যে কথা বলতে হবে
___________________________________
কেন আমি থেকেছি নীরব, সবার চোখের সামনে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলে ওরা
যা করেছে, সবই তার দেখেশুনে কেন আমি থেকেছি নীরব
এতো-এতো দিন; অবশেষে আমাদের মধ্যে যারা
বেঁচে যাবো তারা সবে পাদটীকা হবো বড়জোর?
এ হলো কথিত সেই প্রথমে-আঘাত-হানার অধিকার
সে-আঘাত মিসমার করে দেবে ইরানি জাতিকে,
তাদের দমিয়ে রাখছে এক বড়গলাবাজ;
আর তারা নিয়মিত সাজানো র্যালিতে গিয়ে সমবেত হয়,
ক্ষমতা-বলয়ে তার হয়তোবা পয়দা হচ্ছে একখানা পরমাণু বোমা,
তারা সেই অপরাধে মারা পড়বে অঘোরে-বেঘারে।
তবুও এখনও সেই দেশটির নাম মুখে নিতে
এতো দ্বিধা কেন যে আমার! যে দেশ
অনেক বছর ধরে—যদিও গোপনে—পরমাণু শক্তিধর হলো দিনে দিনে,
তার জন্য নয় কোনো তদারকি, ভেরিফিকেশন,
তার জন্য পরিদর্শন-টর্শন সবই হয়ে যাবে মাফ?
এসবের প্রতি এই—এহেন নিখিল নীরবতা,
এসবের মুখোমুখি হেঁট-মাথা আমার নিজেরই নীরবতা,
এ-নীরবতাকে আমার এক পীড়াদায়ী ডাহা মিথ্যা বলে মনে হয়,
যেই না করেছি এর বিরোধিতা সে আমাকে
বাধ্য করে সম্ভাব্য সাজা মেনে নিতে:
“ইহুদি-বিদ্বেষ”— এই রায় নেমে আসে কী অবলীলায়।
কিন্তু এখন আমার নিজের দেশকে, তার
কৃত অপরাধের জন্য তোলা হলো কাঠগড়ায়
কতো কতো বার, প্রশ্নবাণে জর্জরিত সে
তার লেখাজোখা নাই
—সেসবের জুড়ি মেলা ভার,
সে হলো নাটের গুরু; তাকে দিয়ে সবকিছু শুরু,
(এই নিয়ে বেশুমার দিকেদিকে জমেছে বেসাতি,
যদিওবা অনায়াসে তারা এর নাম দিল নিজ দেশে প্রতি-আবাসন)
আরো একটা ডুবোতরী রণসাজে সাজানো হয়েছে—আর সেটি
পরমাণু বোমা-পেটে ইসরায়েল যাবে,
সেখানে যে পরমাণু বোমাটোমা বলে কিছু আছে
আজও তার প্রমাণ মেলেনি, এই নিয়ে আতঙ্কই শুধু এর
একক প্রমাণ, যে কথা বলতে হবে আমি তা বলবোই।
কিন্তু আমি কেন আজও চুপ মেরে আছি?
যেহেতু আমার আদি পরিচয় নিয়ে আমি ভাবিত ছিলাম,
কখনো-যাবে-না-মোছা কলঙ্কের-কালি-এক লেগে আছে তার সারা গায়,
এর মানে, যে-দেশের সঙ্গে আছি, আর ওতপ্রোত থাকবো জড়িয়ে চিরকাল,
এই সত্য-ঘোষণাটুকু ইসরায়েল নামের দেশ মেনে নিক তবে —
আমি এটা চাইতেও পারবো না তবে?
কেবল এখন কেন তবে, এ-বুড়ো বয়সে এসে, আর
যতটুকু কালি আজো অবশিষ্ট রয়েছে এ-কলমে আমার—তা দিয়েই বলে যাবো আমি:
ইসরায়েলের আণব মর্দ্দামি
পৃথিবীর ইতিমধ্যে ভঙ্গুর-নাজুক শান্তি করেছে বিপন্ন।
যেকথা বলতে হবে—অতি-অবশ্যই-বলবো আলবৎ,
কাল যদি বলি তবে বড় বেশি দেরি হয়ে যাবে;
আর সে কারণে—জার্মান হিসেবে আমরা ঢের ভারী বোঝা টেনে গেছি —
কোনো একটা অপরাধ—হয়তো এর মশলাপাতি আমরাই দিচ্ছি যোগান
এ-মুহূর্তে এটা পরিষ্কার; গৎবাঁধা লুলা-লেংড়া যুক্তি আমাদের
শতমুখি অপরাধ ধামাচাপা দিতে পারবে না।
আর এটা অনিবার্য: নীরবতা—আমি একে করেছি খানখান,
পশ্চিমের ভণ্ডামিতে ঘেন্না ধরে গিয়েছে আমার!
আর আমি আশা করি, নিজেদের নীরবতা থেকে
মুক্ত হবে আরো অনেকেই; এ-দাবিতে উনারাও হবেন সোচ্চার
তাদেরই বিরুদ্ধে যারা আমাদের জন্য আনলো হাঁ-খোলা বিপদ;
তাদের ছাড়তে হবে এইসব গুণ্ডামি-মস্তানি—স্রেফ
এটুকুই আমাদের দাবি;
আমরা আপোসহীন, হয়তোবা তুলবো আওয়াজ।
ইসরায়েল-ইরানের এ-দুই সরকার,
উভয়ের পরমাণু সক্ষমতা, সম্ভাব্য ক্ষমতা বিষয়ে
বহুজাতি-তদন্ত তারা হতে যেন দ্যায়; সে-তদন্ত হতে হবে উন্মুক্ত অবাধ।
এর চেয়ে ন্যায্য আর ইসরায়েল-ফিলিস্তিন উভয়ের জন্য সমান
সহায়ক পদক্ষেপ আর কীবা হতে পারে তবে?
অলীক বিভ্রমে ঢাকা এতদঅঞ্চলে
পরস্পর দুষমন হয়ে যারা পাশাপাশি বসবাস করে
এ-রফা তাদের সবার জন্যে, আর
শেষমেষ আমাদের সকলের জন্যে সেটি অনুকূলই হবে।
___________________________________
মূল জার্মান থেকে Breon Mitchell-এর করা ইংরেজি অনুবাদ “What Must Be Said”-এর বাংলা ভাষান্তর (১২ এপ্রিল, ২০১২)
___________________________________
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৫