বৈশাখ বাঙালির প্রাণকে বিকশিত করার মাস। নতুন কল্পনা, চিন্তা ও পরিকল্পনা উন্মোচনের সময় এটি।
সমাজ, সংস্কৃতি, সাহিত্য, শিল্প, ঐতিহ্য—এই শব্দগুলো আমরা যতবার উচ্চারণ করি, প্রতিবারই ঠিক গভীরভাবে তা আমরা অনুভব করি, সে রকম নয়। তবে প্রায়শই বলে থাকি। এখানে-সেখানে, স্থানে-অস্থানে সময়-সুযোগ পেলেই লোকে কথাগুলো উত্থাপন করে। এতে অবশ্য অনেকের সামাজিক ভাব-মর্যাদাও যে খানিকটা আপাতদৃষ্টিতে বৃদ্ধি পায় না, তা নয়। কিন্তু সত্যিকার অর্থে যদি ভাবি—সভ্যতা, সমাজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে যে পরিবর্তন এসেছে, অনুষ্ঠানে আয়োজনে যে যোগ হয়েছে নতুন নতুন মাত্রা, তার সাথে সাদৃশ্য রেখে কি প্রকৃতির সন্তান এই মানবকূলের মধ্যে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ভাবনা বিষয়ে আন্তরিকতা ও মনোযোগ বেড়েছে? বাণিজ্যের বিবেচনায় আমরা অনেক অগ্রসর হয়েছি বটে। সৃজনশীলতায়ও পিছিয়ে নেই। তারপরও যেন কোথায় একটা অতৃপ্তি রয়ে গেছে। কী যেন নেই, কী যেন হারিয়েছি!—এই নীরব তাড়না আমাদেরকে তাড়িয়ে বেড়ায় প্রতিনিয়ত।
ঐতিহ্যই বলি আর শিল্পই বলি কিংবা এবং হোক তা সমাজ ও সংস্কৃতি কেন্দ্রিক, সেই বোধে ও বিবেচনায় আমাদের পহেলা বৈশাখকে স্থান দিতে হয় অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে। মর্যাদার সঙ্গেও। বৈশাখকে ঘিরে গান, কবিতা, নাটক, গল্পও রচিত হয়েছে। কালবোশেখি আমাদের সাহিত্যের নানান প্রান্তে হানা দিয়েছে তার অহঙ্কার ও অস্তিত্ব নিয়ে। কবিতার পাঠক বরাবরই কম। অন্তত সতর্ক পাঠক। তাই বৈশাখকে নিয়ে বাংলা সাহিত্যে যে কবিতা রচনা হয়েছে, সে বিষয়ে আমাদের মনোযোগী পাঠ কিংবা বিশ্লেষণ ততটা হয়ে ওঠেনি। তবে কবিরা তাদের সৃজন-ভাণ্ডারের বিনম্র শ্রদ্ধা বৈশাখকে নিবেদন করতে ভুলে যাননি। ‘ওই নতুনের কেতন ওড়ে কালবোশেখীর ঝড়/ তোরা সব জয়ধ্বনি কর’—কবির এই অমর বাণী প্রাণে ধারণ করে বাঙালি বোশেখকে বরণ করে নিচ্ছে বহু বছর ধরে।
বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর সৃজনভাবনায় কেউ কেউ আধুনিকতার আভাস লক্ষ্য করেছিলেন। মানবিকতার প্রকরণে উজ্জ্বল এই কবির ‘কালকেতু উপাখ্যান’ সমাজ ও মানুষের আনন্দ-বেদনার নিটোল ছবি হয়ে আজও বর্তমান। এই উপাখ্যানটিতে নারী চরিত্র ফুল্লরার বারো মাসের দুঃখ বর্ণনায় বৈশাখ মাসের বিবরণ পাই আমরা। এক প্রেমিক পুরুষের জন্য নারীর অন্তর্জালার এমন চিত্র বিরলপ্রায়। মুকুন্দ লিখছেন ফুল্লরার বৈশাখ মাসের যাতনার কথা—‘পাশেতে বসিয়া রামা কহে দুঃখবাণী। /ভাঙ্গা কুড়্যা ঘরখানি পত্রে ছাওনী/ভেরাণ্ডার খাম তার আছে মধ্য ঘরে। /প্রথম বৈশাখ মাসে নিত্য ভাঙ্গে ঝড়ে ॥/পুণ্যকম্ম বৈশাখেতে খরতর খর। /তরুতল নাহি মোর করিতে পসরা॥/পদ পোড়ে খরতর রবির কিরণ। /শিরে দিতে নাহি আঁটে অঙ্গের বসন ॥/বৈশাখ হৈল আগো মোর বড় বিষ। /মাংস নাহি খায় সর্ব্ব লোকে নিরামিষ ॥’
কবির চোখ দিয়ে বিরহ-কাতরা নারী ফুল্লরা অনুভব করেছেন, বৈশাখের খরায় যেন অসহ্য আগুনের তাপে মন পোড়ে। প্রিয়জনকে কাছে পাবার এমন আকুলতার কাব্যিক প্রকাশ সত্যিই সহজ নয়। প্রকৃতির তাপ যে মানুষের মনকে প্রবলভাবে আলোড়িত করে, তা টের পাই আমরা। না-পাওয়ার যাতনায় জ্বলে-পুড়ে মরতে হয়। কবি মুকুন্দ, ফুল্লরার কষ্ট বর্ণনার পাশাপাশি, নিরামিষ যে বৈশাখে খাবারের তালিকায় প্রিয় বস্তু হয়ে ওঠে, সে কথাও বলতে ভুলে যাননি।
‘আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে/বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। ’—রবি ঠাকুরের এই কবিতাটির কথা হয়ত আমরা শৈশব-কৈশোরে পথে-ঘাটে, ঘরে-বাইরে মনের অজান্তেই বহুবার আবৃত্তি করেছি। এর মধ্য দিয়ে আমরা পরিচিত ভুবনের চেনা বারান্দায় মনে মনে দাঁড়িয়েছি কতবার, কে জানে! কিন্তু চেতনায় কি সত্যিই বৈশাখ কোনও দাগ ফেলতে পেরেছে? বৈশাখের রুদ্র রূপ কি আমাদের ভাবনার গীতল জায়গাটিকে শীতল রেখেছে সব সময়? কবি রবীন্দ্রনাথ বৈশাখের মধ্যে অদৃশ্য নৃত্যমাতম দেখেছেন। ‘নিঃশব্দ প্রখর’ বৈশাখকে তিনি আলোড়ন এবং হুতাশনের শীর্ণ সন্ন্যাসী ভেবেছেন। কখনও মনে করেছেন জলহীন-নদীতীরে শস্যশূন্য অসীম মাঠে ‘উদাসী প্রবাসী’ এই প্রবল দারুণ বৈশাখ! বৈশাখের আসা-যাওয়ার অন্তরালে তিনি অগ্নি আর বৈরাগ্যের শান্তিপাঠ অনুভব করেছেন। ক্লান্তকন্ঠ কিংবা ক্ষীণ শ্রান্তস্বর থেকে মন্ত্রের অবাধ-উদার উচ্চারণে কিংবা দুঃখ-সুখ আশা ও নৈরাশ্য বিতারণে বৈশাখকে ভেবেছেন প্রেরণা ও অপার শক্তি। যেন এক গেরুয়া পোশাকের প্রসারিত আঁচল নিয়ে জরা ও মৃত্যুর বারান্দা পেরিয়ে নারী ও পুরুষের চিন্তা এবং হৃদয়ের অতলে শান্তির বারতা নিয়ে হাজির হয় বৈশাখ। তিনি তাঁর ‘বৈশাখ’ কবিতায় লিখেছেন: ‘হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ,/ধুলায় ধূসর রুক্ষ উড্ডীন জটাজাল,/ তপঃক্লিষ্ট তনু, মুখে তুলি বিষাণ ভয়াল/কারে দাও ডাক—/হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ ?!’...ছাড়ো ডাক, হে রুদ্র বৈশাখ!/ভাঙিয়া মধ্যাহ্নতন্দ্রা জাগি উঠি বাহিরির দ্বারে,/চেয়ে রব প্রাণীশূন্য দগ্ধতৃণ দিগন্তের পারে/ নিস্তব্ধ নির্বাক—/হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ ॥’
বিদ্রোহী কবি নজরুলকেও বৈশাখের প্রবলতা-প্রচণ্ডতা নাড়া দিয়েছিল। ভেতরে ও বাইরে তিনি যেন বৈশাখের তাণ্ডবের জন্যই প্রতীক্ষা করছিলেন। ‘কাল-বৈশাখী’ কবিতায় নজরুল লিখছেন: ‘কাল-বৈশাখী আসে নি হেথায়, আসিলে মোদের তরু-শিরে/সিন্ধু-শকুন বসিত না আসি’ ভিড় ক’রে আজ নদীতীরে। / জানি না কবে সে আসিবে ঝড়/ধূলায় লুটাবে শত্রুগড়,/আজিও মোদের কাটেনি ক’ শীত, আসেনি ফাগুন বন ঘিরে। /আজিও বালির কাঁসর ঘণ্টা বাজিয়া ওঠেনি মন্দিরে ॥... এরি মাঝে হায়, কাল-বৈশাখী স্বপ্ন দেখিলে কে তোরা বল্!/আসে যদি ঝড়, আসুক, কুলোর বাতাস কে দিবি অগ্রে চল্॥’
জীবনের জ্বালা ও যন্ত্রণা দূর করতে কাল-বৈশাখীকে আহ্বান জানিয়েছেন নজরুল। বোশেখের প্রবল বাউলা বাতাসে মরা গাঙে বান ডাকার মতো ‘ঘুণ-ধরা বাঁশে ঠেকা-দেওয়া’ পুরাতন ভগ্ন ছাদে নতুনের ছোঁয়া লাগবে—এটিই কবির প্রত্যাশা। নজরুল ভেবেছিলেন সকল বদ্ধতা পেরিয়ে মানুষ প্রাণের দোলায় মেতে উঠবে বৈশাখের ঝড়ের ভেতর দিয়ে, রাতের অন্ধকারকে ঢেকে দেবে দিনের আলো।
‘নববসন্ত’ কবিতাগ্রন্থখ্যাত আধুনিক কবি আবুল হোসেন বৈখাশের ঝড়ের ভেতর বিদ্রোহ-আন্দোলনের বারতা অনুভব করেছেন। ফরাসি-রুশ-বাঙালির জেগে ওঠায় তিনি বৈশাখের প্রমত্ততার সাদৃশ্য দেখতে পেয়েছেন। তিনি আশা করেছেন, বৈশাখ যেন তার রাগ-আক্রোশ আর ঘৃণা দিয়ে ‘জোচ্চোর সমাজটাকে’ ভেঙে-চুরে পাল্টে দেয়; যেন সমাজের সকল আবর্জনাকে ডাস্টবিনে কিংবা দূর পথপ্রান্তের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করে। ‘সেই ঝড়’ কবিতায় আমরা পাই কবির ওই আকাঙ্ক্ষার কথা: ‘বিকেলে বাতাস যখন/ বৃষ্টির চাবুক হাতে/গোঁ গোঁ করতে করতে/ঝাঁপিয়ে পড়ল শহরে,/চুলে মুঠি ধ’রে/হেঁচকা টানে গাছগুলোকে/আছাড় দিয়ে শুইয়ে দিল মাটিতে,/ ইলেকট্রিক আর টেলিফোনের ইস্পাত থামগুলো/আঁচড়ে কামড়ে দুমড়ে মুচড়ে/ ছুঁড়ে ফেলল/পিচের রাস্তায়, বাজারে মাঠে,/ছাদ থেকে ছাদে, জানালায় দরজায়/ দড়াম দড়াম লেজ আছড়াতে লাগল/আমি এই অসময়ে/অন্ধকারে ডুবে আসা ঘরে/পায়চারি করতে করতে/দেখি তার রাগ ঘৃণা,/ফেটে পড়ে, এলোপাতারি নির্বিচারে/অন্ধ আক্রোশে। ’
পহেলা বৈশাখ আমাদের চেতনার সাথে জড়িয়ে থাকা এক অনাবিল আনন্দের নাম। বোশেখের আগমন বারতায় আমাদের মন ভেতরে ভেতরে গোপনে গোপনে জেগে ওঠে। তরুণ বয়সে কবি আলাউদ্দিন আল আজাদ বোশেখের দোলায় দুলেছেন হয়ত নিজেরই বে-খেয়ালে। ‘পয়লা বৈশাখ’ শিরোনামের কবিতায় পাওয়া যাবে তাঁর সেই নিবিড় উপলব্ধির কথামালা। আজাদ জানাচ্ছেন—‘চৈত্রের ঝরাপাতার সিঁড়িতে হোঁচট খেয়ে মুখ/থুবড়ে পড়েও আমি এক যুবরাজ, সুখ-সুখ/লাগে খুব, হাতে ভর দিয়ে উঠে বসি—তারপর/যখন খোঁড়া পা হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে চোরাজ্বর/গাঁয়ে ফুটপাথে মহাসড়কের দিকে হেঁটে যাই/ একটি বেজায় পুরাতন গান—গুনগুন গাই—/আমার ছেঁড়া জামার জেবে যদিও কিছু কেবল/কাঁচা পয়সা আছে, শান্ত তবুও অনতি-উজ্জ্বল/ নগরীর হাঁটুতে পিঠ ঠেকিয়ে বসেছি নিরালা/কাব্যগ্রন্থ হাতে গলায় আমার পারিজাত মালা—/স্বপ্নাবিষ্ট হয়েছি কি, অথবা বৈভবে আত্মহারা/যেন দেখে পরিদল যাচ্ছে উড়ে, আঙুল ইশারা?’
বৈশাখের প্রথম প্রহরের জন্য বাঙালির যে প্রতীক্ষা, তার একটা পরিষ্কার ছবি আছে আজাদের এই শব্দমালায়। দূরে যাবার ডাক, বিজয় তোরণ, মহামেলা আর সাজগোজের আওয়াজ বৈশাখের তুমুল প্রচার-প্রসঙ্গ। গ্রাম-জনপদ-অন্তঃপুর সবখানে যেন শিল্পীর সম্পদ হয়ে ভেসে আসে বিন্নি, মণ্ডা, ডুগডুগি, আহলাদি পুতুল, ডাহুক, ঘুড্ডি, বাঁশি, কাগজের বুলবুলি। সর্বত্র নেমে আসে মাটির হাতিতে চড়ে রাজ্যপাট বুঝে নেওয়ার অমিত প্রেরণা। প্রেমিকের মনেও যেন বৈশাখ জ্বালিয়ে দেয় হাজার তারার বাতি। মনে মনে পুরুষ তার প্রেয়সীর জন্য গেঁথে চলে হৃদয়-কম্পনের নিবিড় গল্প—‘বৈশাখী সিঁড়িতে তুমি হিল্লোলিত নবীন মঞ্জরী/মুহূর্তে এমন লীলায়িত কেমনে ও-হাত ধরি?’
বৈশাখ-বন্দনা কিংবা বর্ণনা কবির অনুভবে জিজ্ঞাসা আর প্রার্থনা প্রকাশ পেয়েছে নানান ভাবে। কবি আল মাহমুদের ‘বোশেখ’ কবিতা থেকে খানিকটা পাঠ নিতে পারি—‘যে বাতাসে বুনোহাঁসের ঝাঁক ভেঙে যায়/ জেটের পাখা দুমড়ে শেষে আছাড় মারে/নদীর পানি শূন্যে তুলে দেয় ছড়িয়ে/নুইয়ে দেয় টেলিগ্রাফের থামগুলোকে। /সেই পবনের কাছে আমার এই মিনতি/তিষ্ঠ হাওয়া, তিষ্ঠ মহাপ্রতাপশালী,/গরীব মাঝির পালের দড়ি ছিঁড়ে কী লাভ?/কী সুখ বলো গুড়িয়ে দিয়ে চাষীর ভিটে?/ বেগুন পাতার বাসা ছিঁড়ে টুনটুনিদের/উল্টে ফেলে দুঃখী মায়ের ভাতের হাঁড়ি/হে দেবতা, বলো তোমার কী আনন্দ,/কী মজা পাও বাবুই পাখির ঘর উড়িয়ে?’ বৈশাখ যদি ধ্বংসই করবে, তাহলে কবি আল মাহমুদের প্রার্থনা—ধ্বংস করুক ‘বিভেদকারী পরগাছাদের’। আর যারা পরের শ্রমে দালান গড়ছে, বোশেখের তাবৎ তাণ্ডব তাদের বাড়তি অহেতুক বাহাদুরি গুড়িয়ে ফেলুক। পুরনোকে পেছনে ফেলে নতুনের আহ্বান যদি বৈশাখের প্রেরণা হয়ে থাকে, তবে সব অপরাধীর শাস্তি হোক! সব শোষক তলিয়ে যাক বোশেখের বাউলা বাতাসের বন্যায়!
বাংলাদেশ ছয়টি ঋতুর দেশ। ঘুরে ফিরে আসে সময়ের এই বিচিত্র প্রহর। দিন ও রাত্রি। কেউ কেউ শীতকালকে বলেছেন মৃত্যুর আহ্বানের কাল। বসন্তকে বলেছেন প্রফুল্লতার প্রহর। শরৎ আসে প্রসন্নতা নিয়ে। হেমন্তে থাকে নতুন শস্যের সুবাস আর ফসল ঘরে তোলার আনন্দ। বর্ষাকে কবিরা বেদনার বিরহের কাল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আর গ্রীষ্মকাল? বৈশাখ আর জৈষ্ঠ্য কি কেবল আম-কাঁঠাল-তরমুজ-বাঙ্গির মাস। শুধুই মধুমাস? নাকি গরমের কাল? গরম তাহলে কিসের প্রতীক? বছর শুরুর এই ঋতুকে কবি আবুল হাসান দেখেছেন সামনে এগিয়ে যাবার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার সময় হিশেবে। আবার এই সময়ের প্রবল তেষ্টাকে গভীর মরণের আরম্ভকালরূপেও বিবেচনা করতে চেয়েছেন তিনি। হাসানের ‘গ্রীষ্মকাল: তোমার মৃত্যুর অনুভূতি’ কবিতার খানিকটা এখানে উদ্ধৃত করছি—‘গ্রীষ্মকাল মানেই তো তোমার চিবুক। তোমার গলার ভাঁজ। /তোমার শরীর ভরা সূর্য আর ঠা ঠা রোদ। ঠা ঠা দিনমান। / গ্রীষ্মকালে তোমার চিবুকে চৈত্র বসে যায়। /তোমার গলনালী কাটামুণ্ডের মত ছটফট করে প্রবল তেষ্টায়। /... তুমি একটু একটু মরে যাবে—/গ্রীষ্মকাল সেই মৃত্যুর প্রথম অনুভূতি। গরম ছোঁয়াচ। /বেঁচে থাকা মানেই তো আর সব সময় উজ্জীবন নয়। সব সময়/বেঁচে থাকা নয়। সব সময় বসন্তের ফল ও ফাল্গুন ধারা নয়!/ বেঁচে থাকা মাঝে মাঝে গভীর মরণ। মাঝে মাঝে গভীর নিশীথ;/মাঝে মাঝে গভীর দুপুর থেকে গ্রীষ্মকালও ছুটে আসে। ’
বাংলা নববর্ষ বাঙালির জীবনে কেবল একটি মাত্র দিন নয়। শুধু একটি সকালে পান্তা-ইলিশ আর দিনভর মেলা-আনন্দই সবকথা নয়। এই দিনকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে একটি জাতির বিকাশ ও বিচরণের গভীর অর্থ। জীবনের, প্রাণের, উচ্ছ্বলতার যে মৌল দর্শন, তা ধারণ করে আছে পহেলা বৈশাখ। পতনের সমূহ সম্ভাবনার মধ্যেই জেগে ওঠার প্রেরণা প্রচার করে বৈশাখের উৎসব। গৌরব, আলোক আর চিত্তের পূর্ণতা প্রদান করে আমাদের পহেলা বৈশাখের সমস্ত প্রহর। বাঙালির জীবনধারায় নববর্ষ যেন এক বাতিঘর। বৈশাখের আমাদের এক অবিরাম উচ্ছ্বাসের নাম। বৈশাখ অফুরন্ত কবিতায় আনন্দ যাপনেরও প্রহর।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৫