ওই দিনটি ছিল কুয়াশায় দ্রবীভূত, কক্সাবাজারের সেই দিনে ওরা বাসে চাপে। তখনও ওদের দেহে দেহে নুন-নুন গন্ধ ছিল।
একেবারের প্রথমসারির বামদিকের জানালার পাশে বসেছেন যে রমণী তার স্বর অনেক উচ্চলয়ের। তার ভিতর হাহাকারও বেশি। তার হাহাকার সাগরের নুন-নুন গন্ধের জন্য। এখনও যেন সেই গন্ধের ভিতরই নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে রেখেছেন তিনি। তার বাইরে এলে চারপাশের পাহাড়ের ওম লাগে, কুয়াশার ঢেউ এসে তাকে স্পর্শ করে। তারই লাগোয়া বেয়াই সম্পর্কের যে পুরুষটি বসে আছেন, তার টান ঢেউয়ের প্রতি। তিনি এখনও ঢেউয়ের ভিতর ডুবেই আছেন। নিজেকে সাগরের ঢেউয়ে চুবিয়ে রাখতে এখনও তার সাধ হয়। এমনকি পাশের রমণীকে সেই ঢেউয়ের সায়রে ভাসিয়ে দিতে তার মনপ্রাণদেহ ব্যাকুল হয়ে যাচ্ছে। জগতের যাবতীয় ব্যাকুলতাকে এক করতে তার মন চায়। তাদের ডানদিকে যে দুজন বসে আছেন, তারা অনেক চুপচাপ। তারা নির্জনতাপিপাসু। তারা জগৎটাকে একেবারে নীরবতার ভিতর সঁপে দিতে পারলে যেন বাঁচেন। ওদের একজন কক্সবাজারের সী-বীচের গহীন রাতের নির্জনতাকে ধ্যান করেই যাচ্ছেন। এ জীবন তার নীরবময়। যা কিছু আসে, তা নীরবতাকে আশ্রয় করেই আসে। জগতের যাবতীয় বাণীই তো নির্জনতামুখী। তাই তিনি তার জীবনকে নীরবতার কাছে বন্ধক দিয়েছেন যেন।
কিন্তু তাদেরকে সাক্ষী রেখে যেই মানুষটি হঠাৎ চিৎকার করতে থাকেন, তার পরিচয় আপাতত নেতাই থাক। তিনি এ দলের নেতা। এখনও তিনি গতকাল রাতের হ্যাংওভারেই আছেন। সেই হ্যাংওভার সৃজন করেছে পাহাড়ি এলাকার ফ্রেশ পাহাড়ি ওয়াইন দোচুয়ানি। তাই তার পেটের ভিতর এখনও ঘুরঘুর করে শব্দ করেই একটা ঝিমুনি ভাব দিয়ে রাখছে। তার ভিতর কী যেন কী হয়, সেই ওমেই হয়ত তিনি শব্দ করে হেসে উঠছেন। সেই শব্দটি হজম হওয়ার আগেই তাদের প্রতি চুপ থাকার ফর্মান জারি করছেন। হঠাৎ হেসে, হঠাৎই তিনি চুপও হয়ে যাচ্ছেন। এই বিষয়টা তাদের অনেকেই জানেন বোধ হয়, তাই তো তারা এ নিয়ে উচ্চবাচ্চ না করে মিটমিটিয়ে হাসছেন। তারা নেতার আচরণকে হজমও করছেন।
এইভাবে তাদের সময় যায়। তারা আসলে সময়ের ভিতর দিয়ে চলে। তারা সময়ের ভিতর বিচরণ করা এক-একটা সত্তা হয়ে সময় পার করতে থাকেন। এবং একসময় ওরা নাফ নদীর ঢেউয়ের গন্ধ নিতে নিতে আরও সামনে যান। তারা একসময় পানি-জাহাজের ঘাটে পৌঁছে যান। সেই এক বিষয়, সেই এক দৃশ্য বটে। তারা সবাই এখানকার আয়োজন দেখে তাজ্জব বনে যান। তাদের দুইদিকে আছে অনেক অনেক পাহাড়, সামনে পানি-জাহাজে ওঠার সাঁকো। চারটা সাঁকো চারটা পানি-জাহাজকে আরাধনা করে দাঁড়িয়ে আছে। তারা নেমেই পানি-জাহাজের টিকেট কেটে নেন। সবগুলো টিকেটই দলনেতার কাছে জমা থাকে। তিনি তখনও হয়ত তার নেশার ভাবকে ছাড়তে পারেন নাই। তার এলোমেলা পা-কে অনুসরণ করে করে তারা সামনে এগোয়। তারা এগোয় মানে তাদের সাঁকোটি পিচ্ছিল ভোবের মত তাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। তাদের জন্য নির্ধারিত জাহাজটি তারা দেখে। বিপুল অজগরের মত বিশাল এক হাঁ নিয়ে তাদের দিকে এটি তাকিয়ে আছে। তিন তলার পানি-জাহাজ। এর শরীরের ভিতর যেন অনেকগুলি প্রাণ জড়ো হচ্ছে। একসময় তাদের পানি-জাহাজে ভোওও করে সাইরেন বাজে। এখনই তাহলে তা স্টার্ট নিবে? অনেকেই চিৎকার করে ওঠে। প্রাণের আলাদা ছোঁয়া তাতে যুক্ত হয়।
তারা যাবে সেন্টমার্টিন। সেখানকার দ্বীপ দেখবে, জল দেখবে, জীবনের খেলা দেখবে তারা। তারা আর কী কী যে দেখবে তা এখনই বলতে পারছেন না। কারণ মানুষ সবকিছু আন্দাজ করতেও পারে না। আবার তারা সাগরের গন্ধ নিবে। তারা নতুন জীবনের দিকে যাবে। দলনেতা বারবার তাদের সাবধান করেন, তাদেরকে একসাথে থাকতে বলেন। যেন তারা এক পালের ভেড়া। তারা আলাদা হতে পারবেন না, তারা একেবারে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকেন যেন। দোতলার বড় লম্বা রুমটাতেই তারা ওঠেন,—তাদের পানি-জাহাজের মাঝখানের জল-বরাবর স্থাপিত সিটসমূহ ওরা একে একে হাতের টিকিটের সাথে সিট মিলিয়ে বসতে থাকেন। ওদের সিট মেলানোর এই তাড়াহুড়া অনেকেই দেখে। তারা কী কী যেন বলে। এবং তারা হাসাহাসি করে। তারা একে অন্যের সাথে চোখের ইশারায় কথা বলতে থাকে। তাতেও তারা হাসেই। একসময় দেখা যায় যে এই জাহাজের মানুষজনও হিহিহি করে হাসছে। তাদের নিপুণ হাসিতে ভ্রমণকাতর প্রত্যেকের নানান বর্ণ তৈরি হয়। তারা তাদের দেহের ভিতর দেহমাজারের সাধ পায়। তারা তাদের হাস্যকোলাহলের কারণ ব্যাখ্যা করে। আবারও তারা হাসতে হাসতে মানুষের আচরণ নিয়ে কথা বলে।
একটা মানুষ কতক্ষণ তাদের আসনে থাকবে, তা নিয়ে ওরা কিঞ্চিত গবেষণা করে। তারা এই মতই জানায় যে, মানুষগুলি আধা ঘণ্টার বেশি যার-তার সিটে থাকবে না। কেন থাকবে না—চোখের এমন ইশারাকে ওরা জলমুখি করে, নদীর স্বভাবে মাথা নাড়ায়, দূরে বহুদূরের পাহাড়ের মনোজাগতিকতা দেখায়। একজন বিজ্ঞের মতই তার মতামত জানাতে থাকে, সে বলে, মানুষের মাথাকে সমুদ্র নানা পদের গ্যাঞ্জামে ভরে দেয়। এই বলে সে নিজেই সমুদ্রপানে ব্যাকুল হয়ে তাকিয়ে থাকে। নিজেকেই যেন আবারও দেখে নেয়। সেই আউলাজাউলা হওয়া মাথা নিয়েই যেন অতগুলো মানুষ সমুদ্রের জীবন মাপে। এ দলটির ভিতরও ক্রমে ক্রমে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়, যে-জন চুপচাপ ছিলেন, কক্সবাজারের নীরবতা যে বহন করছিলেন, সে-ই উদার জলের গন্ধ পেয়ে হাউখাউ শুরু করেন। যেন নিজের জীবনটা জলের সাথে পিষে মিশিয়ে ফেলবেন। আর যে ছিলেন চরম চিল্লাহল্লার হাফেজ, বাসে বসে যেই মানুষটা দেড়-দুই ঘণ্টার জার্নিতে বাসের ভিতরটা গরম করে ফেলেছিলেন, সেই তিনি এখানে সাগরের অত জলের সাধ পেয়ে একেবারে চুপচাপ হয়ে গেছেন। নেতা এখানেও নেতাগিরিতে আছেন। তিনি প্রবাল দ্বীপের খবর নিচ্ছেন এখন। বার্মিজ সিগ্রেট কিভাবে কালেক্ট করা যাবে তার গবেষণা করছেন। তার কথা একটাই, দুই-চার দিন এখানে না থাকলে এখানকার রিয়েল টেস্টটা পাওয়া যাবে না। এইভাবে আসা-যাওয়া শুধু আসা-যাওয়াই হয়, এই বলে তিনি সকলকে ছাড়িয়ে একেবারে সারেঙের সামনে গিয়ে বসে সারা এলাকাটি নিজের মত করে দেখতে থাকেন।
তাদের জাহাজ ততক্ষণে সন্ন্যাসীর মেজাজ নিয়েছে। একমনে সামনের দিকে চলতে শুরু করেছে ও। পানির স্তর আর চেহারা মেপে মেপে নিজের যাতায়ত যেন পাকা করে নিচ্ছে। সারেং বা হেল্পার নয়, জাহাজের অন্তর্জগতেই কী যেন আছে। সারেং তার পানি-জাহাজের মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে করতে বার্মিজ চুরুটে আরামসে টান দেয়; সাগরের ঘোলাটে জলের দিকে ধোঁয়া ছাড়ে। জাহাজটি একসময় ঘোলাটে জল পেরিয়ে নীলজলে পড়ে। তাতে আরোহীসকলের স্বভাব যেন ক্রমে ক্রমে নড়ে ওঠে। সারা জাহাজে কেমন এক ভাব আসে। নির্জন শূন্যতার মত তা চারপাশে ছড়ায়। পানি-জাহাজের এ চলাচল নিয়ে গবেষণার শেষ নাই। এদের ভিতরই একজন বলে ওঠে, এইখানে জাহাজ অত নড়ে কেন? পানি-জাহাজের চরিত্র’র অত গণ্ডগোলের কারণ কী? এটা তো ভাবনার কথা! তবে কফিওয়ালা এই কথাকে পাত্তা দিল কিনা বোঝা যায় না, ও বহুগুণ শক্তিতে কফি বানায়, বিশ টাকায় প্রতিকাপ দিতে দিতে অতি মজায় বলতে থাকে, দইজ্যের ইক্কিনি দুশমনি নো-তাকিলে মজা নো লাগের। কথা তো সত্য, সমুদ্রের নিজের ভিতর নড়াচড়ার এইটুকু দুশমনি না থাকলে সমুদ নিয়ে অত মজা কী করে হয়!
এই কথা শুনে অনেকে হাসে, অনেকেই এতে ব্যাপক রহস্য আছে মনে করে চুপচাপ হতে হতে সাগরের রংবাজি দেখে। সাগরজলের ঢেউয়ে ঢেউয়ে অনেক অনেক কাণ্ডকীর্তি হয়,— মজায় মজা বাড়ে। তাদের ভিতর অনেকেই নানা বর্ণের নেশায় মজে। কারও কারও কাছে কক্সবাজারে অর্জিত নেশায় ভাটা পড়ে, জলের এমন স্বভাব থাকতে পারে তা তাদের দেহ-মনও জানত না। দুপুরের রোদে চকচক করতে থাকে ঢেউ, তাতে ইলিশের পেটের মত সমুদ্রের নীল ঢেউয়ের ওপর রোদের প্রলেপ দেখা যায়। একজন হোহো করতে-করতে তার বন্ধুকে ডাকে, সে তাকে তার ছবি তোলার কথা বলে। সারা শরীরটা ছবির ভিতর যেন সে আটকে দিতে চায়। তিনতলার হাইক্লাশ কামরার ভিতর ঘুরতে ঘুরতে কেবিনের ভিতর তারই বন্ধুকে ঢোকাতে ঢোকাতে মজায় খক্খক্ করতে-করতে একজন বলে, ‘বন্ধু তোমার মজা আমার মজার সাথে মিলাও। ’ তারা কেবিনের ভিতর ঢুকতে থাকলেও নিজেদের হাসি নিজেদের ভিতরই ঢুকানোর ধান্ধা করে। বার্মিজ এক জোয়ানকে একজন পাকড়াও করে; তাদের সিগ্রেট, চকলেট, কাপড় বাগানোর চিন্তা করে। কথা তাদের অনেক দিকেই বাঁক নেয়, একজন সাগরে সাগরে পাহারা ফেরি করে বেড়ানো কোস্টাল গার্ডের কথা বলে, তাদের রংঢং কী করে ফেস করা যায়, তা নিয়ে কেউ কেউ অনেক রঙের মতামত জানায়। একসময় এই করে করে, এইসব কথা বলে বলে সেন্টমার্টিন নামের দ্বীপে চলে আসে তারা। আবারও হৈরৈ করতে করতে সবাই মাটিতে পা রাখতে থাকে। তারা অনেক দিক ঘুরে। তাদের ভিতর অনেক কথা হয়। তারা অবশেষে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে প্রবাল দ্বীপের দিকে চলতে থাকে। সেই এক আরাম, সেই এক উত্তাপ; সেই এক কোলাহলও বটে!
আচ্ছা, এইখানে, প্রবাল দ্বীপের মায়ায় নিজেদেরকে সঁপে দেয়া যায় না? এর সাথে চিরস্থায়ী কোনও বন্দোবস্ত করে নিলে হয়! নেতা নানাদিকে মন দেন। তার মন এখন নারীর নেশায় পড়ে,—তিনি ভাবেন, কথা বলেন, তা আরও প্রলম্বিত করে জানতে চান, বার্মিজ মায়ামানুষ কালেক্ট করতে পারলে কী যে মজা হতো! সে মজা খোঁজার ভিতর জলের পর জলের ভিতর দিয়ে চলাচল দেখেন, মানুষের ভিতর মানুষের বদলে যাওয়া বোঝার চেষ্টা করেন। জলস্বভাব বলে আলাদা একটা স্বভাব এখানে যেন আছে। তাকেই ধরা দরকার। জলের ভিতর জলের কী যে সংসার আছে, সেই সংসার দেখতে চাইলে দুই-চারটা দিন জলের সাথে থাকা দরকার; জলের জীবন জলের মতন করে দেখা অত সোজা না! সেই জীবনটা আরাম করে দেখার জন্য জলের ভিতর কী যেন খোঁজেন তারা। এমনি নানাজন নানান পথ খোঁজার ভিতরই জলের স্বভাব দেখতে-দেখতে ওরা সেন্টামর্টিন পৌঁছে।
তারা অতঃপর একটা সেকেন্ডও বিনা কাজে খরচ না করে ছেঁড়াদ্বীপের দিকে সাম্পান-বোটযুগে চলতে থাকে। জলের ভিতর জলের হৃদয় স্পর্শ করতে করতে তারা একসময় প্রবালদ্বীপেও পা রাখে। এক-একটা প্রবাল যেন হাজার হাজার জীবনের সমাহার। পা পিছলে পিছলে চলতে থাকা দশ-বারোজনের দলটি প্রবালের ভিতর যেন তাদের আরেক জীবন দেখতে পান। মানুষ কত যে স্বভাব নিয়ে নিজের ভিতর অন্যের ভাব রচনা করে! তারা তখনকার প্রবালের প্রগাঢ় নীরবতা তছনছ করতে থাকেন, এক-একটা বিচিত্র চরিত্রের প্রবাল নিজেদের বাগে আনেন! এবং তারা উল্লাসে চৌচির হন। নিজেদের পরিচয় ভোলার মত এক-একজন অন্য জনকে দেখেন। দেখতে দেখতে আবারও তারা প্রবালের নীরিহত্বে আত্মনিয়োগ করেন। ওরা শ্যাওলা, জল, পলিমাটির ভিতর এক-একটা নির্জনতা দেখেন। ক্যালসিয়াম কার্বোনেট নামের পাথরের খোপে খোপে জীবনের গন্ধ নেন। ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি নেন তারা। সেই সংবাদ ফের মোবাইল ফোনে জন থেকে জনে ফেরি করেন বেড়ান তারা। তাদের গবেষণা বাড়ে, এই প্রবালের প্রধান দুশমন মানুষের কোলাহল, তারা নীরবতা চায়, তারা একাকীত্বের এবাদতে মশগুল থাকতে চায়। একজন গবেষকের সজীবতায় বলেন, একদিন মানুষের পায়ের, শরীরের, শ্বাসের গন্ধে এই দ্বীপ মরে যেতে পারে!
তারা একসময় ওইখান থেকে ফেরে,—সন্ধ্যার নরম ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা বাতাস তাদের ভিতর যেন মিশে যায়। বাতাস খানিক স্তব্ধ হয়, সাগরের জল থেকে নীল ক্রমে ক্রমে সরতে থাকে, সাগরের জলস্তম্ভ ক্রমে ঘোলাটে হতে হতে নাফ নদীর জলপ্রবাহের আদল নেয়। সূর্য তো ডুবে না, যেন এক-একটা জীবনকে জীবনকেই ডুবিয়ে ছাড়ে। তারা কতিপয় জীবনের ভিতর আরও কতক জীবনের জোড়া দেয় কি? তারা হয়ত নিজেদের ভিতর জলস্বভাবের নতুন জীবন নির্ণয় করে!
একসময় তারা সাগর-নদী-পাহাড় বেষ্টিত যৌথস্বভাবের বাইরে আসতে থাকেন। তারা যেন জল থেকে জলে ফিরছেন,—ফিরতে ফিরতে জলবেহুলার সন্ধ্যায় তারা স্থলমুখী হন। তারা আসলে ঘরমুখী হন,— তাদের এ ঘরমুখী হওয়ার তুমুল সাধনা আবারও নিজেদের দেহমাজারে আরেক ভাব পয়দা করে। শীত আসে-আসে সন্ধ্যার বাতাস বয় এখানে। সেই বাতাসের ভিতর জলস্বভাবের এক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। সেখানে কি নিজেদেরকে বদলে ফেলার নেশা থাকে? জলের স্বভাবের ভিতরই তারা অনেক অনেক কালের আলাদা আলাদা চেহারা পান। তারা সেই চেহারা হয়ে হয়ে জলের মিহিস্বরের ভিতর নিজেদের খুঁজতে ব্যাকুল হন।
সন্ধ্যার গাঢ় আলো ক্রমাগত ছাই রং নিতে নিতে ক্রমাগত যেন তা গলে গলে পড়ে। তারা আরও এগোয়—একটা সময় পরে তারা বাসের যন্ত্রকোলাহলের ভিতর পড়েন, এবং তাদের মনোজগতে দেহমাজারে একটা তীব্র কর্কশতা তৈরি হয়, কোত্থেকে যেন আসতে থাকা মার্চপাস্টের সতীব্র চিক্কুরে তাদের কী যেন হয়! তাদের চোখে তখনও এক-একটা করুণরেখার মতই পানি-জাহাজ ভাসে। তা থেকে নামার জন্য বাঁশের তৈরি লম্বা সাঁকোটিও যেন কোথায় মিলিয়ে যেতে থাকে। নাফ নদীর গন্ধের ভিতর তারা এগোয়। আবারও হয়ত তারা জলের স্বভাব দেখে, দেখতেই থাকে, হয়ত তাদের রক্তের ভিতর জলনির্ভর কতিপয় রেখা রয়ে যায়!
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০১৫