১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
প্রথম খণ্ডের শেষ কিস্তি পড়তে ক্লিক করুন
___________________________________
অধ্যায় এক |
তখন মধ্য সকাল। কামরা ছেড়ে টয়লেটের দিকে যাচ্ছিল উইনস্টন। উজ্জ্বল আলোকিত লম্বা বারান্দাপথের উল্টোদিক থেকে আসছে একজন। সেই কালোকেশী মেয়েটি। ভাঙারি দোকানের বাইরে সেই সন্ধ্যায় তাদের দেখা হয়ে যাওয়ার পর চারদিন গত হয়েছে। কাছাকাছি আসতেই দেখা গেল তার ডানহাত ঝুলিয়ে বাঁধা। স্লিংয়ের কাপড়টি আলখেল্লার একই রঙের হওয়ায় দূর থেকে আন্দাজ করা যাচ্ছিল না। হতে পারে অতিকায় কেলিডোস্কোপে উপন্যাসের খসড়া তৈরির কাজের সময় মেশিনে হাত আটকে গিয়েছিল।
ফিকশন ডিপার্টমেন্টে এমন দুর্ঘটনা প্রায়শই ঘটে। ততক্ষণে তাদের দূরত্ব কমে চার মিটারের কাছাকাছি হবে, ঠিক তখনই আচমকা হোঁচট খেয়ে মেয়েটি উপুড় হয়ে পড়ল। ব্যথায় কুঁকড়ে উঠল সে। আহত হাতটাই পড়েছে নিচে। উইনস্টন একটু থামল। মেয়েটি ততক্ষণে হাঁটুতে ভর করে শরীরটাকে তুলে নিয়েছে। তার মুখমণ্ডল দুধ-হলুদ রঙ ধরেছে, ওর মুখটাকে এতটা লাল হয়ে উঠতে এর আগে আর কখনওই দেখেনি সে। চোখ তুলে মেয়েটি তাকাল উইনস্টনের দিকে। আর সে চেহারার অভিব্যক্তি বলছে, ব্যথার চেয়ে যেন ভয়টাই বেশি।
হৃদমাঝারে একটা কৌতূহলী আবেগ বয়ে গেল উইনস্টনের। তার সামনে এক শত্রু, যাকে সে হত্যা করতে চেয়েছিল, আবার তার সামনে এমনও একজন, যে আসলে এক মানব সন্তান, ব্যথাক্রান্ত। আর হতে পারে এবার তার হাড্ডিও ভেঙেছে। অজান্তেই মেয়েটির দিকে সাহায্যের মনোভাব নিয়ে এগিয়ে গেল সে। মেয়েটিকে ভাঙা হাতের ওপর পড়ে যেতে দেখে মনে হচ্ছিল সে নিজেও যেন ব্যথাটি অনুভব করতে পারছে।
‘ব্যথা পেয়েছো?’—জিজ্ঞাসা তার।
‘ও কিছু না। হাতে চাপ পেয়েছি। ঠিক হয়ে যাবে এখুনি। ’
কথায় মনে হচ্ছিল তার হৃদয় কাঁপছে। আর মুখমণ্ডল পুরোই ফ্যাকাশে।
‘ভেঙে ফেলো নি তো?’
‘না আমি ঠিক আছি। একটু ব্যথা পেয়েছি এই যা। ’
মেয়েটি তার অন্য হাতটি এগিয়ে দিল। আর উইনস্টন ওকে ধরে দাঁড়াতে সাহায্য করল। ততক্ষণে মেয়েটি তার নিজের রঙ কিছুটা ফিরে পেয়েছে, আর তাকে একটু ভালোও দেখাচ্ছিল।
‘এটা কিছু না’—আবারও বলল মেয়েটি। ‘কব্জির ওপর সামান্য চাপ পড়েছে। ধন্যবাদ কমরেড!’
এই কথা বলে মেয়েটি তার পথে হেঁটে এগিয়ে গেল, এমন একটা ভঙ্গি করে—যেন কিছুই হয়নি। পুরো ঘটনাটি ঘটতে আধা মিনিটও নেয়নি। অনুভূতিকে চেহারায় ফুটিয়ে না তোলা এখন প্রত্যেকেরই অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আর, এ কথা বলা বাহুল্য ঘটনার সময় তারা দুজন টেলিস্ক্রিনের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল। তারপরেও ক্ষণিকের বিস্ময়কে এড়িয়ে যাওয়া ছিল ভীষণ কঠিন, মাত্র দুই বা তিন সেকেন্ড, সে যখন মেয়েটির হাত ধরে টেনে তুলছিল ঠিক তখনই সে কিছু একটা তার হাতের মধ্যে গুঁজে দেয়। প্রশ্নাতীতভাবেই কাজটি পরিকল্পিত।
ছোট আর চ্যাপ্টা ধরনের কিছু একটা বলেই বোধ হচ্ছে হাতের মুঠোয়। টয়লেটের দরজা দিয়ে ঢুকেই বস্তুটি পকেটে চালান করে দিল সে। উপর থেকে আঙুলের মাথা আস্তে করে বুলিয়ে নিয়ে বোঝার চেষ্টা করল। ধারণা করল, ওটি চৌকা করে কয়েক ভাঁজে ভাঁজ করা এক টুকরো কাগজ।
প্রসাবখানায় দাঁড়িয়ে আবার আঙুল বুলিয়ে বুলিয়ে পকেটের ভেতরেই ভাঁজ করা কাগজটি অনুভব করার চেষ্টা করল সে। ধরে নিল এতে নিঃসন্দেহে কোনও একটা বার্তা লেখা রয়েছে। একবার মনেও এসেছিল কোনও একটা টয়লেটের ভেতরে ঢুকে লেখাটি পড়ে ফেলে। কিন্তু সেটা হতো সবচেয়ে ভয়াবহতম বোকামি। টেলিস্ক্রিন যখন সারাক্ষণই চোখ পাকিয়ে রয়েছে—তখন আপনি একটি কোনও স্থানকেও নিশ্চিত নিরাপদ ভাবতে পারেন না।
কামরায় ফিরল সে। বসল। কাগজের টুকরোটি খাপছাড়া একটা ভঙ্গিমায় ডেস্কের অন্য কাগজগুলোর মধ্যে ছুড়ে ফেলে রাখল। চশমা জোড়া পরে স্পিকরাইটটি কাছে টেনে নিল। ‘পাঁচ মিনিট’—নিজেকেই নিজে বলল উইনস্টন, ‘অন্তত পক্ষে পাঁচটি মিনিট!’ তার হৃদযন্ত্র তখন আতঙ্ক ধরিয়ে দেওয়ার মত করে বুকের ভেতর লাফাচ্ছে। বাঁচোয়া যে, হাতের কাজটি তখন জটিল কিছু ছিল না। বড় একটি পরিসংখ্যানের তালিকা সংশোধনী, যার জন্য গভীর মনযোগী হওয়ার প্রয়োজন নেই।
দ্বিতীয় খণ্ডের ২য় কিস্তি
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ১) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।