১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ১৩তম কিস্তি
___________________________________
ষাটের দশকের গোড়ার দিককার আগের কোনও স্মৃতিই তার নেই। একটি মাত্র লোককে সে বিপ্লবের আগের দিনগুলোর কথা খুব বলতে শুনত, সে তার দাদাভাই। তার যখন আট বছর তখনই দাদু হাপিস হয়ে যান। স্কুলে হকি দলের অধিনায়ক ছিল সে আর পরপর দুবছর শরীর চর্চায় ট্রফি জিতেছিল। স্পাইজে দলনেতা ছিল আর জুনিয়র এন্টি-সেক্স লিগে যোগদানের আগে ইয়ুথ লিগে শাখা-সচিবের পদে ছিল। দক্ষ হিসেবে অত্যন্ত সুনামের কারণে তাকে একবার ফিকশন বিভাগের উপ-বিভাগ পর্নোসেকেও কাজ দেওয়া হয়েছিল। সস্তা পর্নোগ্রাফি বানিয়ে প্রোলদের মাঝে বিতরণই যার কাজ। উপ-বিভাগটিতে যারা কাজ করে ওরা এর নাম দিয়েছে গোবর-ঘর (মাক হাউজ)। ওখানে এক বছর কাজ করেছিল। ‘পাছা চাপড়ানোর গল্প’ ‘মেয়েদের স্কুলে এক রাত’ ধরনের নাম দিয়ে বুকলেট বানিয়ে সিল করা প্যাকেটে ভরে তা যুবক প্রলেতারিয়েতদের জন্য কিনে ফেলার নাগালের মধ্যে পাঠানো নিশ্চিত করাই কাজ। আর যেন অবৈধ কিছু একটা কিনছে এমন একটা মনোভাব নিয়েই তারা এগুলো হরদম কেনে।
‘বইগুলো আদতে কেমন?’—কৌতূহলের প্রশ্ন উইনস্টনের।
‘আরে ভীষণ ফালতু। সত্যিকার অর্থেই বিরক্তিকর। মোটে ছয় পাতার কিন্তু ওগুলোই ওদের বড় বাণিজ্য। আমি কেবল কেলিডোস্কোপে কাজ করতাম। পুনর্লেখকদের দলে ছিলাম না। ওসব পর্নোসাহিত্য আমার আসে না, প্রিয়তম—আর ওজন্য ঠিক আমি নই। ’
বিস্ময়ের সাথে সে আরও জানলো এই পর্নোসেকে যারা কাজ করে তাদের কর্তাব্যক্তিরা ছাড়া সবাই তরুণী। তত্ত্বটা হচ্ছে, নারীদের চেয়ে পুরুষদের যৌনাকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণক্ষমতা কম। আর সে কারণে যে ঘিনঘিনে বিষয় নিয়ে তাদের কাজ করতে হয় তাতে তাদের নিজেদের জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে।
‘ওরা এমনকি বিবাহিত নারীদেরও নিতে চায় না, বলল জুলিয়া। মেয়েদের সবসময় এতটাই খাঁটি হয়ে থাকতে হবে। তবে, এখানে অবশ্য একজন আছে যে মোটেই খাঁটি নয়। ’
ওর প্রথম প্রেম হয় ষোল বছর বয়সে। প্রেমিকটি পার্টির সদস্য ছিল, বয়স ষাট। পরে গ্রেফতার এড়াতে আত্মহত্যা করে সে। ‘ঠিক কাজটিই করেছে’—বলল জুলিয়া, ‘নয়ত ওর স্বীকারোক্তি থেকেই ওরা আমার নামটি জেনে যেত। ’ এরপর আরও বেশ কয়েকটি প্রেম হয়েছে। জীবনটাকে সে সহজ করেই দেখে।
তুমি একটি ভালো সময় কাটাতে চাও তো; ‘ওরা’—মানে পার্টি চাইবে তোমাকে থামিয়ে দিতে; সুতরাং তুমি নিয়মগুলো ভাঙ্গো, যত পার তত ভাঙ্গো। বিষয়টিকে সে স্রেফ এমন করেই ভাবতে চায়, ‘ওরা’ তোমার আনন্দ ছিনিয়ে নিতে চাইছে, অতএব তুমি যা খুশি করে যাও, তবে গ্রেফতার এড়িয়ে। দলকে সে ঘৃণা করে, আর সে ঘৃণার প্রকাশ ঘটাতে সবচেয়ে ঘৃণিত শব্দগুলোই ব্যবহার করে। তবে তার মুখে সস্তা ও সাধারণ সমালোচনাগুলো শোনা যাবে না। তার নিজের জীবনে প্রভাব না ফেললে পার্টির কোনও মতবাদেই তার আপত্তি বা আগ্রহ নেই। উইনস্টন দেখেছে, দৈনন্দিন ব্যবহারে মিশে গেছে এমন কিছু শব্দ ছাড়া নিউস্পিকের ব্যবহার নেই জুলিয়ার কথা-বার্তায়। ব্রাদারহুডের নাম সে কখনওই শোনেনি, আর এর অস্তিত্ব আদৌ আছে বলে বিশ্বাসও করতে চায় না। পার্টির বিরুদ্ধে যে কোনও বিদ্রোহই হোকনা কেন—তা ব্যর্থ হতে বাধ্য, আর তা বোকামি ছাড়া কিছুই হবে না, এমনটাই মনে করে সে। সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে, এই সব নিয়মের মধ্যে থেকেই নিয়ম ভেঙ্গে চলা।
উইনস্টনের জানতে ইচ্ছা করে, এই মেয়েটির মত আরও কতজন আছে এই তরুণ প্রজন্মে যারা বিপ্লবের বিশ্বেই বড় হয়ে উঠেছে, আর পার্টিকে বদলানো যাবে না, আকাশসম পার্টির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাও যাবে না—এমন মনোভাব পোষণ করে অথচ তারাও এর নীতিকে ধোকা দিয়ে চলেছে, ঠিক খরগোশ যেমন কুকুরকে ধোকা দেয়।
দ্বিতীয় খণ্ডের ১৫তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ১৪) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।