১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
৪৩তম কিস্তির লিংক
___________________________________
একটা তালিকা দেখিয়ে বলল, ‘এগুলো বিভিন্ন গির্জার নাম। লন্ডনের সব প্রধান প্রধান গির্জার নাম পাবে। ’
উইনস্টন দেখছিল গির্জাটি কোন শতাব্দীর। লন্ডনের ভবনগুলোর বয়স মাপা বরাবরই কঠিন একটা কাজ। কোনওটি বড় বা সুন্দর হলে, আর তা দেখতে যদি অপেক্ষাকৃত নতুন মনে হয়, সেটা খুব সহজেই বিপ্লবের সময় নির্মিত বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর যেগুলো সন্দেহাতীতভাবেই পুরনো, সেগুলোকে বলে দেওয়া হবে মধ্য যুগের। কেউ স্থাপত্য থেকে ঠিক ইতিহাসটি আর জানতে পারবে না, বই থেকেই তা জানতে হবে। মূর্তি, ভাস্কর্য, স্মৃতি ফলক, সড়কের নাম—এমন যা কিছু অতীতকে নির্দেশ করতে পারে তা অতি সতর্কতায় প্রক্রিয়াকরণ হয়ে গেছে।
‘এটি যে গির্জা ছিল তা আমার জানা ছিল না’—বলল উইনস্টন।
‘এর অনেকগুলো এখনও আছে, সত্যিই আছে’—বলল বুড়ো, ‘তবে সেগুলো এখন ভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাহলেই বোঝো, ছড়া কি আর টিকে থাকবে? “অরেঞ্জেস অ্যান্ড লেমন্স, সে দ্য বেলস অব সেইন্ট ক্লেমেন্টস, “ইউ ও মি থ্রি ফার্দিংস, সে দ্য বেলস অব সেইন্ট মার্টিনস”—
যদ্দুর মনে করতে পারছি, আমার মনে হয় এমনটাই ছিল। ফার্দিং হচ্ছে ছোট দস্তার মুদ্রা, এখন যে সেন্ট দেখছো এমনই। ’
‘সেইন্ট মার্টিনস কোথায় ছিল?’—প্রশ্ন উইনস্টনের।
‘সেইন্ট মার্টিনস? সে তো এখনও আছে। এটি তো ভিক্টরি স্কয়ারে, পিকচার গ্যালারির পাশে। ওই যে সামনে পিলারগুলো ত্রিকোণাকৃতির, আর অনেক উঁচু একটা সিঁড়ি। ’
উইনস্টন জায়গাটি ভালো করেই চেনে। বিভিন্ন ধরনের প্রচারণামূলক বিষয়ের প্রদর্শনী চলে এখানে—রকেট বোমা, ভাসমান দূর্গের মডেল, শত্রুপক্ষের নিষ্ঠুরতা তুলে ধরে তৈরি মোমের মূর্তি ইত্যাদি।
‘বলা হতো, সেইন্ট মার্টিনস-ইন-দ্য-ফিল্ড’—বলল বুড়ো, ‘তবে আমি ওই অংশে একটি মাঠের কথাও স্মরণ করতে পারছি না। ’
ছবিটি কিনল না উইনস্টন। কাচের পেপারওয়েটের চেয়ে অনেক বেশি অসঙ্গতির বস্তু হবে এটি, আর ফ্রেম থেকে ছাড়িযে না নিলে এটি বাড়িতে বয়ে নিয়ে যাওয়াও হবে অসম্ভব। তবে সে বুড়োর সঙ্গে আরও কিছুটা সময় কাটাল। দোকানের সামনের নাম ফলক থেকে যে কেউ ধরে নেবে বুড়োর নামটি হবে উইকস—কিন্তু তার নাম মূলত চ্যারিংটন। মি. চ্যারিংটনের বয়স তেষট্টি আর এই দোকানের মধ্যেই তার গত ত্রিশ বছরের বসবাস। তখন থেকেই জানালার পাশে নাম ফলকে নামটি পাল্টে দেওয়ার কথা তার মনে রয়েছে কিন্তু এ পর্যন্ত আর তা করা হয়ে ওঠেনি।
যতক্ষণ তাদের কথা চলল ততক্ষণই উইনস্টনের মস্তিষ্ক জুড়ে থাকল বুড়োর সেই আধাআধি স্মরণ করতে পারা ছড়াটি। “অরেঞ্জেস অ্যান্ড লেমন্স, সে দ্য বেলস অব সেইন্ট ক্লেমেন্টস”, “ইউ ও মি থ্রি ফার্দিংস, সে দ্য বেলস অব সেইন্ট মার্টিনস। ” ব্যাপারটি কৌতূহলের, কিন্তু আপনি যা মনে মনে বলবেন বেলের শব্দে তো অবচেতন মনে সেটাই শুনবেন। হারিয়ে যাওয়া লন্ডনের সেই সব বেল হয়ত কোনখানে টিকে আছে, লুকিয়ে আর বিস্মৃত হয়ে। কোনও এক ভৌতিক চূড়া থেকে সে যেন শুনতে পাচ্ছে একের পর এক বেল বেজে চলার শব্দ। তবে যতটা মনে করতে পারে, বাস্তব জীবনে সে কখনওই গির্জার বেল বাজার শব্দ শোনে নি।
চার্লিংটনের কাছ থেকে এগিয়ে একাই সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামল সে, রাস্তায় পা ফেলার আগে বুড়োটি আর কাছাকাছি থাকুক তা চাইছিল না। এরই মধ্যে সে অবশ্য মনস্থির করে ফেলেছে, সুবিধাজনক বিরতি দিয়ে, হতে পারে মাস খানেক পরে, আরও একবার এই দোকানে আসার ঝুঁকি নেবে। সেন্টারে এক সন্ধ্যার অনুপস্থিতির চেয়ে মনে হয় বিষয়টি বেশি বিপদের হবে না। সবচেয়ে বড় বোকামি কিন্তু ডায়রিটা কেনার পর একই স্থানে আরেকবার যাওয়া, বিশেষ করে দোকানের মালিককে বিশ্বাস করা যায় কিনা তা নিশ্চিত না হয়েই। যাইহোক—!
৪৫তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (৪৪) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
ধারাবাহিক উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।