মহল্লার মুরুব্বী আক্কাস মিয়া। ভিড় ঠেলে রাস্তায় বেড়িয়ে আসে।
সমবয়সি পাশের জন ঘাড় ঘুড়িয়ে মাথা ঝাকায়। বলে, ‘ফাঁস নিয়া মরলে বড়জোড় সোয়া হাত জিব্বা বাইর অইবো গলা দিয়া, তবে পায়জামার নিচে রক্ত আইবো না। আমার ধারণাই ঠিক...’
পাশের জনের দরিদ্র মুখের দরিদ্র ধারণা শুনতে আগ্রহী না একেবারেই, তাই আক্কাস মিয়া ধমক দিয়ে তাকে থামায়। আর মুখের ভাবখানা এমন করে রাখে যে—ফকির ফাকরা মানুষের আবার ধারণা করার দরকার কী?
ধীরে ধীরে এই খবর ছড়িয়ে পড়ে, স্বপন মৃধা রোডের মুখের বাড়ির দুই তলায় যে মেয়েটা একা থাকত—গলায় ফাঁস নিয়ে সে আত্মহত্যা করেছে। আজ সকালে সেই ফাঁসি দেখতে মহল্লার মানুষ জড়ো হয়। নানান বয়সের মানুষ আসে, তবে শিশুদের আনে নাই কেউ।
ভাইরাসের মতো এই প্রশ্নও দ্রুত ছড়াতে থাকে যে, পায়জামার নিচে রক্ত কেন?’ একপর্যায় ফাঁসি নেওয়ার চাইতেও তরুণীর পায়জামা আর রক্ত—এ দুটো বিষয় বেশি জনপ্রিয়তা পায় আর মহল্লায় কৌতূহল জাগায়। তরুণেরা ভাবে, মেয়েটা সারারাত কী করেছে?’ পাশের বাড়ির দিলু হোসেন, যে নবাবপুর রোডে ইলেকট্রিক দোকানে চাকরি করে, সে আক্ষেপ করে বন্ধুদের জানায়, পাশে থেকে একদিনের জন্যও বুঝতে পারলাম না, এই মেয়ে পায়জামা খোলে?’ বন্ধুরা এ নিয়ে দিলুকে খোঁচায় আর চেতায়। তবে দিলু চেতে না, সে আক্ষেপ করে আর আক্ষেপ করে।
গলির মোড়ে চায়ের দোকানে নুরু কন্ট্রাকটর চা চাইতে চাইতে দোকানিকে বলে, হাসান, ওর লাগে কোনও ছেমরার ভাব আছিল?’
আট বছর ধরে এখানেই চায়ের দোকানদারি করে হাসান। কত মানুষ আসতে যেতে দেখল। অভিজ্ঞ দৃষ্টিক্ষেপণ করে সে জানায়, ‘টের পাই নাই মামা। তয় থাকতে পারে। ’
হাসান দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে। সে যে বুঝতে পারে নাই—এটা যেন প্রকাশ না পায়। তাই সে সন্দেহমূলক কথা বলেছে নুরুকে। হঠাৎ নীরবতায় হাসান ভাবতে থাকে, পায়জামান নিচে রক্ত আসবে কেন? এর কারণ কী?
আত্মহত্যা হওয়া বাড়ির তিন তলার আপা—তার দশম শ্রেণির মেয়েকে আর একা ছাড়ে না। স্বামীকেও চাপ দেয় বাসা বদলের। তরুণীর পায়জামা আর রক্ত—এই নিয়ে ধারাবাহিক সন্ধ্যা আর রাত পার করে স্বপন মৃধা রোডের বাসিন্দারা।
বাংলাদেশ সময়: ১২২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৫