১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
৪৪তম কিস্তির লিংক
___________________________________
হ্যাঁ, আবারও তার মনে হল সে ওখানে ফের যাবে। আবারও সে এখানকার সুন্দর সুন্দর অপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনবে। সেইন্ট ক্লেমেন্ট ডেন্স’র ওই খোঁদাইকরা ছবিটি কিনে ওটি ফ্রেম থেকে ছাড়িয়ে, আলখেল্লার জ্যাকেটের নিচে ঢুকিয়ে তবেই বাসায় নিয়ে যাবে। মি. চ্যারিংটনের স্মৃতি থেকে বের করে আনবে কবিতার বাকি অংশটুকু। এমনকি উপরের তলার কামরাটি ভাড়া করার যে ক্ষণিকের ইচ্ছা জাগ্রত হয়েছিল সে ইচ্ছাটিও তার মনে আবার চাড়া দিয়ে উঠল। এসবের উত্তেজনা প্রায় পাঁচ সেকেন্ড ধরে তাকে বেপরোয়া করে রাখে, অতঃপর সে উদ্ভ্রান্তের মতই পা ফেলে ফুটপাতে। আর একটি সুর গুনগুন করতে থাকে:
অরেঞ্জেস অ্যান্ড লেমন্স, সে দ্য বেলস অব সেইন্ট ক্লেমেন্ট’স,
ইউ ও মি থ্রি ফার্দিংস, সে দ্য—
হঠাৎ তার হৃদয় বরফহিম হয়ে যায়, আর প্রসাবের বেগ চাপে। নীল আলখেল্লা পরা কেউ একজন ফুটপাতে নেমে এসেছে, দশ মিটারও দূরত্ব হবে না দুজনের। এবারও সেই ফিকশন ডিপার্টমেন্টের মেয়েটি, সেই কালোকেশী। আলো অস্পষ্ট কিন্তু চিনে ফেলতে কষ্ট হয়নি। মেয়েটি সরাসরি একবার তার চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলল আর ত্রস্ত পায়ে হাঁটতে শুরু করল, যেন সে তাকে দেখতেই পায়নি।
ক্ষণকয়েক চলৎশক্তি হারিয়ে ফেলেছিল উইনস্টন। এবার ডানে ঘুরল আর দ্রুত পায়ে এগুতো থাকল, একবারও মনে এলো না ভুল দিকে যাচ্ছে সে। ব্যাপারটা একেবারে পাক্কা। মেয়েটি যে তার ওপর গোয়েন্দাগিরি করছে, তাতে কোনও সন্দেহের অবকাশ থাকল না। সে অবশ্যই তাকে অনুসরণ করে এখানে এসেছে। পার্টির সদস্যরা যেখানে থাকে সেখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে, এই অন্ধকার সড়কে একই সন্ধ্যায় দুজনেরই এসে পড়ার আর কোনও বিশ্বাসযোগ্য কারণ থাকতে পারে না। এটাও একটা বড় বিষয়, মেয়েটি কি আসলে থট পুলিশের চর, নাকি নিতান্তই শখের গোয়েন্দাগিরিতে লিপ্ত। তবে সে যাইহোক, এতে কদাচই কিছু যায় আসে। সে তাকে নজরে রাখছে, এটাই যথেষ্ট। হতে পারে মেয়েটি তাকে সুঁড়িখানায়ও দেখে ফেলেছে।
একেই বলে কষ্ট করে হেঁটে চলা। কাঁচের পিণ্ডটি প্রতি পদক্ষেপে তার রানের ওপর আঘাত করছে, এতে সে প্রায় মনস্থির করেই ফেলেছিল ওটি ছুঁড়ে ফেলে দেয়। সবচেয়ে অসহনীয় হয়ে দেখা দিল পেটের ব্যথা। কয়েক মিনিট তার এও মনে হচ্ছিল, দ্রুত একবার টয়লেটে ঢুকতে না পারলে সে মরেই যাবে। কিন্তু এই এলাকায় কোনও গণশৌচাগার নেই। পরে অবশ্য পায়খানার বেগ চলে গেছে, তবে রেখে গেছে একটা পেট কচলানো ব্যথা।
ওটি ছিল একটা চোরা গলি। শেষ মাথায় গিয়ে উইনস্টন থামল। কয়েক সেকেন্ড ভেবেই পাচ্ছিল না, কী করবে। এবার উল্টো ঘুরল আর আবারও হাঁটতে শুরু করল। ঠিক যখন ঘুরছিল তখনই তার মনে হলো, মোটে তিন মিনিট আগে মেয়েটি তাকে অতিক্রম করে গেছে, সে যদি একটু দৌড় লাগায় তো ওকে ধরে ফেলতে পারবে। এতে সুবিধা হবে, এই নীরব এলাকায় যতক্ষণ থাকবে সে তার গতিবিধি অনুসরণ করতে পারবে, এরপর চাইলে একটা পাথর দিয়ে সে তার খুলিটি চুরমার করেও দিতে পারবে। তার পকেটে কাঁচের যে পিণ্ডটি রয়েছে ওটি এ কাজের জন্য যথেষ্টই ভারী হবে। তবে পুরো ভাবনাটি দ্রুতই বাতিল করল সে, কারণ এই মুহূর্তে শারীরিক পরিশ্রমের কোনও কাজ করার চিন্তাও তার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
সে দৌড়াতেও পারবে না, আর একটি ঘুষিও ছুঁড়তে পারবে না। উপরন্তু মেয়েটি যুবতী আর গাট্টাগোট্টা, সে-ই বরং উল্টো তাকে ঘায়েল করে ফেলবে। তার মাথায় এই চিন্তাও এলো, দ্রুত কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছে, বন্ধ হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত সেখানেই কাটাবে। তাতে ওই সন্ধ্যার কার্যক্রমের একটা আংশিক ব্যাখা সে দেখাতে পারবে। কিন্তু সেটাও ছিল অসম্ভব। ভীষণ এক অবসন্নতা তাকে পেয়ে বসেছে। এখন তার একটাই ইচ্ছা, দ্রুত ঘরে ফিরে যাওয়া আর শান্ত হয়ে আরাম করে বসা।
৪৬তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৯ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (৪৫) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।