ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

কেওড়া গাছের বাড়ি | কাজল শাহনেওয়াজ

কবিতা / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৫
কেওড়া গাছের বাড়ি | কাজল শাহনেওয়াজ

নোনা বাদাবন সৃজনে
মা বাবাদের রেখে ফরেস্টবিটে
নেচে নেচে তারা বেরোয়ে পড়েছে সুন্দরবন থেকে
ওরা কী নিৎসের মর্মবাণী নিজ কানে শোনে নাই?

নুনের পানিতে পলির ছড়াছড়ি
এখানে অতিকায় সবুজ পনিরে
কেওড়া গাছের বাড়ি
শাবাজপুর মোহনায়
নোনাগন্ধ তার শীতের পাখিরা টের পায়

ভোলা থেকে বাংলাবাজার, তারপর খায়েরহাট, বোরহানুদ্দি, উদয়পুর,
কুঞ্জেরহাট, ডাওরি, লালমোহন, কর্তারহাট, চরফ্যাশন

সব শেষে চর শশীভূষণ
মোটরের শেষ চাকা লেতরা ঘাটে
আকাশ হাঁটুর কাছে আসতে শুরু করেছে
হাসির শব্দ মুছে গেছে বদন থেকে
কপাল থেকে চন্দ্রবিন্দু গড়াতে শুরু করেছে
হাত ভরা বেড়িবাঁধ
অনন্ত সমুদ্রের বিপদে বুক গুরু গুরু
ঐ যে বিন্দু বিন্দু দ্বীপ দেখা যায়।

পড়ে ছিল বুঝি এলোচুল
কচ্ছপিয়াঘাটে বাংলা আকাশ
চওড়া কাঁকড়ার ডাকে
গলা ধরে অচেনা দুয়েন্দে
বুক ঝালে বসে থাকি
প্লেটে নিয়ে চুলেরডাটি ঝোল।



শ্যালো নৌকায় ছাতি ধরে কোথায় হে মন মাঝিরা
আমায় নিয়ে চল্লে কোন পানির টেম্পোতে
টুস্ট্রোক শব্দে যে কিছু বোঝার উপায় নাই।

বনেরও লম্বা হাতছানি
সন্ধ্যায় বাচ্চা বাচ্চা দ্বীপের চি চি চেঁচামেচি কান্না
বড় দ্বীপগুলি কতদূরে
কার কোলে উরুখোলে গাঙুরি গুঙুরি
ঐ যে কারা যায়, ওটা সমুদ্র পরীর ঝাঁক না?

পকেটে তো ছিল মন চিনি, তাই এখানে তে আজ দিনমনি
পথ থেকে তুলে নিল পিছুটান
কপালেতে বিষ তিল তিষি নাই, চোখে নাই আর কোনও উদ্বেগ
ইঞ্জিনের মনটা কি ফুরফুরে, নিৎসের নাই কোনও ডালভাত।

হাবাগঙ্গারাম চর কুকরি
দিনভোর ডাক দেয় চিলদের
মহিষের সৎ বোন দুধ দেয়
পনিরের হাঁক ডাক তাই তোলে গোয়ালে
গতকাল যারা ছিল উজানে
আজ তারা ঝিঁকিমিকি তারাদের হাত পা রাত জেগে গুনেগুনে ক্লান্ত।
গোলপাতা গোল নয়, চ্যাপটাও নয়
দূর থেকে মনে হয় চিনি উহারে
বাদা বনে ছৈলা দাঁত তার সবজে
সে নাকি বুদ্ধের নাম শোনে নাই।

ছোট চর কুকরি মুকরি
জেগে উঠে চোখ মেলে ছয় ঘণ্টা পর পর
ভাটা রেখে যায় পলি মাটি,
বাড়ছে বাংলার পরিসীমানা।

প্রথমে ধানশী, হারগোজা তারপর
পাখিরা বেড়ায় সকালে আর বিকালে
মাছেরা দেখে না কী করে তার জেলে
খুব ভোর যদিও, কুয়াশা কার্তিকে
ঘুমন্ত বনের মন্দ ফাঁকে
হাঁসের ডাকছে কিয়ের্কেগার্দ কিয়ের্কেগার্দ।

কুয়াশাটা নুন ছিল না কিন্তু খালটা ভরা নুন
ফর্সা হতে দেখা গেল সবুজ আগুন
ছৈলাগাছের গোল মনোরম ফল গো
উদবিড়ালের সাঁতার দেখে শ্বাসমূল তার জাগল।

খালের ঢালু পাড় না তো জীবনানন্দের বাড়ি
তোমাকে কী দরকার আজ জাঁ পল সার্ত্র।

নোনা আশ্বিনের ম্যানগ্রোভ আজ
মুচমুচে আর সকালবেলাডা ঝিকিমিকি
কুকড়ির ভোর ভাইয়া তুমি একাকীকির কিকি কিকি
আজ তা হলে চল যে চই নীল চখাদের চুচকি হাচাই
আয়তনে বাড়ব আর কান চিচুরাই আশনাই।



বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।