সবার বেলায় নয়; মাঝে মাঝে আমার ক্ষেত্রে এরকমটা ঘটে।
সবকিছু ওলটপালট কিংবা গুবলেট হয়ে যাওয়া যারে কয়, সেরকম কিছু একটা।
অন্যকে মনে হয় আমি আর আমি নিজে হয়ে যাই অন্য।
সুনীল পড়তে গিয়ে আমার এরকমই হলো। মাইজগাও’র যে কাজলদিঘিটা ও ফেলে গিয়েছিল শৈশবে—আমিও ওটা চিনি। দুই পাড় জুড়ে ঘন গাছের সারি আর পাখির কলকাকলি আমিও তো কোথায় যেন রেখে এসেছি। ওঁর প্রথম আলো, সেই সময়, পূর্ব-পশ্চিম পড়তে পড়তে সত্যি বলছি আমি সুনীল হয়ে গেছি; হয়ে পড়ি মাঝে মধ্যে।
জুবায়ের আমার লন্ডন প্রবাসী বন্ধু; ঢাকায় এসে কিছুদিন আমার সঙ্গে ফ্ল্যাটে থেকে গেছে। এখান থেকেই, যে কদিন ছিল সে, ঘুরে দেখেছে পুরো বাংলাদেশ।
সব শুনে ও বলল, ‘সুনীলের মত তুইও তো ছিন্নমূল এক মানুষ। আমিও তাই। ’
‘কী রকম?’
‘তুই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাড়িটা বিক্রি করে ঢাকায় দামি ফ্ল্যাট কিনে বসবাস করছিস। তোর মনে তো নির্জন-নিরিবিলি সেই মফস্বল শহরটা ঠিকই রয়ে গেছে। ’
‘তুই?’
‘আমিও তো নোয়াখালীর সেই বজরা গ্রামের বাড়িটা জলের দরে বেচে দিয়ে চলে গেছি সুদূর লন্ডনের টেমস নদীর পাড়ে। বজরা গ্রামটা কি আমাকে টানে না ভাবিস বন্ধু?’
‘সুনীলের সাথে আমাদের তফাৎ নেই কিছু?’
জুবায়ের লন্ডনে অর্থনীতির খটমটে সব তত্ত্ব পড়িয়ে থাকে একটা স্কুলে। ওর ভাবনার মুদ্রাগুলো আগে চেনা গেলেও এখন এগুলো প্রায় বিদেশিদের মতই।
একটু পর জুবায়ের বলল, ‘দোস্ত, সুনীল বাধ্য হয়েছেন এদেশ ছেড়ে চলে যেতে। রাজনীতিবিদদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কারণে তাদের রিফিউজি হয়ে নিদারুণ জীবন বেছে নিতে হয়েছে। আর আমরা ভালো থাকার জন্যে দেশান্তরী হয়েছি। আমাদের বেলায় আমাদের উচ্চাশাটাই নিয়ামক হয়ে কাজ চালিয়ে গেছে। কিন্তু আবেগের জায়গাটা প্রায় একরকম। আমরা তিনজনই পুরনো দিনের কথা ভেবে কষ্ট পাই। নস্টালজিয়ার আঁচড় দেখ আমাদের তিনজনেরই অন্তর বয়ে বেড়াচ্ছে। ও লেখক, আমরা পাঠক। ’
এরপর সুনীলকে নিয়ে জুবায়েরের সঙ্গে আর কথা হয়নি। সাত-আট বছর হলো ও আর ঢাকায় আসে না। এর মাঝে ওর মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। জামাতা তামিল ব্যবসায়ী। ভালোবাসার টানে মেয়েটা আপ্রাণ চেষ্টা করছে ওদের সবকিছু আয়ত্তে নিয়ে আসতে। মাঝে মাঝে অতসী বাবার কাছে বেড়াতে এলে তামিল ভাষা আর সংস্কৃতির অত্যাচার সইতে হয় জুবায়ের আর ওর স্ত্রীকে, হাসিমুখে। ছেলেটা ডক্টরেট করবার পর এক সিলেটের মেয়ের সঙ্গে লগ্ন হয়ে থেকেছে কদিন। কালে-কালে সেটি আর টেকেনি। ছেলে বুবাই এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে ভেকান্ট হয়ে।
এসব সে আমাকে জানায় ই-মেইলে। আমি জানাই আমার কথা। আমার কথা তো আটকে থাকে মেয়ে, মেয়েজামাই আর একমাত্র নাতির গল্পে। মেয়ে আর মেয়েজামাই আমার ডাক্তার। পাঁচ বছরের নাতিটা আমাদের কোলেকাঁখে বেড়ে উঠছে। গল্প বলতে আমার-সুমাইয়ার জীবনে এখন এই নাতি। যা কিছু আমাদের আমোদ, আহ্লাদ আর আনন্দ সব তন্ময়কে ঘিরে।
জুবায়ের জিজ্ঞাসা করে, ‘তোর চাকুরি কেমন চলছে? বাড়িটা কমপ্লিট হলো? কী বই পড়ছিস? ব্যাংকের কেরাণী হয়েও তোর বই পড়বার নেশটা কাটল না। ঠিক রয়ে গেলি আগের মত। ’
এসব কথায় আমার এখন আর তেমন কিছু হয় না। কারণ, আমি বুঝে গেছি মানুষ আসলে খুব একটা বদলায় না। প্রথম ষোল-সতের বছরের ভেতর ও যা করে এর রকম-সকম বদল হলেও মূল মানুষটা ঠিক ওইরকমই থাকে। আমি বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র হয়েও সারাজীবন প্রেমে পড়ে রয়েছি সাহিত্যের। সুনীল বলতে আমি পাগল। ও যা বলে তা-ই ভাবি নিজের; মানুষটা এমন সেঁধিয়ে গেছে আমার ভেতর যে কোথাও ওর কথা শুরু হলে মনে হয় লোকজন বুঝি আমাকে নিয়েই গল্প বলছে। খুব আপ্লুত বোধ করি।
ওঁর কথা ভাবতে গেলে আমি এক অপূর্ব আবেশের ভেতর নিজেকে আবিষ্কার করি; এমনি গভীর ও গহীন তাঁর প্রভাব আমার ভেতর; অস্বীকার করি কী করে?
যে অব্দি মাইজগাও’র সেই কাজলদিঘিটা ওর কল্পনার রং দিয়ে মেশানো ছিল, আমি খুব উপভোগ করতাম। কাকচক্ষু জলের সেই দিঘিটাকে ঠিক আমিও খুঁজে পেতাম। এরকম অবিনশ্বর স্মৃতি তো কতই থেকে যায় আমাদের ভেতর। হারানো বাড়ির আঙিনায় বেড়ে ওঠা ডালিম বা তুলসিতলা নিয়ে কতজনের কতরকমের অবসেশন; আমার বন্ধু লন্ডন প্রবাসী জুবায়ের তো বজরা গ্রামের একটা কিশোরী মেয়েকে এখনও, এক-দু-পেগ পেটে পড়লে, ঠিকই খুঁজে পায় নিজের মাঝে।
‘ওর গায়ের রং ছিল কষ্টিপাথরের মত। কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি। পৌষের বিকেলবেলায় মেয়েটা ওদের বাড়ির সামনে কাঁঠালগাছতলায় এসে রোদ পোহাত। ওই সময়টায় আমি ইচ্ছে করে ওই পথ অতিক্রম করতাম ওকে এক ঝলক দেখব বলে। আহা! চোখের তীর কাকে বলে! সেই এলোকেশীর চোখের তীর বিশ্বাস করো বন্ধু আমি এখনও বয়ে বেড়াচ্ছি। ’
জুবায়েরের হাই-পাওয়ার চশমা ভেদ করে ও চলে যাচ্ছে ওর কৈশোরে। পৃথিবীর তিনভাগের প্রায় দুই ভাগ ঘুরে নিয়েছে জুবায়ের। তবু সে ভুলতে পারে না তাকে, যে লুকিয়ে রয়েছে ওর বজরা গ্রামের কোনও এক ভাঙা বাড়ির কোণায়।
‘তুই খুঁজিস নি?’
‘কী বলিস! তন্ন-তন্ন করেছি সবকিছু ওর জন্যে। ’
‘পেলি কিছু?’
‘জেনেছি। বিয়ের পর ও লন্ডনেই আছে। আমি ঠিকই খুঁজে নেব। দেখিস। ’
এ বয়সে এসেও জুবায়েরের ভেতর যেরকম আত্মবিশ্বাসের চমক লক্ষ্য করেছি তা রীতিমতো বিস্ময়কর। আমি আশা করছি সে একদিন বজরা গ্রামের হারিয়ে যাওয়া সেই কৃষ্ণকলিকে টেমস নদীর তীরে খুঁজে পাবে।
সুনীলও একদিন ওর বন্ধুদের বলেছিল, ‘ওই দিঘিটা খুব টানে আমায়। স্বচ্ছ কাচের মত জলের তলায় লতা-গুল্ম আর রূপালি পাখনার মাছগুলো স্বপ্নের মত হানা দেয় আমার ভেতর। সেই দীঘল তালগাছটা , ধনুকের মত বাঁকানো সুপারি গাছের সারি সব মনে আছে। আহ! একটিবার যদি ফের সেখানে বসে নীরবে জীবন নামের অসম্পূর্ণ আবেগের জাবর কাটতে পারতাম। কোলকাতার কফিহাউজ, বসন্তকেবিন সব ফিঁকে হয়ে গেলে তো ওই কাজলদিঘিটাই ভরসা আমার!’
সুনীলের ঘরের টেলিফোনটা বেজে উঠল গভীর রাতে। ওঁর বউ স্বাতী ধরলেন সেটি,
‘হ্যালো?’
‘আমি রাজ্জাক। সুনীলদাকে দেয়া যাবে ফোনটা?’
স্বাতীর ভুরুজোড়ায় বিরক্তি; এত রাতে রাজ্জাক হয়ে কে বিড়ম্বনা শুরু করল।
‘এই রাজ্জাক বলে কাউকে চেন?’
‘রাজ্জাক? কে?’—ঘুমঘুম চোখে প্রশ্ন ভেসে উঠল সুনীলের।
‘কে?’—প্রশ্নের ভেতর প্রচ্ছন্ন হয়ে রইল একরাশ চরম অবজ্ঞা। কিছু একটা কঠিন কথাও হয়ত বা বের হয়ে আসতে পারে ওর থেকে। সেরকম সম্ভাবনাই ওর সমস্ত মুখাবয়বের কুঞ্চনসমগ্রের ভেতর।
‘দাদা? আমি মাদারিপুরের মাইজগাওর লোক। চিনছেন? বিদেশে থাকি। আমিই আপনারে কাজলদিঘিটা দেখামু। হাছা কইতাছি। ’
সুনীলের চোখেমুখে এক অপার্থিব আনন্দের ছোঁয়া। ওর স্বপ্নের ভেতর ঘোরাফেরা করা ওই দিঘিটার কথা রাজ্জাক নামের এই অচেনা ছেলেটা জানল কী করে? ও কি আসলে দেবদূত?
দিঘিটা কলকল করে ওর বোধের গভীরে বইতে থাকে; এর গভীর কালো জলে পা ডুবিয়ে মেঘলা আকাশ দেখার জন্যে সুনীলের ভেতরকার শিশুটা কঁকিয়ে ওঠে, ‘আমি যাব। আমি যাব। ’
লন্ডন থেকে জুবায়ের রিং করল আমাকে, ‘হঠাৎ নীরার জন্যে সিনেমাটা দেখেছিস? তোর সুনীলের গল্প। মজা পাবি। ’
আমি কিঞ্চিৎ চমকালাম। জুবায়ের আমার সেই বন্ধু, যে কিনা সাহিত্য-সংস্কৃতির পরতে পরতে বসবাস করলেও কখনও এর আঁচ ওকে স্পর্শ করে নি। উদাসীন অথচ ক্ষুরধার এক অনুভব নিয়ে ওকে দেখেছি এগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে। নিয়মিত ডুবছে-ভাসছে আবেগের ভেতর; কিন্তু পাঁকাল মাছের মত এতটুকু আবেগের কাদা ওর গায়ে লাগতে দিচ্ছে না। এমনি বৈষয়িক প্রেমিক সে। তার কাছ থেকে সিনেমার কথা শুনলে তো কিঞ্চিৎ হতবাক হতেই হয়।
‘তুই দেখলি ছবিটা?’
‘ছবিটা তো আমাকেই নিয়ে দোস্ত?’—বলে হোঃ হোঃ করে হেসে উঠল জুবায়ের। মনে হচ্ছে খুব মজা পাচ্ছে সে।
আমি কথা না বাড়িয়ে সিডি আনিয়ে দেখে নিলাম ছবিটা। দেখে-টেখে বেশ মাস্তিভরা মন নিয়ে জুবায়েরকে ধরলাম ইন্টারনেটের আলাপচারিতায়।
‘কী, কলির কথা মনে হলো?’
‘দ্যাখ, কলেজ-জীবনে ছেলেটার একটা মোহ ছিল মেয়েটার প্রতি। প্রেম হতে পারত, দোস্তিতে আটকে রইল। পরে যে-মেয়েটাকে বিয়ে করবে বলে ছেলেটা এগিয়ে এলো সে আর এগোতে পারছে না। কেবলি মনে হচ্ছে ওর কলেজ জীবনের সেই নবীনার কথা। যাকে সে পেতে পারত শরীর দিয়ে, পায়নি। ’
‘অন্তর্দাহ। ’—আমি বললাম।
‘অন্তর তো কথা কয় শরীর সম্বল করে। এটা শরীরের দহন, যা অন্তরকে একসময় পঙ্গু করে দেয়। ’—জুবায়ের দার্শনিকের মত মন্তব্য ঝাড়ে।
‘গল্পটার শেষটা বড় চমৎকার। ’—আমি বললাম।
‘হ্যা। ছেলেটা শরীর আর মনের অবদমন থেকে তখনি মুক্তি পেল যখন কলেজ জীবনের নারীটির সঙ্গে মিলিত হবার সুযোগ এলো। বিশেষ এক নারীর প্রতি ওর যে জৈবিক অবসেশন গড়ে উঠেছিল যৌবনে, তা থেকে ছেলেটা বেরিয়ে গেল এবং নিজের গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে আচরণের স্বাভবিকতা ফিরে পেল। গুড। ভেরি গুড। ’—নির্মোহ গলায় জুবায়ের মন্তব্য করল।
‘কলির সঙ্গে মিলল?’
‘ওর সঙ্গে দেখাই তো হয়নি; মোহমুক্তি তো অনেক পরের কথা। হাঃ হাঃ হাঃ। ’
আমি জানি এই অট্টহাসির ভেতর জুবায়ের কলিকে উড়িয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু যা সে—সেই বলক-তোলা কৈশোর-সময় থেকে বহন করে চলেছে তা কিভাবে সে অস্বীকার করবে? তাহলে তো নিজের সঙ্গে প্রতারণা হয়ে যায়, লন্ডন প্রবাসী নিপাট ভদ্রলোকের পক্ষে তা কি কোনওদিন সম্ভব?
আমি সুনীলের একটা বই পড়ছি। অর্ধেক জীবন। পুরো জীবনের কথা কারও পক্ষেই বলা সম্ভব নয়; তাই হয়ত এই শিরোনাম।
বইটা পড়তে গিয়ে একটা গল্পের কথা মনে পড়ে গেল।
‘জুবায়ের?’
‘হ্যাঁ। বল। ’
‘সুনীলের খরা গল্পটা খুব টানছে আজ। কলেজে থাকতে পড়েছিলাম। গল্পটার কুশীলবের সঙ্গে একেবারে মিশে গিয়েছিলাম আমি। গল্পটার শুরু থেকে যে লোকটাকে আমার রীতিমত ভালগার বলে মনে হচ্ছিল, মদ-মেয়েমানুষ ছাড়া যাকে ভাবা যাচ্ছে না, শেষে এসে সেই মানুষটাই বাংলোর ইদারা থেকে জল তুলে খরা পীড়িত নারীদের মাঝে দিতে শুরু করে। মানব চরিত্রের ওঠা-নামার এরকম সূক্ষ্ম চিত্রটা এখনও আমার মগজে একধরনের মহান আবেশ হয়ে বেঁচে আছে। বিশ্বাস কর, মাঝে মাঝে নিজেকেই লাহিড়ী বলে মনে হয়। ’
‘আবার দ্যাখ, নীরা ভালো নেই বলে পুরো কোলকাতা পুড়ছে। বাস-ট্রাম সব। মনটা যে কীরকম উদাস হয়ে যায়। উফ!’—জুবায়েরের মত অর্থনীতির ছাত্রের মুখের ভাষা এরকম আবেগঘন হওয়ায় আমার সামান্য খটকা লাগল।
‘খুব আবেগ ফলাচ্ছিস? কলির দেখা পেলি?’
‘খুঁজছি। পেলে সবার আগে তোকেই খবরটা দেব। দেখিস। ’
‘অপেক্ষায় রইলাম। ’
আমরা যখন এরকম কথাবার্তা বলছি তখনি একখানা ফ্রেন্ড-রিকোয়েস্ট পেলাম ফেইসবুকে। নামটা বেশ । অথৈ অনন্ত। এরকম কতই অনুরোধ জমা হয় প্রতিদিন। গা করলাম না। দুদিন পর ছুটির দিনে ফেইসবুক খুলে বসতেই আলাপ-বাক্সে একটি বাক্য ভেসে উঠল, ‘চিনতে পারছিস?’
‘কে?’
‘আমি অনন্ত দাশ। তোর ছোটবেলার বন্ধু। মনে পড়ে?’
সঙ্গে সঙ্গে আমার ভেতরে থাকা সুনীলকে বলে উঠলাম, ‘এও একটা কাজলদিঘি, সুনীলদা আমার কৈশোরের বন্ধু। বন্ধুত্ব আর কাজলদিঘির জলের ভেতর তফাত কী?’
আমি অনন্তর করা প্রশ্নটার উত্তর দিতে পারলাম না। চট করে আমার কী মনে হলো, আমি ফেইসবুক থেকে বেরিয়ে এলাম। বন্ধ করে দিলাম আমার ল্যাপটপ; চোখ বুঁজে ফিরে যেতে চাইলাম কাজলদিঘিটার পাড়ে।
‘মৌমাছি হইবি শিমুল?’—কিশোর অনন্তর অদ্ভুত প্রশ্ন।
‘মানুষ কোনওদিন মৌমাছি হতে পারে?’
‘অত শুদ্দ কতা কইবি না। তরে জলে ফালাইয়া দিতে ইচ্ছা করে। চল আমার লগে। ’
আমরা তিতাসের পাড় ঘেঁষে একটা ঘন আড়া-জঙ্গলের ভেতর ঢুকে পড়লাম। একটা করবি ফুলের গাছের নিচে এসে ও বলল, ‘গাছে উঠতে পারছ তো? নাকি হিডাও পারছ না?’
আমার বাবা এলাকার গণ্যমান্য একজন উকিল। আমাকে তিনি লেখাপড়া ছাড়া অন্য কোনও কাজে কখনওই সম্পৃক্ত করেননি। এজন্য আমাদের এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষকের ছেলে দুরন্ত অনন্তের দৃষ্টিতে আমি এক হাবাগোবা বালক। ও আমার মত ভালো ছাত্র না হলেও ওর মতো সাহসী ও অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় আকর্ষণীয় ছেলে আর দুটি নেই আমাদের ক্লাসে। ওর সঙ্গ আমার ভীষণ ভালো লাগত। ও যা বলত তা মনে হতো অদ্ভুত।
আমি তরতর করে গাছের ডগায় উঠে পড়লাম। এবার ও নির্দেশ দিল, ‘একটা করবি ফুল ছিইড়া ল। নিছস? এইবার পিছের ডাটাটা ছিইড়া মুখ দিয়ে শুইষা ল। কী, মধুর মত লাগে না?’
‘হা। ’
অনন্ত বড় মানুসের মতো হাঃ হাঃ করে হেসে উঠল। এরপর যে কত করবি ফুলের মধু শুঁষে খেয়েছি!
এ ছিল এক অদ্ভুত আনন্দ—মৌমাছি হওয়া।
বাকি অংশ পড়তে ক্লিক করুন
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৫