ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

হেইনরিশ হাইনের কবিতা | অনুবাদ: মেহেদী হাসান

অনুবাদ কবিতা / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫১ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৫
হেইনরিশ হাইনের কবিতা | অনুবাদ: মেহেদী হাসান

একটি পাম গাছ
___________________________________

      একটি বিচ্ছিন্ন দেবদারু, একা একা,
      উদীচীন পর্বতমালার ‘পরে,
      ঘুমিয়ে আছে হিম ও তুহিনে আবৃত
      সাদা আস্তরে সমস্তটা ঢাকা।

      তার স্বপ্ন একটি পাম গাছকে ঘিরে,
      যে বহু ব্যবধান পূর্বাঞ্চলে
      কাঁদে নিরিবিলি
      আতশী বালিতে একলাটি দাঁড়িয়ে।




মৃত্যু
___________________________________

      রাত্রির জুড়িয়ে যাওয়ায় আমাদের মরণ,
      আর জীবন দিনের জমানো জলে।
      ঝলসে উঠে অন্ধকার, আমি নিমজ্জমান,
      দিন তার আলোর উদ্ভাসে আমায় শ্লথ করে ফেলে।
 
      আমার মাথার ‘পরে গহন সবুজ পাতাদের আড়ালে
      গান ধরে তরুণ পাপিয়া।
      এটা গায় শুধুই প্রণয়ের গান,    
      সেই গান—আমি শুনতে পাই সুপ্তাবস্থায়।


গান
___________________________________

      রাত্রি বিছিয়ে আছে চোখের পাতায়,
      ঠোঁটে পিষ্টন বাজায় ক্ষিতি;
      প্রস্তময় হৃদয় ও ললাট সাথে নিয়ে
      শুয়ে আছি একলাটি মৃতের আলয়ে।

      কত দীর্ঘ সময় গুনে না শেষ হয়,
      সমাহিত এই সংকীর্ণ গুহায়;
      ধীরে ঘুম ভাঙ্গে এবং স্পষ্ট শোনা যায়
      মাথার ‘পরে কড়া নাড়ার মৃদু আওয়াজ।

       “তুমি কি জাগবে না, মোর হেনরী?
      শাশ্বত ঊষা দাঁড়িয়ে দরজায়;
      মৃতেরা জেগে উঠেছে পুনরায়,
      অবিনশ্বর সুখ খুবই সন্নিকট।

      আমি জাগতে পারি না, প্রিয়তমা,
      দিনের আলো বয়ে আনে অন্ধত্ব।
      তুমি তো জানো, অশ্রুতে ভরা আমার নেত্র
      কেঁদে কেঁদে কবেই ক্ষয়িত।

       “আমি চুমুতে ভরিয়ে দেবো ওগুলো, হেনরী,
      তোমার চোখ থেকে সরে যাবে রাত্রি।
      তুমি চেয়ে দেখবে নূরের মূর্তি
      এবং অপার্থিব জ্যোতি।

       “আমি জাগতে পারি না, প্রিয়তম,
      আমার রক্ত এখনও ঝরছে অবিরত
      তুমি একসময় যেখানে আমার অন্তঃকরণে
      জখম করেছিলে তোমার নৃশংশ শব্দ বানে। ”

       “আমার কম্পিত হাত স্পর্শিবে, হেনরী,
      তোমার মর্মদেশ আবার।
      সাথে সাথে থেমে যাবে রক্তমোক্ষণ,
      মুছে যাবে যন্ত্রণার সকল ধরন।

      আমি জাগতে পারি না, প্রিয়তমা,
      দেখো—আমার মস্তিষ্কে নিদারুণ রক্তপ্রবহণ!
      তুমি তো জানো, আমি নিজের ভেতরে দিয়েছি বুলেট সেঁধিয়ে  
      তুমি যখন গিয়েছিলে চলে দূর ব্যবধানে।

       “ওহ, আমার চুলে, প্রিয় হেনরী,
      তোমার ঘাতক ক্ষত ঢেকে দেবো,
      রক্ত স্রোতের মুখ ঘুরাব উল্টো দিকে;
      তুমি সম্পূর্ণ ও প্রগাঢ় হয়ে উঠবে। ”

       “রমণীয় ও মিঠা কণ্ঠে সে আমায় করে প্রার্থনা
      কোনমতেই তাকে এড়াতে পারি না;
      চেষ্টিত হই জেগে উঠতে ও অনুবর্তী হতে,
      এবং আমার ভালোবাসার ফুলকে বাহুবন্ধনে আটকাতে”

      তৎক্ষণাৎ আমার সকল ক্ষত  বিস্ফোরিত উন্মুক্ত, 
      মগজ ও হৃদপিণ্ড থেকে উদ্ভাসিত
      রক্ত প্রচণ্ড বেগে ধেয়ে এসে খড় স্রোতে ছোটে—
      তাকিয়ে দেখো, আমার অভ্যন্তর জেগে ওঠে!



বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।