১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ১৪তম কিস্তি
___________________________________
দুজনের মধ্যে বিয়ের সম্ভাবনা নিয়ে ওদের কোনও কথা হয়নি। এমন একটি বিষয় তখন ভাবনায় আনার চেয়েও অনেক দূরের। কোনও কাল্পনিক কমিটিও এমন একটি বিয়ে মেনে নেবে না, এমনকি উইনস্টনের স্ত্রী ক্যাথরিন যদি তার থেকে মুক্ত হয়েও যায়, তারপরেও না। দিবাস্বপ্নের মতই অসাড় সে ভাবনা।
‘ও দেখতে কেমন ছিল, তোমার স্ত্রী?’—বলল জুলিয়া।
‘ও ছিল—নিউস্পিকে একটা শব্দ আছে না... গুডথিংকফুল? মানে হচ্ছে প্রকৃতঅর্থেই শুদ্ধাচারী, খারাপ কিছু ভাবতেও পারে না। ’
‘না, শব্দটি আমার জানা নেই, তবে আমি এ ধরনের মানুষদের চিনি, খুব ভালো করেই চিনি। ’
জুলিয়াকে বিবাহিত জীবনের গল্প শোনাতে লাগল উইনস্টন, তবে কৌতূহল উদ্রেক করার মত করে, সেই বরং উল্টো বেশি কথা বলল, এমন সব কিছু বলল যেন আগে থেকে মূল মূল দিকগুলো তারা জানা। জুলিয়াই তাকে বর্ণনা করল, যেন সবই সে দেখেছে কিংবা অনুভব করেছে। তার ছোঁয়া পেলে ক্যাথরিনের শরীরটা কিভাবে শক্ত হয়ে যেত, কিভাবে সে সর্বশক্তি দিয়ে তাকে দূরে ঠেলত—এগুলোই বলে যাচ্ছিল, নিজের দুই বাহু দিয়ে উইনস্টনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেই এসব বলছিল। জুলিয়ার সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলতে কোনও অস্বাভাবিকতা বোধ করছিল না সে, ক্যাথরিন তার জীবনের এক ব্যথাতুর স্মৃতি, আর বিস্বাদময় এক নাম।
‘এরপরও সব মেনে নেওয়া যেত যদি একটি বিষয় সামনে না আসত’—বলল সে। সে তাকে জানালো, প্রতি সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট রাতে ক্যাথরিন যেভাবে তাকে বাধ্য করত কাজটি করতে। ‘ও কাজটি ঘৃণা করত, কিন্তু কোনভাবেই কাজটি না করার কথা মেনে নিত না। ও বলত... তুমি ধারণাও করতে পারবে না কি বলত। ’
‘পার্টির প্রতি আমাদের কর্তব্য’—দ্রুতই বলল জুলিয়া।
‘তুমি কী করে জানলে?’
‘আমিও স্কুলে পড়েছি, প্রিয়তম। ষোল বছরের বেশি বয়সীদের জন্য মাসে একদিন যৌনতা বিষয়ক আলোচনা শুনতে হতো। আর যুব আন্দোলনেও রয়েছে এ বিষয়ক আলোচনা। ওরা বছরের পর বছর ধরে তোমার ভেতরে কথাগুলো ঢুকিয়ে দেয়। আমি বলব অনেক ক্ষেত্রেই এই প্রচেষ্টা সফল হয়। তবে তুমি কখনওই বলতে পারবে না, লোকেরা এতটাই কপট। ’
বিষয়টি নিয়ে কথা টেনে বাড়ালো জুলিয়া। ধীরে ধীরে আলোচনা যৌনাচার নিয়ে তার নিজের ভাবনার দিকে মোড় নিল। আর এ প্রসঙ্গ আসতেই তার কথার ধারও বাড়লো। উইনস্টন না পারলেও, পার্টির যৌনতা বিষয়ক শুদ্ধিবাদের ভেতরের অর্থটা সে ঠিকই ধরতে পারে। যৌনাচার মানুষকে একটি ভিন্ন জগতে নিয়ে যায় যেখানে পার্টির নিয়ন্ত্রণ চলে না, আর সে কারণে যৌনতাকেই বিলুপ্ত করে দিতে হবে, বিষয়টি স্রেফ এমন নয়। এর চেয়েও বড় গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, যৌনতার অপ্রাপ্তি এক ধরনের স্নায়ুবৈকল্য সৃষ্টি করে, আর সেটাই কাম্য, কারণ এই বৈকল্যই তখন যুদ্ধ-জ্বর আর নেতৃত্বের স্তুতিতে কাজে লাগে। কথাগুলো ঠিক এভাবে বলল সে:
‘যখন তুমি ভালোবাসাবাসি করছো, তোমার শক্তি খরচ হচ্ছে, আর কাজটি করার পরে এক ধরনের খুশি খুশি বোধ করছো, তখন কোনও কিছুতেই তুমি আর বিক্ষুব্ধ হবে না। কিন্তু তোমার এমন অনুভূতি ওরা ঠিক মেনে নিতে পারে না। ওরা চায় তুমি সবসময়ই তোমার শক্তি ধরে রাখো। এইসব উপর-নিচে ছোটাছুটি, খুশিতে পতাকা ওড়ানোর মধ্য দিয়ে যৌনতা তোমার কাছে টক টক লাগুক। কিন্তু ভালোবেসে তুমি যদি নিজেই ভিতরে ভিতরে খুশি বোধ করতে থাকো তখন বিগ ব্রাদারকে নিয়ে, ত্রি-বার্ষিক পরিকল্পনা নিয়ে, দুই মিনিটের ঘৃণা কর্মসূচি নিয়ে এবং ওদের এমন আরও সব ফালতু বিষয় নিয়ে তোমার উত্তেজনা বোধ করার ফুসরতই থাকবে কোথায়?
দ্বিতীয় খণ্ডের ১৬তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ১৫) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।