ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৪) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৪) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।
___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় খণ্ডের তৃতীয় কিস্তি
___________________________________

এর পরের সপ্তাহে তার জীবনটি হয়ে থাকল অবিরাম স্বপ্নময়। ঠিক পরের দিন যতক্ষণ সে ক্যান্টিনে ছিল ততক্ষণ মেয়েটির টিকিটিরও দেখা মিলল না। হুইসেল বেজে উঠলে ক্যান্টিন ছাড়তে হলো। মনে মনে ভাবল মেয়েটি বুঝি তার কাজের শিফট পাল্টে ফেলেছে। ওইদিন একবার দুজন দুজনের সামনে থেকে হেঁটে গেছে ঠিকই কিন্তু কেউ কাউকে দেখতে পায়নি। এর পরের দিন নিয়মিত সময়েই ক্যান্টিনে মেয়েটির দেখা মিলল, কিন্তু সঙ্গে আরও তিনটি মেয়ে, আর বসেছিল ঠিক টেলিস্ক্রিনের নিচে। এরপরে তিনটি অসহনীয় দিন কেটেছে। এই তিনদিনে একটিবারের জন্যও মেয়েটিকে দেখা যায়নি।

গোটা দেহ আর মন যেন এক ধরনের অসহনীয় সংবেদনশীলতায় আক্রান্ত। সব কিছুই যেন ফাঁকা ফাঁকা। প্রতিটি চলন, প্রতিটি বলন, প্রতিটি স্পর্শ, প্রতিটি শব্দ যা তার কানে পসছে, সবই যেন ব্যথা ধরিয়ে দিচ্ছে। ঘুমের মাঝেও মেয়েটির অবয়ব তার চোখ আর মন ছাড়া হয়নি। এই কদিনে ডায়রিটা ছুঁয়েও দেখেনি। স্বস্তি যদি কিছু পেয়ে থাকে তা ছিল ঠিক কাজের টেবিলে। এখানেই সে কিছুটা সময় ধরে হলেও মেয়েটিকে ভুলে থাকতে পেরেছে, কাজের চাপে চাপে অন্তত দশ মিনিট মেয়েটির অবয়বমুক্ত থেকেছে তার মন। মেয়েটির যে কী হলো তার কোনই কূল-কিনারা করতে পারল না। খোঁজে নামা নিতান্তই অসম্ভব। হতে পারে, ওকে বাষ্প করে দেওয়া হয়েছে, হতে পারে ও আত্মহত্যা করেছে, হতে পারে ওকে ওশেনিয়ার সীমান্তে বদলি করা হয়েছে, আর সবচেয়ে বাজে ও সবচেয়ে সম্ভাব্য দিকটি হচ্ছে, সে মত পাল্টে ফেলেছে আর তাকে এড়িয়ে চলছে।

পরের দিন মেয়েটি আবার উদয় হলো। বাহু স্লিংমুক্ত, কিন্তু এবার কব্জিতে প্ল্যাস্টার প্যাঁচানো। ওকে যে দেখতে পেল সেটাই বড় স্বস্তির। আর সে এতটাই আপ্লুত হয়ে পড়ল যে কয়েক সেকেন্ড তার দিকে দৃষ্টি ফেলে রেখে সেই অভিব্যক্তির প্রকাশ না ঘটিয়ে পারল না। পরের দিন মেয়েটির সঙ্গে কথা বলার সুযোগ প্রায় এসেই গিয়েছিল। যখন সে ক্যান্টিনে পৌঁছায় মেয়েটি তখন দেয়াল থেকে যথেষ্ট দূরেরই একটি টেবিলে বসা, আর পুরোই একা। দুপুরের খাবার তখনও পুরোপুরি শুরু হয়নি। ক্যান্টিনও ভরে ওঠেনি। খাবার নেওয়ার সারি এগুতে এগুতে উইনস্টন প্রায় কাউন্টারের কাছাকাছি, ঠিক তখনই ঝামেলা বাঁধল। সামনের একজনের অভিযোগ তিনি তার ট্রেতে স্যাকরিন ট্যাবলেট পাননি। এই নিয়ে বসচা জুড়ে দিয়েছেন। মেয়েটি তখনও একাই বসে। উইনস্টন নিজের ট্রের খাবার নিয়ে খাপছাড়া ভঙ্গিতে মেয়েটির টেবিলের দিকেই এগুচ্ছিল। যদিও তার চোখ ঠিক ওই টেবিলে নয়, দৃষ্টির গতিপথ বলছে যেন পেছনের টেবিলে স্থান খুঁজছে সে। মেয়েটির টেবিল তখন মাত্র তিন মিটার দূরে। দুই সেকেন্ডেই সামনে পৌঁছে যাবে। ঠিক তখনই পেছন থেকে কেউ একজন ডেকে উঠল, ‘স্মিথ!’ সে এমন একটা ভাব করল যেন শুনতে পায়নি। ‘স্মিথ!’ আরেকটু জোরে আরেকবার ডেকে উঠল কণ্ঠটি।

এবার নিরুপায়। সে ঘুরল। এক ঝাঁকড়া-চুলের ফালতু চেহারার যুবক নাম উইলশার, ভালো করে চেনেও না উইনস্টন, মুখে হাসি ছড়িয়ে সে-ই তাকে আহ্বান জানাল তার টেবিলের ফাঁকা চেয়ারটিতে বসার জন্য। ওকে প্রত্যাখ্যান করা নিরাপদ হবে না। একজন ডাকার পরেও তাকে উপেক্ষা করে আরেকটি মেয়ের টেবিলে বসে পড়া অসমীচীন, যেখানে মেয়েটি তাকে ডাকেও নি। এমন কিছু করলে সবারই চোখে পড়বে। বন্ধুসুলভ হাসি ছড়িয়ে সে বসে পড়ল। ফালতু চেহারার ঝাঁকড়াচুলো তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। উইনস্টনের মনে হচ্ছিল একটা কুড়োল দিয়ে টেবিলটির মাঝখানে কোপ মারে। ভাবতে ভাবতে কয়েক মিনিটেই মেয়েটির টেবিলও ভরে গেল।

তবে এটা নিশ্চিত, মেয়েটি তার দিকে উইনস্টনের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করেছে। আর হতে পারে এ থেকে সে কিছু একটা বুঝেও নিয়েছে। পরের দিন যাতে একটু আগে আগে যেতে পারে সে বিষয়টি মাথায় রেখেছিল। আর নিশ্চিতভাবেই, এদিনও মেয়েটি সেই একই টেবিলে আর স্রেফ একা। কিউতে তার ঠিক সামনের লোকটি বেটেখাটো আর শুধুই নড়াচড়া করছে। এ সেই মোমাছি-চেহারার লোকটি, চ্যাপ্টা মুখমণ্ডল, ছোট-কুতকুতে চোখ। উইনস্টন যখন তার ট্রেটি হাতে নিয়ে কাউন্টার থেকে ঘুরল, সে দেখল ওই বাটুল সোজা মেয়েটির টেবিলের দিকেই যাচ্ছে। আশার তরী বুঝি ডুবল এবারও। একটু দুরে আরেকটি টেবিলে আসন ফাঁকা, কিন্তু বাটুলের চেহারা থেকে পড়ে নিল এই ব্যাটা অপেক্ষাকৃত বেশি ফাঁকা টেবিলটিতেই আরাম করে বসবে। বরফহিম হৃদয় নিয়ে উইনস্টন এগুচ্ছে। মেয়েটিকে একা না পেলে কোনই ফায়দা নেই। ঠিক সেই মুহূর্তে সশব্দে পড়ে গেল বাটুল লোকটা। চার হাত পা ছড়িয়ে, আর তার ট্রে-খানা উল্টে স্যুপের ও কফির ধারা মেঝেতে গড়াল। ঘৃণাভরা দৃষ্টি মেলে উইনস্টনের দিকে তাকাতে তাকাতে উঠে দাঁড়াল, সন্দেহমাখা দৃষ্টি বলছে যেন সে-ই তাকে ল্যাং মেরে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু তাতে কিছুই যায় আসে না। মাত্র পাঁচ সেকেন্ডে হৃদযন্ত্রের ধক ধক ধক ধক শব্দ নিয়ে উইনস্টন বসে পড়ল মেয়েটির টেবিলে।

দ্বিতীয় খণ্ডের ৫ম কিস্তি



বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।