ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

শহীদুল রিপনের জোড়া কবিতা

বৈশাখের আয়োজন / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৫
শহীদুল রিপনের জোড়া কবিতা

জিজ্ঞাসাবাদ
___________________________________

নিজেকে ধিক্কার দিতে দিতেই দুঃস্বপ্ন আর ঘুম ভাঙে। চোখ মেলে দেখি মুখের ওপর ঝুঁকে আছে সহকর্মীদের কৌতূহলী চোখ।

আমার কাছে গল্প চায় চোখগুলি। এমন একটা গল্প যেন তাদের যৌন-ফ্যান্টাসি তৃপ্ত হয়। আমি সত্যিকারের কবির জীবন থেকে উঠে দাঁড়াই। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদ আমাকে চেপে ধরে শুইয়ে দেয় অনন্ত নিমজ্জনের ভেতর। আর তখন সেক্সপিস্তল হাতে মহড়া দিয়ে যায় কাঠবিড়ালি, ভেসে আসে লেবু আর লবঙ্গের ঘ্রাণ!। অন্ধকূপের ভেতর প্রতিধ্বনিত হতে হতে মিইয়ে যায় তক্ষকের তীক্ষ্ণ ডাক। হতচকিত গলায় বলি, আমি শুধু সবচেয়ে সাংঘাতিক মেয়েটার হাত ধরে চৈত্রদিন শেষে হেঁটেছি। আর ঝরাপাতার গান শুনেছি! ‘তারপর?’ সহকর্মীদের মুখগুলো কেমন বিকৃত হয়ে ওঠে। সবগুলো উৎসুক মুখ গলে গলে গিয়ে আবারও জোড়া লেগে তৈরি হয় এক বীভৎস প্রশ্নবোধক চিহ্ন। সেটা নাছোড়বান্দা হয়ে ঝুলে থাকে নাকের ডগার ওপর। তারপর...পাতাকুড়ানির মলিন মুখ। সড়কে বৃষ্টির সাদা দাগ। চুরমার হওয়া হাসির টুকরো। ঝিঁ ঝিঁ ডাক। শিসাঝড়। প্রেসের কৃষ্ণবর্ণ ঘটাঘট। সহকর্মীদের কৌতূহল মিলিয়ে যায় আমার উত্তরে। ক্রোধে হিসহিসিয়ে ওঠে পরিত্যক্ত অন্তর্বাসের মত তারা আমাকে ছুঁড়ে ফেলেন। আর নিজেদের মত গল্প বানিয়ে নিতে থাকেন। প্রত্যেকের লিবিডো আর অবদমনের মাপে বানানো হলুদ-গোলাপি-পার্পল সেই গল্পগুলো অফিসের অভ্যর্থনা কক্ষে এখন জড়ো করে রাখা আছে।


সাম্প্রতিকী
___________________________________

      কৃষ্ণদুপুর— কাশির দমক      অন্ধ-কালায় দেখায় চমক
                 মানুষ ঘুমায় আরামসে ঘুম;
      বুদ্ধিজীবীর গোঁদের ওপর       প্রস্ফূটিলেন হঠাৎ বিকট
                 বধির ও মুক ক্লেদজ কুসুম।
 
      বন পুড়ে যায় বেহুঁশ আগুন      রাষ্ট্র দেখায় নিঠুর ফাগুন
                 বাড়ুক নিখোঁজ মানুষ দেদার;
      পুষ্প গুটাক আবার ত্বরায়       কাটতি বাড়ুক রঙিন ধরায়
                 নিমকহারাম অসার মেধার।
 
      আমরা সবাই পথের-ঘরের       ভাইবেরাদর পরস্পরের
                 ছিলাম সুখেই খোদার কৃপায়;
      মৃত্যু-অধিক শীতল বাসায়       কোপ, চাপাতির এখন শাসায়
                 বসত অবিশ্বাসের চিপায়।
 
      ত্রস্ত হরিণশাবক রে মন       শত্রু যে তোর যাবজ্জীবন
                 আপন কোমল পেলব গতর,
      কস্তুরি ঘ্রাণ, সাধুর স্বভাব     জন্ম যে তোর আজন্ম পাপ
                 মরণ পশুর থাবার ভিতর।
 
      মগ্ন দুপুর— আঁধার এ-ক্ষণ     গায়ত্রীজপ বৃথাই এখন
                 সময় বোধয় খানিক থামার;
      তোর মননের গহন-নরোম      দিক বরাভয়, আনন্দ-ওম
                 এবং অবাক সবুজ খামার।
 
      এই নিদারুণ অমোঘ শিখার       প্রাণবিদারক দ্বিধার-বিকার
                    ঘৃণার খেলার সমাপ্তি হোক;
      ব্যাখ্যাবিহীন আনন্দভার,        মুগ্ধতা আর প্রেমের প্রহার
                    আরোগ্য পাক সমস্ত রোগ।



বাংলাদেশ সময়: ১৮২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।