১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ১২তম কিস্তি
___________________________________
মেয়েটির আরেকটি অদ্ভুত দক্ষতারও পরিচয় মিলল। ঠোঁট না নাড়িয়ে অবিরাম কথা বলতে পারে সে। এভাবেই প্রায় একমাস দেখাদেখির পর স্রেফ একবার তারা একটি চুমু বিনিময় করতে পেরেছিল। সে রাতে ওরা একটি পার্শ্ব-সড়কে নীরবে হাঁটছিল (মূলসড়কে না থাকলে জুলিয়ার মুখ থেকে একটি শব্দও কখনও বের হয় না) তখনই কানে তালা লাগানো ভীষণ গর্জন শোনা গেল। মাটি কেঁপে উঠল, চারিদিক অন্ধকার হয়ে এলো। উইনস্টনের যখন সম্বিত ফিরল দেখল মাটিতে শুয়ে, কুঁকড়ে আছে, গা-ভর্তি আঘাতের ব্যথা। নিকটেই কোথাও রকেট বোমা পড়েছে। ঠিক তখনই কয়েক সেন্টিমিটারের মধ্যেই জুলিয়ার মুখটি দেখতে পেল সে, মৃত-সাদা রঙ ধরে আছে, যেন মুখটিতে চক ঘষে দেওয়া হয়েছে। এমনকি ওর ঠোঁট দুটোও সাদা। মনে হলো, মেয়েটি কি মরেই গেল! কাছে টেনে আনলো তাকে, আর আবিষ্কার করল সে এক জীবন্ত উষ্ণ ঠোঁটেই চুমু দিচ্ছে। এতে মেয়েটির ঠোঁটেও লেগে গেল সাদা পাউডারের মত কিছু একটা। আসলে তাদের দুজনেরই চেহারা পলেস্তারার ধুলোয় ঢেকে গিয়েছিল।
অনেক সন্ধ্যা গেছে, ওদের দেখা হয়েছে, পাশাপাশি দুজন হেঁটেছে দীর্ঘসময়, কিন্তু টহলদারদের আনাগোনা কিংবা মাথার ওপর হেলিকপ্টারের চক্করের কারণে সংকেতটি পর্যন্ত বিনিময় হয়নি। বিপদ যদি একটু কমও থাকে, দেখা করার সময় মিলিয়ে নেওয়া হয়ে পড়ে ভীষণ কঠিন। উইনস্টনের সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা ষাট, জুলিয়ার আরও বেশি। আজ ওর কাজের চাপ থাকে তো অন্যদিন উইনস্টনের। খুব কমই এমন হয়, একসঙ্গে দুজনের ফুসরত মেলে। বিকেলটা পুরো ফাঁকা, এমনটা জুলিয়ার ক্ষেত্রে প্রায় হয়ই না। বক্তৃতা আর বিক্ষোভের কর্মসূচিগুলোতে বিস্ময়করভাবে বেশি সময় দেয় সে। এছাড়াও জুনিয়র এন্টি-সেক্স লিগের লিফলেট-বইপত্র বিলি, ঘৃণাসপ্তাহের ব্যানার বানানো, সঞ্চয় বিষয়ক প্রচারাভিযানের জন্য চাঁদা তোলা, এমন হাজারো কাজের কাজী সে।
এর একটা মূল্য আছে, বলে সে, বলে এটাই সেরা কপটাবেশ। ছোট ছোট নিয়মগুলো যদি তুমি খুব করে মেনে চল, বড় নিয়মগুলো তখন অনায়াসে ভাঙতে পারবে। উইনস্টনকেও সে একটি সন্ধ্যায় বাড়তি কাজে লেগে পড়তে বাধ্য করেছে। গোলাবারুদের হিসাব রাখার এই কাজ পার্টির হিংসুটে স্বেচ্ছাসেবকরাই কেবল করতে চায়। সুতরাং সপ্তাহের একটি বিকেলের চার ঘণ্টা তাকে নিতান্তই অনিচ্ছায় অকেজো বোমা আর গোলাবারুদের ভাগাড়ে সামান্য আলোর খসখসে পরিবেশে কাজ করতে হয়, যেখানে টেলিস্ক্রিনের সঙ্গীত আর হাতুড়ি পেটার ঠক ঠক শব্দ একাকার হয়ে থাকে।
বিধ্বস্ত গির্জার সেই ঘণ্টাঘরে যেদিন দেখা হলো, সেদিন তারা এই অভিব্যক্তিহীন কথপোকথনের নির্যাস থেকে বুঝে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় যেটুকু ঘাটতি থেকে গেছে তা পূরণ করে নেয়। জ্বলজ্বলে রোদের এক বিকেল ছিল সেটি। ঘণ্টিঘরের বর্গাকার খুঁপড়িতে বাতাস যেন থমকে ছিল, আর ভীষণ তপ্ত। সঙ্গে মিশে ছিল কবুতরের বিষ্ঠার তীব্র গন্ধ। ধূলিমাখা, পাখির বিষ্ঠাভরা মেঝেতে বসে ওরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলে কাটিয়ে দেয়। একটু পরপর একেকবার একেক জন মাথা তুলে অ্যারোস্লিটের ছিদ্রপথে চোখ ফেলে দেখে নিচ্ছিল, কেউ এসে যায় কিনা।
জুলিয়ার এখন ২৬। আরও গোটা ত্রিশেক মেয়ের সঙ্গে একটি হোস্টেলে থাকে (সর্বদাই নারীর বোঁটকা গন্ধের মাঝে বাস! নারীকে ঘৃণা করিই কী করে! কথার মাঝে লঘুবন্ধনী দিয়ে টেনে টেনে বলল সে)। আর তার অনুমানই সত্য, ফিকশন ডিপার্টমেন্টে উপন্যাস লেখার মেশিনে কাজ করে সে। নিজের কাজ তার খুব পছন্দ, মজাও পায়। একটি বিশাল বৈদ্যুতিক যন্ত্র চালানো আর ঠিকঠাক করাই তার কাজ। যন্ত্রগুলোর সঙ্গে কাজ করার সময় হাতে কালি-ঝুলি লাগাতে সে ভালোই বোধ করে। একেকটি উপন্যাস কম্পোজ করা থেকে শুরু করে প্ল্যানিং কমিটি যে সাধারণ নির্দেশনাগুলো দেয় তা আর পুনর্লেখক দল যেভাবে তা চূড়ান্ত করে তার প্রতিটি ধাপে ধাপে কাজের ফিরিস্তি তার জানা। তবে এই নিখুঁত পণ্যে তার কোনও আকর্ষণ নেই। এগুলো পড়ার ব্যাপারেও নেই কোনও আগ্রহ। পাউরুটির জ্যাম বা জুতোর ফিতার মত একটি পণ্য ছাড়া বইকে আর কিছুই মনে করে না সে।
দ্বিতীয় খণ্ডের ১৪তম কিস্তি
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ১৩) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।