ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীসহ ২৫৮ বিদেশি বন্ধুকে ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে।
তবে সম্মাননা পদকে স্বর্ণ চুরির ঘটনার তদন্তকাজ চূড়ান্ত হবার পর প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত জানালে যথারীতি সম্মাননা দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বিগত সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতায় অবদান রাখায় বিদেশি বন্ধুদের সম্মাননা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
প্রধানমন্ত্রী এই সিদ্ধান্তের সুবাদেই ২০১১ সালের ২৫ জুলাই ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে মরণোত্তর এই সম্মাননা দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্নভাবে সহায়তা করা বিদেশিদের সম্মানিত করার প্রক্রিয়াও শুরু হয় এই সম্মাননার মধ্য দিয়েই।
এরপর আরও ছয়টি পর্বে সম্মাননা দেওয়া হয় বিদেশি বন্ধুদের। খসড়া তালিকা অনুযায়ী মোট ৫৯৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এই সম্মাননা দেওয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত সম্মাননা দেওয়া হয়েছে ৩৪০ জনকে। বাকিদের বিভিন্ন ধাপে সম্মাননা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হলেও সম্মাননা পদকে স্বর্ণ নয়-ছয় করার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে তা আপাতত স্থগিত করা হয়।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ হান্নান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় আছি। পদকের স্বর্ণ চুরির তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত হবে না। আর সম্মাননা দেওয়ার বিষয়টি এখন সরকারের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারক পর্যায়ে রয়েছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে এ বিষয়টি।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীকে সম্মাননা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয় মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় থেকে সারসংক্ষেপ তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব এম এ হান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি এখনও। সম্মাননা দেওয়ার বিষয়টি এখন আপাতত স্থগিত আছে।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ২০১১ সালের ২৫ জুলাই ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা’ দেওয়ার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্নভাবে সহায়তা করা বিদেশিদের সম্মানিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
এরপর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক নেতা, সামরিক কর্মকর্তা, বুদ্ধিজীবীসহ ৩৪০ জন ব্যক্তিত্ব ও সংগঠনকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে দেওয়া হয় প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে। দ্বিতীয় ধাপে দেওয়া হয় ৮৪ জন, তৃতীয় ৬১ জন, চতুর্থ ধাপে ৬২ জন, পঞ্চম ধাপে প্রণব মুখার্জীকে, ষষ্ঠ ধাপে ৭১ জনকে এবং সপ্তম ধাপে ৬০ জনকে।
বিগত সময়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, প্রণব মুখার্জী, ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান প্রয়াত লে. জে. জগজিৎ সিং অরোরাসহ ভারতের আলোকচিত্রী রঘু রাই পাকিস্তানের কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ রাজনীতিক মালিক গুলাম জিলানি, অধ্যাপক ও কলামিস্ট ওয়ারিস মির, যুক্তরাষ্ট্রের কবি অ্যালেন গিন্সবার্গকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় জানায়, স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের অক্টোবরের মধ্যে সাত পর্বে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ৩৪০ বিদেশি ব্যক্তি ও সংগঠনকে বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা ও মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা দেয়া হয়। সম্মাননার সময় দেওয়া ক্রেস্টে যে পরিমাণ স্বর্ণ থাকার কথা ছিল, তা দেওয়া হয়নি। আর ক্রেস্টে রুপার বদলে দেয়া হয় পিতল, তামা ও দস্তামিশ্রিত শংকর ধাতু।
এ ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় তদন্ত করে। মন্ত্রণালয়ের তদন্ত শেষে গত বছরের ১০ জুন ক্রেস্ট সরবাহকারী প্রতিষ্ঠান বনানীর এমিকনের মালিক মীর দাউদ আহমেদ ওরফে নাজিম এবং শান্তিনগরের মেসার্স মহসিনুল হাসানের মালিক মো. মোহসিনুল হাসানের বিরুদ্ধে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব এনায়েতউল্লাহ খান বাদী হয়ে মামলা করেন।
ক্রেস্টে স্বর্ণ কম দেওয়ার এ অভিযোগ ওঠার পর গত বছর ২৪ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়। আফসারুল আমিনকে আহ্বায়ক করে উপকমিটি গঠন করে।
মন্ত্রণালয় জানায়, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সরবরাহকারী কোম্পানিকে পরিশোধিত বিল পুনরুদ্ধার এবং নতুন ক্রেস্ট তৈরি করে বিদেশে বাংলাদেশের হাইকমিশন/রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে বিদেশি বন্ধুদেরকে প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
আর নতুন করে কাউকে সম্মাননা দেওয়ার ক্ষেত্রেও এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।
বাংলাদেশ সময় : ১৫৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৫