ্ন উইনস্টনের।
‘আরে—“অরেঞ্জেস অ্যান্ড লেমন্স, সে দ্য বেলস অব সেইন্ট ক্লেমেন্টস” এটা ছিল আমাদের ছেলেবেলার একটি ছড়া। কিভাবে এই ছড়া এলো মনে করতে পারব না, কিন্তু আমি জানি এখন আর এই ছড়া নেই। “হিয়ার কামস অ্যা ক্যান্ডল টু লাইট ইউ টু বেড, হিয়ার কামস অ্যা চপার টু চপ অফ ইওর হেড। ” এটা ছিল নাচের গান। দুজন হাত বেঁধে উপরে তুলে রাখত, আর অন্যজন নিচে দিয়ে যেত। আর যখন তারা “হিয়ার কামস অ্যা চপার টু চপ অফ ইওর হেড” বলত তখন দ্রুত হাত নামিয়ে আটকে ফেলত। ’
৪৪তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৮০১ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (৪৩) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
ধারাবাহিক উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।