১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ষষ্ঠ কিস্তি
___________________________________
অধ্যায় দুই |
গাছের শাখাতলে ফোঁটা ফোঁটা আলো আর ছায়ামাখা পথ ধরে হাঁটছে উইনস্টন। আর যেখানে শাখাগুলো দুই দিকে ছড়িয়ে সেখানে স্বর্ণসেতুতে পা ফেলে ফেলে এগুচ্ছে। বাঁয়ে বৃক্ষরাজির নিচে ধোঁয়াশা ছড়ানো মাটিতে ফুটে আছে নীলঘণ্টি (ব্লুবেলস) ফুল। মৃদুমন্দ হাওয়া চুমু খেয়ে গায়ে লেগে আছে। মে মাসের দ্বিতীয় দিন। বনের মাঝে আরও গভীর কোথাও থেকে ভেসে আসছে তিলা ঘুঘুর ডাক।
একটু আগেই এসে গেছে সে। পথে এতটুকু ঝামেলা হয়নি। মেয়েটির বর্ণনায় সবকিছু চোখে গাঁথা ছিল, ফলে স্বাভাবিক পথচলায় যেটুকু সংশয় থাকে এই পথে সে সংশয়ও সঙ্গী হয়নি। একটি নিরাপদ স্থানই বেছে নেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে মেয়েটির ওপরে ভরসা তার শতভাগ। লন্ডনের বাইরে গ্রামের দিকে একটু বেশি নিরাপদ, তেমনটা কেউ ভাবে না। টেলিস্ক্রিন নেই সে কথা ঠিক, কিন্তু গুপ্ত মাইক্রোফোন থেকে আপনার কথা রেকর্ড হয়ে যেতে পারে, চিনেও ফেলতে পারে, সে বিপদ পদে পদে। এছাড়াও একা একা যাবেন কিন্তু কারও নজরে পড়বেন না এমনটা হবার নয়। ১০০ কিলোমিটারের কম কোনও পথে যেতে হলে পাসপোর্ট এনডোর্স করা লাগে না, কিন্তু রেল স্টেশনগুলোতে টহলদারদের কড়া চোখ পড়ে থাকে। তারা পার্টি মেম্বারদের দেখে ফেললে আটকে দিতে পারে, ফালতু-অস্বস্তিকর প্রশ্নে জর্জরিতও করতে পারে। সে যাই হোক, উইনস্টনের পথে কোনও টহলদার বাধ সাধে নি, স্টেশন থেকে বের হওয়ার পর থেকেই পিছুপানে সতর্ক দৃষ্টি হেনে বারবারই দেখে নিয়ে নিশ্চিত হয়েছে, কেউ তার পিছুও নেয়নি।
ট্রেনে ঠাঁসাঠাঁসি করে যাচ্ছিল প্রোলরা, গ্রীষ্মের আবহাওয়ার ছোঁয়ায় তাদের মন ছিল ছুটির দিনের মত ফুরফুরে। কাঠের আসন পাতা যে বগিটিতে সে উঠেছিল, ওটি ঠাঁসাঠাঁসি হয়েছিল এক বিশাল পরিবারের সদস্যদের দিয়ে। ফোঁকলাদাঁতের প্রোপিতামহ থেকে শুরু করে এক মাসবয়সী শিশুটিও রয়েছে সে দলে। সবাই মিলে গ্রামে আত্মীয় বাড়ি যাচ্ছে বিকেলটা কাটিয়ে আসতে। আর এই ফাঁকে কালোবাজার থেকে কিছু মাখন নিয়ে আসবে সে কথাও উইনস্টন ওদের কাছ থেকেই জানতে পারে।
রাস্তাটি এখানে একটু চওড়া হয়েছে, এরপর মিনিটখানেক হাঁটতেই পায়ে চলা পথের কথা মেয়েটি বলে দিয়েছিল। দেখে মনে হলো জঙ্গল চিরে তৈরি এই পথে গবাদিরই গতায়ত চলে। তার কাছে ঘড়ি নেই, তবে এখনও তিনটা বাজেনি ধারণা করা যায়। নীলঘণ্টি ফুলেরা এখানে এতটাই ঘন হয়ে পথের মাঝে মাঝে ছড়িয়ে যে, কোনও কোনওটি পায়ের তলায় দলে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে উবু হয়ে ফুল তুলে নিচ্ছিল সে। সময়টাও কাটছে তাতে। তবে এও মনে ছিল, দেখা হলে এর একগোছা ফুল সে মেয়েটিকে দেবে। একসাথে বড় একগুচ্ছ পেয়ে গেল, নাকের কাছে টেনে মনমাতানো মৃদু গন্ধ নিচ্ছিল সে, ঠিক তখনই পেছনে একটি শব্দ পেয়ে শরীর বরফহীম হয়ে উঠল। আসলে উবু হওয়াতে নিজের পায়ের হাঁটু ভাঙার শব্দ সেটি। নীলঘণ্টি ফুল তুলতে তুলতে দুহাত ভরিয়ে ফেলল। মনে হচ্ছিল এতটা আহ্লাদভরে এমন কাজ আর কখনও করেনি। এবার মনে হলো মেয়েটিই বুঝি, অথবা হতে পারে কেউ পিছু নিয়ে পৌঁছে গেছে। মুখে বেচারা গোছের ভাব নিয়ে ঘুরে তাকাতে যাবে ঠিক তখনই কাঁধে একটি হাতের মৃদু স্পর্শ।
মুখ তুলে তাকাল সে। এবার মেয়েটি। মাথা ঝাঁকিয়ে চুপ থাকার জন্য ইশারা করল। জঙ্গল ঝোপঝাড় দুই হাতে দ্রুত দুদিকে সরিয়ে একটি সরুপথে তারা আরও ঘন জঙ্গলের ভেতর ঢুকে পড়ছে। অবশ্যই এর আগেও এই পথে এসেছে মেয়েটি। সে কারণেই পায়ের নিচে নরম কাদামাটি এড়িয়ে অভ্যস্ত পায়ে এগুচ্ছিল। আর তার পায়ে পায়ে উইনস্টনও। দুই হাতে ধরে আছে ফুলগুলো। প্রথম অনুভূতিটি ছিল স্বস্তির, কিন্তু যখন সে দেখতে পেল একটি সরু দেহ বল্লরী তুলে সামনে সামনে চলছে, উজ্জ্বল লাল পরিকর কোমরে আঁটো করে বাঁধা থাকায় নিতম্বের ভাঁজ স্পষ্ট, তখন একটা হীনমন্যতা চেপে বসল তার ওপর। বাতাসের মিষ্টতা আর গাছের পাতার শ্যামলিমাই যেন তাকে হতোদ্যম করে দিল।
দ্বিতীয় খণ্ডের ৮ম কিস্তি
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩২ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৭) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।