১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের অষ্টম কিস্তি
___________________________________
‘কিছু মনে করো না, প্রিয়তম। তাড়াহুড়ার কিছু নেই। গোটা বিকেলটাই যে আজ এখানে কাটাব দুজন। তুমি কী বলো? লুকিয়ে থাকার জন্য অসাধারণ একটি জায়গা না? সেবার কমিউনিটি চাঙ্গা করার এক কর্মসূচিতে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলাম। তখন ঘুরতে ঘুরতে দেখা পাই এই জায়গাটির। কেউ যদি এসেও পড়ে তুমি অন্তত একশ’ মিটার দূর থেকেই শুনতে পাবে। ’
‘তোমার নাম কী?’ প্রশ্ন উইনস্টনের।
‘জুলিয়া। আমি কিন্তু তোমার নাম জানি। উইনস্টন... উইনস্টন স্মিথ। ’
‘কী করে জানলে?’
‘আমার ধারণা কোনও কিছু জেনে নিতে তোমার চেয়ে আমি একটু পটুই হব, প্রিয়তম। এবার আমায় বলো, সেদিন ছোট চিরকূটটি দেওয়ার আগে তুমি আমাকে নিয়ে কী ভাবতে?
মিথ্যা বলার কোনও চাপ অনুভব করল না সে। মনে হলো ভালোবাসার শুরুতেই ভয়াবহ কথাগুলো বলে ফেলা যায়।
‘তোমাকে দেখলেই আমার ভেতরে ঘৃণা জাগত’—বলল সে। ‘আমি চাইতাম, তোমাকে ধর্ষণ করে হত্যা করি। মাত্র দুটি সপ্তাহ আগেও আমার ইচ্ছা হচ্ছিল পাথর দিয়ে তোমার মাথাটি থেঁতলে দেই। তুমি যদি সত্যিই জানতে চাও, আমি বলতে পারি কল্পনা জুড়েই ছিল, তুমি আসলে থট পুলিশের কেউ হবে। ’
মেয়েটি হাসল, আনন্দ ছড়িয়ে ছড়িয়ে হাসল, যেন এই কথা বলার মধ্যে তার ছদ্মবেশের প্রতি এক ধরনের স্বীকৃতিই মেলে।
‘না থট পুলিশ না! তুমি আসলে সেটা ভাবতে, না?’
‘হ্যাঁ, সেটা হয়ত নয়। কিন্তু তোমার চেহারায়—বিশেষ করে তুমি যুবতী, ডাগর, আর স্বাস্থ্যবান, বুঝতেই পারো—আমি ভাবতাম সম্ভবত তুমি...’
‘তুমি ভাবতে আমি পার্টির ভালো সদস্যদের একজন। কথায় ও কাজে একদম খাঁটি। ব্যানারে, মিছিলে, স্লোগানে, খেলায়, কমিউনিটি চাঙ্গা করার কর্মসূচিতে সবখানে। আর তুমি এও ভাবতে সামান্য সুযোগ পেলেই আমি তোমাকে চিন্তা অপরাধী বলে নালিশ করে দেব, যাতে তোমাকে হত্যা করা হয়?’
‘হ্যাঁ ঠিক সেরকমই। অনেক যুবতী মেয়েই তো তেমন, তুমি ভালো করেই জানো। ’
‘যারা করে তারা হিংস্র’—বলল জুলিয়া।
আর বলতে বলতে কোমর থেকে জুনিয়র এন্টি সেক্সের লাল পরিকরটি একটি গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখল। এরপর কোমরে হাত রেখে যে মুখোভঙ্গি করল, তাতে মনে হলো কিছু একটা হঠাৎই মনে পড়ে গেছে। আলখেল্লার পকেটে জিনিসটির অস্তিত্ব টের পেল আর দ্রুতই বের করে আনল একটি চকলেট। অর্ধেক করে ভেঙ্গে এক টুকরো এগিয়ে দিল উইনস্টনের দিকে। চকলেটটি হাতে পাওয়ার আগেই এর ঘ্রাণ থেকে সে বুঝে নিল এটি সাধারণ কোনও চকলেট না। কালো চকচকে আর রুপালি কাগজে মোড়ানো। সাধারণ চকলেটগুলো ম্যাড়মেড়ে বাদামি রঙের আর মুখে দিলে ধোঁয়াটে গন্ধ আসে। কোনও এক সময় সেও এমন দারুণ স্বাদের চকলেট চেখে দেখেছে। গন্ধটা নাকে লাগার সাথে সাথেই তার স্মৃতিতে কিছু একটা নাড়া দিয়ে গেল কিন্তু সুনির্দিষ্ট করা গেল না। তবে বুঝল সেটি ছিল বড় কোনও ঘটনা আর ঝামেলারও।
‘পেলে কোথায়?’—প্রশ্ন উইনস্টনের।
‘কালোবাজারে’—উত্তর দিতে সময় নিল না সে। ‘আসলে আমি মেয়েই এমন। খেলাধূলায় ভালো। স্পাইজে আমি ট্রুপ লিডার। সপ্তাহে তিন সন্ধ্যা তুমি আমাকে জুনিয়র অ্যান্টি সেক্স লিগের স্বেচ্ছাসেবী কর্মসূচিগুলোতে পাবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমি লন্ডনময় ওদের ফালতু পোস্টার সেঁটে বেড়াই। মিছিলের সামনে ব্যানারের এক কোণা ধরে তুমি আমাকেই পাবে। মুখে হাসি মেখে কোনও কিছুতেই না করি না। ভিড়ের মাঝে চিৎকার করি। আমি বলতে চাই, নিরাপদ থাকার এটাই একমাত্র পথ। ’
চকলেটের প্রথম অংশ উইনস্টনের জিভের ওপরেই গলে গেল। অসাধারণ স্বাদ। স্মৃতিটা এখনও তার চেতনার কিনারায় এসে গা ছুঁইয়ে চলে যাচ্ছে। অনুভব করছে কিন্তু কোনওভাবেই আকার দিতে পারছে না। ঠিক কোনও কিছু দৃষ্টি সীমায় পড়ে আবার যেমন হারিয়ে যায় তেমনই। মন থেকে বিষয়টি ঝেড়ে ফেলল, মাথায় রাখল এটি আসলে কোনও ঘটনার স্মৃতি যা ফিরিয়ে আনা যাবে, কিন্তু পারছে না।
‘তোমার বয়স কম’—বলল উইনস্টন। ‘আমার চেয়ে দশ-পনের বছরের ছোট হবে। আমার মত লোকের মধ্যে এমন কী দেখলে যা তোমাকের আকৃষ্ট করল। ’
‘তোমার চেহারার মধ্যে কিছু একটা আছে। আমার মনে হচ্ছিল একবার চেষ্টা করেই দেখি। যারা ওদের দলের নয় তাদের চিহ্নিত করতে ভীষণ পাকা আমি। তোমাকে প্রথম দেখেই ধরে ফেলি তুমি ওই শুয়োরগুলোর বিরুদ্ধে। ’
ওদের বলতে পার্টিকেই বোঝানো হলো, মোদ্যাকথা ইনার পার্টির সবাইকে। যাদের কথা সে খোলামনে তাকে বলে চলছে—তাতে উইনস্টন অস্বস্তিই বোধ করছে, যদিও সে জানে অন্য যে কোনও স্থানের চেয়ে এখানে তারা নিরাপদেই আছে।
দ্বিতীয় খণ্ডের ১০ম কিস্তি
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪১ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৯) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।