১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের সপ্তম কিস্তি
___________________________________
মে মাসের রৌদ্রে স্টেশন থেকে হেঁটে আসায় আগে থেকেই নিজেকে নোংরা, ঘিনঘিনে লাগছিল। সে যেন ঘরকুণো এক জন্তু, লন্ডনের নোংরা ধুলোয় যার ত্বকে ময়লার স্তর জমে আছে। তার মনে হলো এর আগে মেয়েটি তাকে দিনের প্রকাশ্য আলোয় খোলা আকাশের নিচে কখনওই দেখেনি। ভাবতে ভাবতে তখনই তারা সেই মৃত গাছটির কাছে পৌঁছাল, যেটির কথা মেয়েটি আগেই বলেছিল। গাছ ডিঙ্গিয়ে ঘন জঙ্গল সরিয়ে ঢুকে পড়ল সে, উইনস্টনও তার পিছু পিছু ঢুকল। আর আবিষ্কার করল প্রকৃতি এখানে কত সুচারুভাবে একটি ফাঁকা স্থান করে রেখেছে, যার চারিদিক ঘন জঙ্গলের বেড়া আর মাঝখানে তৃণাবৃত একটা ঢিঁবি। মেয়েটি চলা থামিয়ে ঘুরল।
‘আমরা পৌঁছে গেছি’—বলল সে।
একটু দূরত্বে থেকেই মেয়েটির দিকে তাকাল সে। তখনও কাছে ঘেঁষার সাহস কুলিয়ে উঠতে পারেনি।
‘পথে কথা বলতে চাইনি’—বলল মেয়েটি, ‘জানো তো পথে পথে গোপন মাইক পাতা থাকে। আমার মনে হয় না এখানে আছে, কিন্তু থাকতেও পারে। জঘন্য বস্তুগুলোর কোনও একটি ঠিক তোমার কণ্ঠস্বর চিনে ফেলবে। কিন্তু এখানে আমাদের কোনও সমস্যা নেই। ’
তখনও কাছে যেতে সাহস করছে না সে। ‘এখানে আমাদের কোনও সমস্যা নেই?’ বোকার মত একই উচ্চারণ তার।
‘হ্যাঁ, নেই। চেয়ে দেখ চারিদিকের গাছগুলো। ’
ছোট ছোট ধূসর বাকল আর শক্ত কাঠের অরণ্যবৃক্ষ। একদা এগুলো কেটে ফেলা হয়েছিল যা গুঁড়ি থেকে আবার গজিয়ে উঠেছে। একেকটি গাছ হাতের কব্জিসম মোটা হবে, ওগুলোই চারিদিকে ঘন খুঁটির জঙ্গল হয়ে আছে।
‘এখানে কোনও মাইক লুকিয়ে রাখার সুযোগ নেই, তাছাড়া আমি আগেও এসেছি। ’
একতরফাই কথা চালিয়ে যাচ্ছে মেয়েটি। ততক্ষণে সে তার কাছাকাছি ঘেঁষার একটু সাহস সঞ্চার করে নিয়েছে। মেয়েটি তখন তার ঠিক সামনে সটান দাঁড়িয়ে, মুখে মৃদুহাসি মেখে নিয়ে যেভাবে তাকিয়ে, তাতে তাকে কিছুটা বিস্মিতই ঠেকছিল, যেন তার জিজ্ঞাসা, এত নিস্তেজ কেন তুমি! মাটিতে মাদুর বিছিয়ে ছড়িয়ে আছে নীলঘণ্টি ফুল। ততক্ষণে ওরা আরও কাছাকাছি। মেয়েটির হাত হাতে তুলে নিল সে।
‘তুমি বিশ্বাস করবে, এ পর্যন্ত আমি তোমার চোখের রঙ কী জানতাম না’—বলল সে। নজরে এলো পিঙ্গল বর্ণের দুটি চোখ। ঠিক পিঙ্গল নয় যেন কালো পাপড়ির মাঝে পিঙ্গলের আবরণমাখা। ‘এবার তাহলে তুমি দেখলে আমি দেখতে ঠিক কেমন। কী মনে হচ্ছে আমার দিকে তাকানো যায়?’
‘হ্যাঁ, সহজেই। ’
‘আমার ৩৯। বিয়ে করেছিলাম, আলাদা থাকি কিন্তু মুক্তি মেলেনি। শরীরের ত্বকজুড়ে শিরাগুলো স্ফীত। গোটা পাঁচেক নকল দাঁত আছে। ’
‘ওতে কিছু আসে যায় না’—বলল মেয়েটি।
এইক্ষণে বলা মুসকিল কে আগে অন্যজনকে কাছে টেনে নিয়েছে, কিন্তু ততক্ষণ মেয়েটি উইনস্টনের বাহুতে। গোড়ার দিকে তার অনুভূতিতে বিস্ময় ছাড়া কিছু ছিল না। যৌবনবতী দেহখানি তার গায়ের সঙ্গে লেপ্টে আছে। ঘন কালোকেশে মুখ ঢাকা পড়েছে। আর হ্যাঁ! মেয়েটি তার মুখখানি উপরের দিকে তুলে রেখেছে, আর সে লাল ঠোঁটদুটো চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে। মেয়েটি তার বাহুদুটি দিয়ে তার ঘাড় জড়িয়ে রেখেছে, আর কখনও প্রিয়তম, কখনও জীবনের অমূল্য পাওয়া আর ভালোবাসার পাত্র বলে সম্বোধন করে চলেছে। এবার মেয়েটি মাটিতে শুয়ে, কোনও কিছুতেই বাধা নেই তার, যা চাও নিয়ে নাও এমন অভিব্যক্তি। কিন্তু সত্য বলতে কি, কোনও শারীরিক উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে না উইনস্টনের; কেবল ওই জড়িয়ে রাখার ভালোলাগাটুকু ছাড়া। তার অনুভূতি জুড়ে সন্দেহ আর গর্ববোধের মিশ্রণ। যা কিছু ঘটে চলেছে তাতে সে আনন্দিত, কিন্তু তার শরীরের কোনও চাওয়া নেই। আর আচমকাই মেয়েটির যৌবন আর সৌন্দর্যের মাখামাখি তার ভেতরে ভয় ধরিয়ে দিল—মেয়েদের সান্নিধ্যছাড়া বসবাসেই অভ্যস্ত সে—কিন্তু ভীত হয়ে পড়ার কারণটি বুঝতে পারছে না। মেয়েটি উঠে বসল আর চুলের মধ্যে ঢুকে পড়া একটি নীলঘণ্টি ফুল টেনে বের করে আনল। মুখোমুখি বসে দুই বাহুতে কোমর জড়িয়ে ধরল।
দ্বিতীয় খণ্ডের ৯ম কিস্তি
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৮) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।