ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ২৬) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ২৬) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় খণ্ডের ২৫তম কিস্তি
___________________________________

কামরাটি অক্ষত থাকবে কি না তা আগেভাগে জানতে পারা স্রেফ অসম্ভব। এই কামরা যেন একটি জগত, একটি অতীতের সংরক্ষিত ভূমি যেখানে বিলুপ্ত প্রাণীরা চড়ে বেড়ায়। উইনস্টন ভাবে, মি. চ্যারিংটন নিজেই যেন এক বিলুপ্ত প্রাণী। সাধারণত এখানে পৌঁছে উপরে ওঠার আগে কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে মি. চ্যারিংটনের কথাবার্তা শোনে সে। এই বৃদ্ধ কদাচই ঘরের বাইরে গেছেন কিংবা হতে পারে কখনওই যাননি। আর বুড়োর দোকানে কোনও খদ্দের থাকে না বললেই চলে। এই ছোট্ট অন্ধকার দোকান আর তার চেয়েও ছোট একটি রান্না ঘর, যেখানে নিজেই খাবার তৈরি করেন, এই দুইয়ের মাঝে আটকে আছে তার ভূতুড়ে জীবন যাপন।



রান্নাঘরে অবিশ্বাস্য পুরোনো বিশাল হর্নওয়ালা একটি গ্রামোফোন। কথা বলার কাউকে পেলে বুড়ো খুশিই হন। মূল্যহীন এইসব সংগ্রহ তার। লম্বা নাকের ওপর ভারী কাচের চশমা বসিয়ে ওগুলোই খুটে খুটে দেখে সময় কাটে। সারাক্ষণই ঝুঁকে যাওয়া কাঁধে ঝুলে থাকে মখমলের জ্যাকেট। সবমিলিয়ে বেনে নয়, একজন সংগ্রাহকই মনে হয় তাকে। এক ধরনের অস্পষ্ট আতিশয্যে তার আঙ্গুলগুলো এইসব পুরোনো অপ্রয়োজনীয় বস্তু ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখে—চীনা বোতলের ছিপি, নস্যির কৌটার কারুকাজ করা ঢাকনা, শংকর ধাতুর লকেট যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক আগে মৃত কোনও শিশুর ক’টি চুল। আর এগুলো উইনস্টন কিনবে কিনা সে প্রশ্ন কখনওই উচ্চারিত হয়নি বুড়োর মুখে। এমনকি এগুলো তার ভালো লাগছে কিনা তাও জানতে চায়নি। বুড়োর সঙ্গে কথা বলার মানেই হচ্ছে কেবল শুনে যাওয়া, নয়ত বলা চলে ভাঙা রেকর্ড চালিয়ে বসে থাকা। স্মৃতির কোণা কোণা ঘেঁটে ভুলে যাওয়া আরও কিছু ছড়া এনে শুনিয়েছেন উইনস্টনকে। তারই একটি এক গণ্ডা আর এক কুড়ি কালোপাখির ছড়া, আরেকটি বাঁকানো শিংয়ের গরুর ছড়া, একটি আছে বোকা মোরগ রবিনের মৃত্যুগাথা। ‘এটি আমার ভালো লাগত, তোমার আগ্রহ থাকলেও থাকতে পারে’—যখনই নতুন কিছু পেয়ে যান একটা ছোট্ট হাসি ছড়িয়ে এই কথাটিই বলেন বুড়ো। তবে কোনওটারই গুটিকয় চরণ ছাড়া বাকিটা মনে করতে পারেন না।

তারা দুজনই জানে—দুজনেরই মনের মধ্যে রয়েছে, জীবনের এই নতুন ব্যবস্থা খুব বেশি দিন টিকে থাকার নয়। একটা সময় ছিল যখন অনাগত মৃত্যুর সত্যটি তাদের কাছে শুয়ে থাকা এই বিছানাটির মতোই সত্য হয়েছিল, আর এক ধরনের হতাশার অনুভূতি নিয়েই তারা একে অন্যকে আলিঙ্গনে জড়াত, ঠিক যেমন করে একটি স্তিমিত হয়ে আসা আত্মা জীবনের শেষ ঘণ্টা বাজার আগের পাঁচটি মিনিট শেষ আনন্দটুকু ভোগ করে নিতে চায়। তবে এমনও হয়েছে, কেবল যে নিরাপদ তাই-ই নয়—এই ব্যবস্থাই তাদের জন্য স্থায়ী হয়ে থাকবে দুজনই এমন বিভ্রমে আপ্লুত হয়ে থেকেছে। যতটা সময় তারা এই কামরায় থাকে, তাদের অনুভব বলে, কোনও ক্ষতিই তাদের হবে না। এখানে পৌঁছানোটা যতটা কঠিন ততটাই বিপজ্জনক; তবে কামরাটি যেন এক অভয়ারণ্য। উইনস্টনের চোখ পেপারওয়েটের হৃদয়ভূমিতে বিচরণ করছে, আর অনুভবে সে ওই কাচের জগতটাতেই ঢুকে পড়তে চাইছে। মনে হচ্ছিল একবার ঢুকে পড়তে পারলে সময়টিকেই বেঁধে ফেলা যাবে।

রেহাই পেয়ে যাবে এমন দিবাস্বপ্নও তারা কম দেখেনি। তাদের ভাগ্য তাদের সহায় হয়ে থাকবে আর প্রাকৃতিক মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এমনই জীবন তারা যাপন করে যাবে। অথবা ক্যাথরিন মারা যাবে আর কিছুটা কৌশলের আশ্রয় নিয়ে উইনস্টন ও জুলিয়া বিয়ে করে ফেলবে। অথবা তারা দুজনই একসঙ্গে আত্মহত্যা করবে। অথবা তারা একসময় নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে, আর নিজেদের এমনভাবে পাল্টে দেবে যাতে কেউ চিনতেও পারবে না। প্রোলেতারিয়েতদের মতো করে কথা বলা শিখে নেবে, কোনও কারখানায় কাজ করবে আর পেছনের কোনও গলি-ঘিঞ্জিতে আবাস গাড়বে, কেউ জানবে না তারা কারা। এসবই ফালতু ভাবনা। আর তারা দুজনই তা জানে। বাস্তবতা হচ্ছে, রেহাই মেলার কোনও সুযোগ নেই। এমনকি আত্মহত্যার সচরাচর যে চর্চা দেখা যায়—সে পথে তাদের যাওয়ার কোনও ইচ্ছা নেই। দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ চেষ্টা করে একটি বর্তমানই বুনন করে চলছে তারা, এর কোনও ভবিষ্যত নেই, এ এক যুদ্ধ, যা জয় করা সম্ভব নয়, ঠিক যেমন—কারও ফুঁসফুঁস ততক্ষণই শ্বাস নিতে পারে যতক্ষণ বায়ু সঞ্চালন থাকে।

দ্বিতীয় খণ্ডের ২৭তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।